বরিশাল: বরিশালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সুজয় বিশ্বাস শুভ, অনিকা সিথী, ভূমিকা ভূমিসহ মোট ১২ জনকে শিক্ষার্থীকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে।
বুধবার (০১ আগস্ট) বিকেল সোয়া ৫ টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক উন্মেষ রায়।
শিক্ষার্থীদের হেফাজতে নেওয়ার ঘটনার পর থেকে থানার ভেতরে অবস্থান নেওয়া এই শিক্ষক বাংলানিউজকে বলেন, সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে শিক্ষার্থীদের আটকের খবর পাওয়ার পরপরই আমি থানায় চলে যাই। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুমনা রানি সাহা, বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার সরকার ও বাংলা বিভাগের প্রভাষক তাইবুন্নাহার মিমিও চলে আসেন। তবে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা না থাকায় তাদের প্রথমে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, কিছুক্ষণ পরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও অন্য শিক্ষকরা থানায় এলে সবাইকে থানার ভেতরে নিয়ে আসা হয়। পরে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জিম্মানামায় স্বাক্ষর দিয়ে ১২ শিক্ষার্থীকে আমাদের হেফাজতে নেওয়া হয়। যাদের বিকেল ৪ টার দিকে থানা থেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়।
তবে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যাওয়া ৩-৪ জন আইনজীবীসহ বামজোটের নেতৃবৃন্দকে থানার বাইরে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা বৃষ্টির মাঝে দাড় করিয়ে রাখার অভিযোগ করেছেন জেলা বাসদের সমন্বয়কারী ডা. মনীষা চক্রবর্তী।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্রদের আটকের বিষয়টি জানতে পেরে বামজোটের নেতৃবৃন্দ এবং তিন চারজন আইনজীবী বন্দর থানায় গেলে তাদের প্রথমে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককেও দাড় করিয়ে রাখা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এলে তিনি শিক্ষকদের নিয়ে ভেতরে যান। আর দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে থাকার পরও আমরাও ভেতরে ঢুকতে পেরেছি এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, প্রক্টরের আচরণ এমন ছিল যে তিনি আগে থেকেই সবকিছু জানতেন বলে মনে হয়েছে। কারণ, তিনি আসার আগে থানায় কাউকে অ্যালাউ করেনি। আবার শুনেছি এমন জরুরি পরিস্থিতিতে তিনি নাকি জিম্মানামাও টাইপ করে নিয়ে এসেছেন। বাকি সত্য-মিথ্যা তিনি আর পুলিশ জানেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রক্টর ড. মো. আব্দুল কাইউম বলেন, শিক্ষার্থীদের নিয়মানুযায়ী আমাদের জিম্মায় ছাড়িয়ে আনা হয়েছে এবং বাসায়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
তবে শিক্ষার্থী আটকের বিষয়ে আগে থেকে জানা এবং জিম্মানামা টাইপ করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি গুজব বলে দাবি করে তিনি বলেন, এরকম কথা ডা. মনীষা চক্রবর্তীর কাছ থেকে শুনে আমি তার সাথে কথা বলে সবকিছু ক্লিয়ার করেছি। আর পুলিশের ভাষা আমাদের বোঝার কথা নয়, তাই জিম্মানামা টাইপ করে নেওয়ার প্রশ্ন আসে না। এটি তারাই করেছেন, আমরা শুধু স্বাক্ষর করেছি।
জানা গেছে, জিম্মানামায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. আব্দুল কাইউম ও সাবেক প্রক্টর ড মো.খোরশেদ আলম ব্যতীত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবদুল বাতেন চৌধুরি ও সাধারণ সম্পাদক ড. তারেক মাহমুদ আবির, শিক্ষক আবু জাফর মিয়া, মো. ফরহাদ উদ্দীন, উন্মেষ রায়, সুমনা রানি সাহা, সঞ্জয় কুমার সরকার, শাওন মিত্র, ড. মো. লোকমান হোসেন, মো. ইরফান সাক্ষর করেন।
অপরদিকে পুলিশ হেফাজতে রাখা ১২ জনের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুজয় বিশ্বাস শুভ ছাড়াও ইংরেজি বিভাগের অনিকা সিথী, অর্থনীতি বিভাগের ভূমিকা ভূমি ও শেখ ইমন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের মো. সিবাত আহমেদ, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের মো. মাহমুদুল হাসান, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের মো. মাহমুদুল হাসান, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের মো. সুজন মাহমুদ ও মো. মাহফুজুর রহমান, রসায়ন বিভাগের মো. রাকিব আহম্মেদ মো, ইয়ামিন ও মো. আরমনা জাওয়াদ আবির ছিলেন।
এ বিষয়ে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচ, এম, আবদুর রহমান মুকুল বলেন, বেলা ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে ওই ১২ শিক্ষার্থীদের আমাদের হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে বেলা সাড়ে ৩ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ শিক্ষার্থীদের জিম্মায় দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে ছাত্র শিক্ষকদের সমন্বয়ে দেশব্যাপী ছাত্র হত্যা এবং শিক্ষক লাঞ্চনার প্রতিবাদে ছাত্র শিক্ষক সংহতি সভায় অংশগ্রহণ করতে আসার সময় পথে শিক্ষার্থীদের হেফাজতে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০২৪
এমএস/এসএএইচ