ঢাকা, বুধবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার সুযোগ ও অনলাইন ভোটিং সিস্টেম চালুর সুপারিশ 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৫
প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার সুযোগ ও অনলাইন ভোটিং সিস্টেম চালুর সুপারিশ 

ঢাকা: প্রবাসী বাংলাদেশিরা যাতে আগামী এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকেই ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। একই অনলাইনে ভোট দেওয়ার পদ্ধতিও চালু করতে হবে।

 

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের নয় পৃষ্ঠার সুপারিশ জমা দেয়। এতে এমন সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রবাসী পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থা:

(ক) প্রবাসীদের জন্য একটি তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তাসূচক পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থার প্রস্তাব করছি, যার মাধ্যমে প্রবাসীদের পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আমরা নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে এই লক্ষ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখিত দুটি সমাধান প্রস্তাব করছি। প্রবাসীদের ভোটদানের সুযোগ দেওয়ার জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ হবে দুটি সমাধানের মধ্য থেকে একটিকে বেছে নিয়ে তা বাস্তবায়ন করা।  

(খ) প্রস্তাবিত তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তাসূচক পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থার বাস্তবায়নকল্পে দুইটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ভোটার অ্যাপ এবং ভেরিফায়ার অ্যাপ - যথাযথ ফাংশনালিটিসহ ডেভেলপ করা। এক্সেসেবিলিটি বাড়ানোর জন্য এই অ্যাপ্লিকেশনগুলো অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস উভয় প্ল্যাটফর্মের জন্য ডেভেলপ করা। এছাড়াও প্রস্তাবিত পদ্ধতির জন্য একটি ব্যাক অ্যান্ড সিস্টেম ডেভেলপ করা।

(গ) ডেভেলপকৃত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলো এবং সিস্টেমের সিকিউরিটি নিশ্চিত করা, যাতে তথ্য সিকিউরলি আদান প্রদান এবং ডাটাবেসে সংরক্ষণ করা যায়। এর সঙ্গে একটি এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম এবং immutable অডিট ট্রেলের মাধ্যমে ডাটাবেসের সিকিউরিটি নিশ্চিত করা।

(ঘ) জাতীয় নির্বাচনে প্রস্তাবিত সিস্টেমকে ব্যবহারের আগে এটির ব্যাপক পরীক্ষা/নিরীক্ষার প্রয়োজন। এজন্য আমরা কমপক্ষে তিন-পর্যায়ের ট্রায়ালের পক্ষে সুপারিশ করছি। এই তিন-পর্যায়ের ট্রায়াল প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে যেকোনো অস্বাভাবিকতা শনাক্ত এবং সংশোধন করতে সহায়তা করবে, যা জাতীয় নির্বাচনে সিস্টেমটি ব্যবহারের পথকে সুগম করবে।

(ঙ) আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এক বা ততোধিক সিকিউরিটি অডিট ফার্ম দ্বারা ডেভেলপকৃত সিস্টেমটির ক্রমাগত নিরাপত্তা অডিট (Security Audit) করা। ডেভেলপকৃত সিস্টেমের ওপরে আস্থা স্থাপনের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।

(চ) উপরোক্ত নতুন সিস্টেম যাতে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে পারে সেজন্য এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

(ছ) প্রস্তাবিত তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তাসূচক পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থায় সেই সব ভোটারদের বিবেচনা করা যারা এমন সব দেশে বসবাস করেন যেখানে বাংলাদেশের কোনো কনস্যুলেট নেই। এই দেশগুলোর জন্য কোনো কনস্যুলেট কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করবে তা নির্ধারণের জন্য একটি পলিসি প্রণয়ন করা।

(জ) কনস্যুলেট কর্মকর্তাদের প্রবাসী ভোটারদের কাছে পোস্টাল প্যাকেজ বিতরণের লজিস্টিক সংক্রান্ত কাজ কমানোর লক্ষ্যে প্রতিটি পোস্টাল প্যাকেজ বাংলাদেশে প্রস্তুত করে কনস্যুলেটগুলোতে বিতরণ করার জন্য আমরা নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে সুপারিশ করছি। কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা তাদের কাছে পাঠানো পোস্টাল প্যাকেজ সংশ্লিষ্ট দেশের পোস্টাল সার্ভিস ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট প্রবাসী ভোটারদের কাছে বিতরণ করবেন।

