ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ভারতীয় মিডিয়ার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
ভারতীয় মিডিয়ার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ভারতীয় মিডিয়ায় ছেলে শুভ কর্মকারের বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেন তার বাবা সুনীল কর্মকার ও মা।

ফরিদপুর: বাংলাদেশ নিয়ে ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে ভারতের ৪৯ গণমাধ্যম। সম্প্রতি অনুসন্ধান শেষে এ তথ্য জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।

সেদেশের গণমাধ্যমের এমন ‘ব্যাপক আকারে’ অপপ্রচারের মধ্যে এবার উঠলো আরও গুরুতর অভিযোগ।

দাবি করা হচ্ছে, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কলকাতায় প্রবেশ করতেই ভারতীয় মিডিয়ার লোকজন বাংলাদেশের নাগরিকদের নানা কায়দায় পথ আগলে ধরছে। এরপর বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের নানা কল্পকাহিনি ও নিজেদের শেখানো বুলি ভ্রমণকারী বাংলাদেশিকে বলতে বাধ্য করছে ক্যামেরার সামনে। সেটাকেই রঙ-চঙ মাখিয়ে প্রচার হচ্ছে ভারতে, যা পরিস্থিতিকে উসকে দিচ্ছে ভয়াবহভাবে।

বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের ‘এবিপি লাইভ’ ও ‘দ্য ওয়াল’ নামে সংবাদমাধ্যমে উসকানিমূলক ‘খবর’ প্রকাশের পর সেখানে সাক্ষাৎকার দেওয়া দুই বাংলাদেশির বক্তব্যের সত্যতা জানতে সরেজমিনে তাদের বাড়িতে গেলে স্বজনরাই এ অভিযোগ করেন।

‘এবিপি লাইভ’ নামে সংবাদমাধ্যমটিতে সাক্ষাৎকার দেন শুভ কর্মকার। তিনি ফরিদপুরের শহরের নীলটুলীর স্বর্ণকার পট্টির নিউ গিনি ভবন জুয়েলার্সে স্বত্বাধিকারী সুনীল কর্মকারের ছেলে। ওই সাক্ষাৎকারে শুভ দাবি করেন, ‘বাংলাদেশের খুবই খারাপ অবস্থা। হিন্দুদের ওপর অনেক অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে বাড়িঘর দখল করা হচ্ছে। মন্দির-প্রাসাদ পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য খারাপ লাগে। তাদের মারধর করা করা হচ্ছে। মা-বোনদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে। রাতে দোকান থেকে বাড়িতে যাওয়ার পর ভাবতে হয় সকালে দোকানের উদ্দেশ্যে আবার বের হতে পারবো কিনা!’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভ কর্মকারের এই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়লে তার এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। ছড়িয়ে যায় ফরিদপুর ছাড়িয়ে সারা দেশে। তখন স্থানীয় সাংবাদিকেরা সরেজমিনে বিষয়টি জানতে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান। যান তাদের বাড়িতেও। সাংবাদিকসহ স্থানীয়দের কাছ থেকে ছেলের এমন বক্তব্যের কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন তার মা-বাবা। ছেলের কাণ্ডে তারা বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের কাছে ক্ষমাও প্রার্থনা করেন।

শুভর বাবা সুনীল কর্মকার ও মা দুজনেই তাদের ছেলের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান।

শুভর বাবা সুনীল কর্মকার বলেন, ‘ওর এই কথা শুনে আমরা নিজেরাই অবাক হয়ে গেছি। ও কী করে এই কথা বললো ভাবতেও পার ছিনা। আমরা দেশে কোনো ধরনের অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হইনি। আমি ওকে ফোন করেছিলাম, ওর এই কথা শুনে। ও বললো, পেট্রাপোলে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার পরে সেখানকার সাংবাদিকেরা ওর পাসপোর্ট নিয়ে নেয়। এরপর ওদের শিখিয়ে দেওয়া মতো কথা না বললে পাসপোর্ট দেবে না বলে ভয় দেখায়। ’

সুনীল কর্মকার বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নষ্টের উদ্দেশ্যেই এটি করা হয়েছে। ’

আর শুভর মা বলেন, ‘আমরা অনেক দুঃখিত। আমরা কখনোই এই দেশে কোনো নির্যাতনের শিকার হইনি। আমার মেয়েরা, ভাসুরের মেয়েরা তারাও কখনোই এ ধরনের হামলার শিকার হইনি। ভারতের ওই সাংবাদিকেরা খারাপ। তারা ইচ্ছা করেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা বাংলাদেশে খুবই নিরাপদে রয়েছি। ’

অবশ্য শুভ কর্মকারের স্বজনরা ‘পাসপোর্ট জিম্মি করে বক্তব্য নেওয়ার’ অভিযোগ তুললেও এ বিষয়ে ‘এবিপি লাইভ’র সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে ফরিদপুর শহরের স্বর্ণকার পট্টির মেঘনা জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী স্বপন কুমার কর্মকার বলেন, ‘ফরিদপুরের হিন্দুরা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করছেন। শুভর বক্তব্য ভিত্তিহীন ও সম্পূর্ণ মিথ্যা। সে একটা মানসিক রোগী। আমাদের এখানে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি, সে সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলেছে। আমরা ওর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাই এবং ওর বিচার দাবি করি। ’

জেলা জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নন্দ কুমার গড়াল বলেন, ‘শুভ বর্ডারে যে বক্তব্য দিয়েছে, এতে আমরা ফরিদপুরবাসী স্তম্ভিত। ও আমাদেরই এক ধরনের বিপদে ফেলে দিয়েছে। বরং গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা স্বেচ্ছায় আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। গত চার মাসে ব্যবসা-বাণিজ্যে আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। এখন শুভ্র যে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ওর কথা যদি সত্য হতো, তাহলে তো আমরা দোকান খুলে স্বর্ণের ব্যবসা করতে পারতাম না!’

এদিকে ‘দ্য ওয়াল’ নামে আরেকটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অমিয় সরকার দাবি করেন, তিনি ‘বাংলাদেশ থেকে নির্যাতিত হয়ে দুই মাস যাবত কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছেন’।

তবে তার এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অমিয় সরকার ২০২১ সালের নভেম্বরে গঠিত জেলা ছাত্রলীগের কমিটির ৮ নং সহ-সভাপতি ছিলেন। পরের বছর অনুমোদিত কমিটি থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়। অবশ্য তার আগেই এই অমিয় সরকারের নাম ছড়িয়ে যায় খন্দকার মোশাররফ হোসেন জামানার হেলমেট-হাতুড়ি বাহিনীর অন্যতম ক্যাডার হিসেবে। এই অমিয় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলা মামলারও অন্যতম আসামি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ফরিদপুরে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ জেলায় কোনো হিন্দুর ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেনি। তারা মনগড়া বক্তব্য দিয়েছেন। ’

বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।