ঢাকা: কারাগার থেকে বের হয়ে সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবু বলেছেন, সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ সাহেব, ‘উনি অত্যন্ত ভালো মানুষ, আমার সাথে জেলে অনেকবার কথা হয়েছে। আমার ইউনিয়নের রাস্তা-ঘাটের কথা বলেছে।
বুধবার (১০ জুলাই) রাতে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নে একটি জনসভায় কেবি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এসব কথা বলেন সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি।
এমন একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে জেলাজুড়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
উল্লেখ্য, সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। নিহত সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিম অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি ও একাত্তর টিভির বকশীগঞ্জ উপজেলার সংবাদ সংগ্রাহক ছিলেন। তিনি ওই উপজেলার নিলক্ষিয়া ইউনিয়নের গোমের চর গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে।
ওই ভিডিওতে প্রধান আসামি বাবুকে বলতে শোনা যায়, ‘১৭ জুন আমি অ্যারেস্ট হয়েছিলাম পঞ্চগড়ে আমার নানা বাড়ি থেকে। আপনারা জানেন, এ মামলায় অনেকেই অনেক মন্তব্য করেছেন। উপরে আল্লাহ তাআলায় জানে কে মেরেছে, কে মেরে ফেলেছে। আপনারা জানেন, আমি প্রাক্তন একজন চেয়ারম্যান। আমার সাথে সাংবাদিকদের অনেক ভালো সম্পর্ক। এটা আপনারা অনেকে জানেন। হঠাৎ করে কী কারণে, কী আমার পাপ ছিল আমি জানি না। এ মামলায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় আমাকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। আপনারা সবাই জানেন আমার ছেলে রাজধানী ঢাকার বারিধারায় ছিল। সে ওইখানে লেখা-পড়া করে। ঢাকায় থাকাবস্থায় তাকে দুই নম্বর আসামি দিয়েছে। আপনারাই ভালো জানেন। আপনাদের ঋণ আমি কখনও শোধ করতে পারব না। আমার সাধুরপাড়ার মানুষ আমার কাছে প্রাণের চেয়েও দামি। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এক বছর থেকে আপনাদের কাছ থেকে দূরে ছিলাম। আমি এক বছরে আমার সাধুরপাড়ার অনেক ঘটনা শুনেছি। অনেক ক্ষতিও হয়েছে। ডাকাতি করেছে, চুরি করেছে, আমার গরিব লোকের ওপর নির্যাতন করেছে। টাকা পয়সা খেয়েছে। ভয়ভীতি দেখাইয়া কেউ গরু বেচে, ছাগল বেচে টাকা দিছে। ঘর বেচে টাকা দিছে। এ মামলা বিচারাধীন অবস্থায়, বিচার চলবে। আইনকে আমি শ্রদ্ধা করি। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, জজ কোর্ট, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট থেকে আমাকে জামিন দিয়েছে। আমার মামলায় আর কোনো সমস্যা হবে না।
নিহত সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিম
ভিডিওতে আসামি বাবুকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘এবারের সংসদ সদস্য মো. নূর মোহাম্মদ সাহেব, উনি অত্যন্ত ভালো মানুষ। আমার সাথে জেলে অনেকবার কথা হয়েছে। আমার ইউনিয়নের রাস্তা-ঘাটের কথা বলেছে। বাবু তুমি বের হয়ে আসো, এ মামলা মীমাংসা করে দেব। আমার বন্ধুবর দুই দুইবারের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং এবারের উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছে; উনি আপনারা জানেন নজরুল ইসলাম সাত্তার। উনি আমার অভিভাবক এবং শ্রদ্ধাভাজন লোক। উনিও আমাকে বলেছে, আমার ইউনিয়নে যা যা প্রয়োজন সবই করে দেবে। আপনারা শুধু দোয়া করবেন, আমি যেন আবার এক দেড় বছর আগে যে চেয়ারম্যান ছিলাম, সেই চেয়ারম্যান হিসেবে চুরি, ডাকাতি, খুন, রাহাজানি দূর করতে পারি। ’
মামলা মীমাংসা করে দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামালপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ বলেন, তার সাথে আমার কোনো কথা হয়নি।
প্রেসক্লাব জামালপুরের সদস্য ও জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের সঙ্গে সাংবাদিক হত্যা মামলার প্রধান আসামির ভালো সম্পর্ক রয়েছে, যা ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখলে বোঝা যায়। ক্ষমতাসীন লোকের প্রভাবে বিচারকাজ যেন প্রভাবিত না হয়, রাষ্ট্রের কাছে এমনি চাওয়া। ওই নৃশংস সাংবাদিক হত্যা মামলায় সারা দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল। সেই মামলার সঠিক বিচার পাওয়া এখন সময়ের দাবি।
গত বছরের ১৪ জুন রাতে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জের পাটহাটি এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিম। ঘটনার পরদিন দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ১৭ জুন এ ঘটনায় নিহত রব্বানির স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাধুরপাড়া ইউপির সাময়িক বরখাস্ত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে প্রধান আসামি করে ২২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি ২০–২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। গত বছরের জুনে মাহমুদুল আলম বাবুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন। বুধবার বিকেলে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান।
বাংলাদেশ সময়: ২৩০৫ ঘণ্টা, জুলাই, ২০২৪
এমজেএফ