মেহেরপুর: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কামারখালী গ্রামে এক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের দায়ে গোলাম রসুল নামে এক বৃদ্ধকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
একই সঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে মেহেরপুরের নারী ও শিশু নিযার্তন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. তৌহিদুল ইসলাম এ আদেশ দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত গোলাম রসুল গাংনী উপজেলার কামারখালী গ্রামের বাসিন্দা।
আদালত আদেশে বলেছেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ১৫ ধারার বিধান অনুযায়ী মো. গোলাম রসুলের অর্থদণ্ড ক্ষতিপূরণ হিসেবে গণ্য হবে। ক্ষতিপূরণের টাকা আসামির বর্তমান সম্পদ থেকে আদায় করা সম্ভব না হলে তিনি ভবিষ্যতে যে সম্পদের মালিক বা অধিকারী হবেন সে সম্পদ থেকে আদায়যোগ্য হবে। এবং এ ক্ষেত্রে ওই সম্পদের ওপর অন্যান্য দাবি অপেক্ষা ক্ষতিপূরণের দাবি প্রাধান্য পাবে। একই আইনের ১৬ ধারার বিধান অনুযায়ী মেহেরপুর কালেক্টরকে আসামির স্থাবর বা অস্থাবর বা উভয় প্রকার সম্পদ নিলামে বিক্রয় করে বিক্রয়লব্ধ অর্থ এই ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। ক্ষতিপূরণের অর্থ এই ট্রাইব্যুনালে জমা হওয়া সাপেক্ষে তা ভিকটিমকে দেওয়া হবে।
আদালত আদেশে আরও বলেন, ভিকটিমের গর্ভজাত ছেলে আসামি গোলাম রসুল বা মায়ের কিংবা উভয়ের পরিচয়ে পরিচিত হবেন। সন্তানের ২১ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তার ভরণপোষণের ব্যয় রাষ্ট্র বহন করবে। তার ভরণপোষণের জন্য প্রদেয় অর্থ সরকার আসামির কাছ থেকে আদায় করতে পারবে এবং তার বিদ্যমান সম্পদ থেকে ওই অর্থ আদায় করা সম্ভব না হলে ভবিষ্যতে তিনি যে সম্পদের মালিক হবেন সে সম্পদ থেকে তা আদায়যোগ্য হবে। মেহেরপুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে গর্ভজাত সন্তানের ভরণপোষণের জন্য দেওয়া টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করবেন এবং তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, প্রতিবন্ধী ওই কিশোরী তার মায়ের সঙ্গে কামারখালী গ্রামে বাস করতেন। প্রতিবেশী গোলাম রসুল কিশোরীকে তার জমিতে কচু, মরিচ ও ঘাস উঠানোর জন্য মাঝে মাঝে ডেকে নিয়ে যেতেন। ঘটনার দিন ২০১৫ সালের ২ অক্টোবর সকাল ৭টার সময় ওই কিশোরীকে কচু ও মরিচের ক্ষেতে ডেকে নিয়ে যান ওই বৃদ্ধ। মাসখানেক পরে প্রতিবন্ধী কিশোরী খাবারের প্রতি অনিহা প্রকাশ করেন, তার মাসিক বন্ধ হয়ে যায় এবং মাঝে মাঝে বমি করতে থাকেন। এ বিষয়ে তার মায়ের সন্দেহ হলে তিনি তার মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। প্রতিবন্ধী কিশোরী আসামি গোলাম রসুলের বাড়িতে গিয়ে তাকে দেখিয়ে দেন এবং কোথায় ও কীভাবে আসামি তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছে তা ইশারা-ইঙ্গিতে প্রকাশ করে। তখন তার মা গোলাম রসুলের ভাই জহুরুল ও তার স্ত্রী ডালিয়াকে ঘটনার বিষয়ে বলেন। তারা একসঙ্গে প্রতিবন্ধীকে স্থানীয় বাওট স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে প্রস্রাব পরীক্ষা করান এবং জানতে পারেন যে, সে প্রায় ০৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
বাদী অভিযোগ করেন তার প্রতিবন্ধীকে মেয়েকে ধর্ষণ করার কারণে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। ওই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য গোলাম রসুলের ভাই জহুরুল ও তার স্ত্রী ডালিয়া টাকার লোভ দেখিয়ে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য বলেন। বাদী গরিব হওয়ায় আসামি মীমাংসার কর্ণপাত করেন না। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে গোলাম রসুলকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালত মামলার নথি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে ওই আদেশ দেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে আসাদুল হক এবং আসামির পক্ষে মিয়াজান আলী আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০২৪
আরএ