ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কেনাফ চাষে আশার আলো, বাড়বে জমির উর্বরতা কমবে লবণাক্ততা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
কেনাফ চাষে আশার আলো, বাড়বে জমির উর্বরতা কমবে লবণাক্ততা

বরিশাল: প্রাকৃতিকভাবেই দেশের উপকূলীয় এলাকায় লবণের উপস্থিতি বেশি। পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব অঞ্চলের কৃষকরা হাতে গোনা কয়েকটি ফসল উৎপাদন করতে পারে।

বহুদিন ধরে এমন কোনো পন্থার খোঁজ করছিলেন তারা, যার মাধ্যমে জমির উর্বরতা বাড়বে ও লবণাক্ততা কমবে। বরিশালের উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত ও অনুর্বর জমিতে নতুন ধরনের একটি ফসলের চাষ শুরু হয়েছে, যার মাধ্যমে জমির উর্বরতা বাড়বে ও লবণাক্ততা কমবে।

ফসলটির নাম কেনাফ। পাট জাতীয় এ ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন বরিশালের কৃষকরা। ফসলটি হিবিস্কাস ক্যানাবিনাস, মালভেসি পরিবারের একটি উদ্ভিদ যা ডেকান হেম্প বা জাভা পাট নামে পরিচিত। হিবিস্কাস ক্যানাবিনাস হিবিস্কাস গণের অন্তর্ভুক্ত। এর আদি নিবাস আফ্রিকা।

বরিশাল কৃষি তথ্য সার্ভিসের কর্মকর্তা নাহিদ বিন রফিক জানান, দেশের উপকূলীয় এলাকার মাটিতে স্বাভাবিকভাবেই লবণের পরিমাণ বেশি। তাই ফসল আবাদে কৃষকদের সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে খরিফ-১ মৌসুমে এসব স্থানে অধিকাংশ কৃষক বেকার বসে থাকেন। কেউ কেউ সামান্য চাষাবাদ করেন। কিন্তু লবণের আধিক্যের কারণে উৎপাদন অনেকাংশে ব্যাহত হয়। ফলে তারা ফসলি কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তবে নতুন ফসল কেনাফের জাত উদ্ভাবনের ফলে এখন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা।

জানা গেছে, দেশের মোট চাষ উপযোগী জমির শতকরা ৩২ ভাগ উপকূলীয় অঞ্চলে বিস্তৃত। এর পরিমাণ প্রায় ২ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন হেক্টর। এসব জমির মধ্যে প্রায় ১ দশমিক ০৫৬ মিলিয়ন হেক্টর লবণাক্ত। দিন দিন এর মাত্রা বেড়েই চলছে। এই বিশাল পরিমাণ জমি খরিফ-১ মৌসুমে লবণাক্ততার কারণে পতিত থাকে। বরিশাল অঞ্চলের মধ্যে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে লবণাক্ত জমির পরিমাণ ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৮০ হেক্টর,  বরগুনায় ৫২ হাজার ৫২০ হেক্টর, ভোলায় ৯৪ হাজার ৫৭৯ হেক্টর এবং পিরোজপুরে ৩৫ হাজার ৮৩০ হেক্টর।

নাহিদ বিন রফিক বলেন, লবণাক্ত জমিতে লবণসহিষ্ণু জাত ছাড়া যেখানে অন্য ফসল চাষ অন্তরায়। সেখানে কেনাফ চাষ করা সম্ভব। পাটজাতীয় এই ফসল জমির উর্বরতা বাড়ায়। এছাড়া লবণাক্ততা কমাতেও সহায়তা করে। তাই দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের উপকূলীয় এলাকায় কেনাফ ফসল সম্প্রসারণের মাধ্যমে পতিত জায়গাগুলো চাষের আওতায় আনার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের প্রচারণা অব্যাহত আছে।

প্রাথমিকভাবে কেনাফ চাষ করে আশাবাদী পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পাখিমারার কৃষক মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রথমবার তিনি ২০ শতাংশ লবণাক্ত জমিতে আঁশ ও বীজের জন্য পরীক্ষামূলক কেনাফ চাষ করেছেন। এপ্রিলে রোপণ করা ফসল থেকে শতাংশ প্রতি ১২ কেজির মতো আঁশ পেয়েছেন।   আর সেপ্টেম্বর মাসে রোপণ করা বীজের ফসল এখন মাঠে আছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জানুয়ারির প্রথম দিকে শতাংশ প্রতি তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি বীজ পাওয়ার আশা তার। এখন পর্যন্ত যা দেখছি ধানের চেয়ে কেনাফ চাষে লাভ বেশি । তাই আগামীতেও এ ফসলের আবাদের চিন্তাভাবনা করছি।

পটুয়াখালীর পাট গবেষণা উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আফলাতুন কবির হিমেল জানিয়েছেন, এবার প্রথমবারের মতো উপকেন্দ্রের আওতাধীন ১২ কৃষকের মধ্যে ৮ জনকে আঁশ ও চারজনকে বীজ উৎপাদনের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) উদ্ভাবিত জাতগুলোর মাধ্যমে উপকূলীয় প্রায় ১০ লাখ হেক্টর অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনা সম্ভব। কেনাফের আবাদ সম্প্রসারিত হলে পতিত জমি চাষের আওতায় আসবে বলে মনে করেন তিনি।

কেনাফ চাষের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকদের আর্থিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করতে বিজেআরআই কাজ করে যাচ্ছে। লবণাক্ত এই অঞ্চলের মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি এবং শস্য নিবিড়তা বাড়াতে কেনাফ বিশেষ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি এর আবাদ সম্প্রসারণ হলে উপকূলীয় কৃষকদের টেকসই উন্নয়নে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত  হবে বলে জানিয়েছেন বিজেআরআইর মহাপরিচালক ড. নার্গীস আক্তার।

জানা গেছে, বিজেআরআই উদ্ভাবিত কেনাফের পাতা উন্নতমানের গো-খাদ্য এবং এর আঁশ রপ্তানিযোগ্য। যা কৃষকদের জন্য অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করবে। আর দ্রুত বর্ধনশীল ও জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু কেনাফের জাতসমূহ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উঁচু, মধ্যম, নিচু, হাওর এলাকা, পাহাড়ি এলাকার ঢালু জমি এবং উপকূলীয় ও চরাঞ্চল ফসলে উৎপাদনের উপযোগী নয় বা আউশ ফসলের জন্য লাভজনক নয় এমন অনুর্বর জমিতেও অল্প পরিচর্যায় চাষ করে এরইমধ্যে ভালো ফলন পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
এমএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।