ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কোটা ইস্যু: ফরিদপুরে সড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১১ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২৪
কোটা ইস্যু: ফরিদপুরে সড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের 

ফরিদপুর: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে এবং সারা দেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ফরিদপুরে অবস্থান কর্মসূচি নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের ওপর হামলা করা হয়।

এতে আহত হয়েছেন আন্দোলনকারী অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থী।  

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এই হামলা চালিয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী জেলা শহরের গোয়ালচামট ভাঙ্গা রাস্তার মোড় অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে শহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।  

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) জেলা শহরের ব্রাহ্মসমাজ সড়কের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সকাল ১১টার দিকে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা।

এতে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সেখানে শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করেন। সকাল ১১টা থেকে তারা ওই সড়কে বসে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বেলা সোয়া ১১টার সেখানে দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হন। এ সময় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা ও কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসানুজ্জামান হাসানসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়।  

এক পর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এতে নেতৃত্ব দেন শহর ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান। এ সময় প্রায় অর্ধশত ছাত্রলীগ কর্মী লাঠিসোঁটা ও হকিস্টিক নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়। এতে দুজন গুরুতরসহ অন্তত পাঁচজন আন্দোলনকারী আহত হন। তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।  

আহত দুজন চিকিৎসা নিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটির সহকারী রেজিস্ট্রার চিকিৎসক রুখসানা আহমেদ।  

আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে- গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক বিভাগের সাবেক ছাত্র ও শহরের ঝিলটুলী এলাকার বিল্লাল কাজীর ছেলে কাজী নিশাত আহমেদ (২৫) ও সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত আবরার নাদিম ইতু (২৬)। এর মধ্যে কাজী নিশাত আহমেদের মাথায় আঘাত পান। বাকি তিন শিক্ষার্থীর পরিচয় জানা যায়নি।  

আহত আবরার নাদিম ইতু বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি শুরু হতে না হতে হতেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশের উপস্থিতিতে অতর্কিতভাবে হামলা করে। আমার সহপাঠীরা পরে গেলে তাদের ওঠাতে যাই। এ সময় আমার পরিচিত মুখই হামলা চালায়। আমাদের প্রত্যেকের মাথায় আঘাত করেছে তারা। আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে গেছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। ’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলাম। মঙ্গলবারও পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা পুলিশের বাধা অতিক্রম করে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমাদের আহত শিক্ষার্থীরা হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে ভয় পাচ্ছি, এ জন্য নিশাতকে পরিবারের জিম্মায় বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার মাথা ফেটে রক্ত বের হয়েছে। ’ 

এই হামলার প্রতিবাদে সেখানে আরও সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে শুরু করে। একপর্যায়ে তারা মিছিল নিয়ে শহরের মুজিব সড়ক দিয়ে গোয়ালচামট ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে অবস্থান নেয়। সেখানে কয়েকশ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।  

এ সময় হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। বেলা পৌনে ২টা পর্যন্ত তারা শহরের তিনটি সড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে শহরের সব সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়, ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। পরে পুলিশের সমঝোতায় তারা ফিরে যান। তবে এর কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে অবস্থান নেন ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করে চলে যায়।  

হামলার বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তামজিদুল রশিদ চৌধুরী রিয়ান বলেন, ‘আমি এবং সাধারণ সম্পাদক আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি করতে নিষেধ করেছিলাম। তখন তারা বলেছিল চলে যাবে, পরে আমি চলে আসি। এরপরই জানতে পারি, ওরা শতাধিক লোক জড়ো হয়েছে। তখন আমি শহর ছাত্রলীগের সভাপতিকে পাঠাই। ছাত্রলীগ সেখানে যাওয়া মাত্রই হেলমেট দিয়ে আমাদের একজনকে আঘাত করে। এরপরই মারামারির ঘটনা ঘটেছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।