ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নিভে গেছে সেরাজুলের চোখের আলো, শরীরে ৭০ বুলেটের ক্ষত

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২৪
নিভে গেছে সেরাজুলের চোখের আলো, শরীরে ৭০ বুলেটের ক্ষত সেরাজুল ইসলাম

সিরাজগঞ্জ: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে কলেজছাত্র সেরাজুল ইসলামের (২১) শরীর। নিভে গেছে তার বাম চোখের আলো।

তারপরও এতটুকো দুঃখ নেই তার। শরীরের রক্তে ধুয়ে গেছে সব ধরনের বৈষম্য -এতেই প্রশান্তি দরিদ্র মৎস্যজীবীর ছেলে সেরাজুলের।  

কলেজছাত্র সেরাজুল সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী জেন্দার আলীর ছেলে। তিনি ইসলাম উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে সবেমাত্র স্নাতকে ভর্তি হয়েছেন। শরীরে ৭০টি বুলেটের ক্ষতচিহ্ন নিয়ে এখনও কাতরাচ্ছেন তিনি।

জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত মুহূর্তে এনায়েতপুর থানার সামনে বিক্ষোভে অংশ নেন সেরাজুল। এক পর্যায়ে পুলিশ ছররা গুলি করলে তার চোখসহ শরীরে বিভিন্ন অংশে বিদ্ধ হয়। তাকে উদ্ধার করে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে অপারেশনের মাধ্যমে গুলি বের করা হলেও বাম চোখের আলো চিরতরে নিভে যায়।

সৈয়দপুরের মাছ ব্যবসায়ী জেন্দার আলীর বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় শরীরে বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন কলেজছাত্র সেরাজুল। পাশেই মা রোজিনা খাতুন বসে ছেলের কষ্ট দেখে অঝোরে কাঁদছেন।  

সেরাজুলের বাবা জেন্দার আলী জানান, তার ছেলে সেরাজুল দেশের ছাত্রসমাজের সঙ্গে একাত্ম হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচিতেই তিনি উপস্থিত ছিলেন। গত ০৪ আগস্ট আন্দোলনের চূড়ান্ত মুহূর্তে এনায়েতপুর থানার সামনে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে পুলিশ উপর্যুপরি গুলি করে। আর সেই গুলিতেই ঝাঁঝরা হয়ে যায় সেরাজুলের শরীর। রক্তাক্ত শরীরে রাস্তার ওপর লুটিয়ে পড়লে বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানকার চিকিৎসকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, সেরাজুলের চোখ, মাথা, বুক, পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৭০টি বুলেট বিদ্ধ হয়েছে। একটি বুলেট বাম চোখে বিদ্ধ হয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।  ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গুলি বের করা হলেও বাম চোখের আলো নিভে যায় সেরাজুলের।  

মা রোজিনা খাতুন বলেন, আমরা অনেক কষ্ট করে ছেলেকে (সেরাজুল) পড়াশোনা করিয়েছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমার ছেলে চোখ হারিয়েছে, এতে ওর ভবিষ্যৎ অন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের ছেলেটা চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেল। আমরা আল্লাহর কাছে এর বিচার দিলাম।

এত যন্ত্রণার পরও সেরাজুল স্বাভাবিকভাবেই বলেন, শরীরে ক্ষত নিয়ে আর কোনো দুঃখ নেই। রক্তের বিনিময়ে বৈষম্যমুক্ত ও কোটামুক্ত একটি দেশ পেয়েছি -এটাই সান্ত্বনা।

সেরাজুল বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করে দরিদ্র বাবা-মায়ের অভাব ঘোচাবো। কিন্তু কোটা প্রথা আমার মতো অনেকের স্বপ্নের পথেই কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর এ কারণেই ছাত্রসমাজের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলাম। সারা দেশের ছাত্রসমাজ সম্মিলিতভাবে কোটা নামের প্রাচীর সরিয়েছে। এটাই অনেক বড় পাওয়া। আমার স্বপ্ন, দেশে আর কোনো বৈষম্য থাকবে না, গড়ে উঠবে মানবিক এক বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।