(ঝ) পোস্টাল ভোটিং প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সমস্ত কার্যক্রম (নিবন্ধন থেকে শুরু করে সব নির্বাচনী এলাকার ট্রেজারিতে পোস্টাল ব্যালট বক্স নিরাপত্তার সঙ্গে সংরক্ষণ করা পর্যন্ত) সম্পন্ন করার জন্য একটি কার্যকর সময়কাল নির্ধারণ করা।  

প্রাথমিক পর্যায়ে সিস্টেমটি একটি দেশে ট্রায়াল করা উচিত, যেখানে প্রায় ৫০ থেকে ১০০ জন প্রবাসী ভোটার অংশগ্রহণ করবেন। পরবর্তীতে এটি পাঁচ থেকে দশটি দেশে ১,০০০ থেকে ৫,০০০ প্রবাসী ভোটারদের মধ্যে এবং শেষ পর্যায়ে সিস্টেমটি যত বেশি সম্ভব দেশে ২০,০০০ বা তার বেশি প্রবাসী ভোটারদের মধ্যে ট্রায়ালের ব্যবস্থা করা উচিত।

(ঞ) প্রস্তাবিত পদ্ধতিটি প্রবাসী ভোটারদের মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে, তবে সিস্টেমের কার্যপ্রণালীতে অল্প কিছু পরিবর্তন করে এটি দেশের অভ্যন্তরে অনুপস্থিত ভোটারদের জন্যও সহজেই ব্যবহার করা যেতে পারে।  

অনলাইন ভোটিং ব্যবস্থা:

(ক) রিপোর্টে প্রস্তাবিত অনলাইন ভোটিং ব্যবস্থা বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হবে ব্লকচেইন, সিকিউরিটি, ক্রিপ্টোগ্রাফি, প্রাইভেসি-বর্ধনকারী (privacy-enhancing) প্রযুক্তি এবং অনলাইন ভোটিংয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি প্রযুক্তিগত টাস্কফোর্স প্রতিষ্ঠা করা। এই টাস্কফোর্সে নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সরকারি মন্ত্রণালয় এবং সংস্থার প্রাসঙ্গিক ডোমেইন বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা।

(খ) গঠিত এই টাস্কফোর্সের প্রথম দায়িত্ব হবে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম পদ্ধতি অনুসরণ করে একটি অনলাইন ভোটিং সিস্টেমের আর্কিটেকচার ও প্রোটোকল ডিজাইন এবং সিস্টেমটির ডেভেলপমেন্ট তত্ত্বাবধান করা।

(গ) সিস্টেমটি তৈরি হয়ে গেলে এর কার্যকারিতা (Functionalities), নিরাপত্তা (Security) এবং ব্যবহারযোগ্যতা (Usability) নিশ্চিত করার জন্য এটিকে যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা।

(ঘ) পরবর্তীতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এক বা একাধিক সিকিউরিটি অডিট ফার্ম দ্বারা সিস্টেমটির ক্রমাগত নিরাপত্তা অডিট (Security Audit) করা। ডেভেলপকৃত সিস্টেমের ওপরে আস্থা স্থাপনের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।

(ঙ) ডেভেলপকৃত সিস্টেমে আস্থা স্থাপনের আরেকটি প্রচলিত পদ্ধতি হলো এর কোডবেসটি প্রকাশ করা, যাতে বিশ্বের যে কেউ এর কোডবেস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারে। আরেকটি পরিপূরক পদ্ধতি হলো পাবলিক পেনেট্রেশন টেস্টিং এবং বাগ বাউন্টি প্রোগ্রাম চালু করা, যা সিস্টেমের গুরুতর সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসির দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করতে সহায়তা করবে।

(চ) একটি সিকিউর অনলাইন ভোটিং সিস্টেম চালু করতে হলে দেশের আইনি কাঠামোতে সংশোধন করার প্রয়োজন হবে। টাস্কফোর্সের প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে একটি হবে দেশের বিভিন্ন আইনি কাঠামো বিশ্লেষণ করে কোনো কোনো জায়গায় প্রয়োজনীয় সংশোধন করা দরকার তা প্রস্তাব করা।

(ছ) জনগণের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে জনগণকে ক্রমাগতভাবে অনলাইন ভোটিং সিস্টেমটি ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা অর্জনের ব্যবস্থা করা। এই লক্ষ্যে প্রথমে ছোট পরিসরের কোনো ভোটিংয়ে এই সিস্টেমটির ট্রায়ালের ব্যবস্থা করা, যাতে ধীরে ধীরে সিস্টেমটির প্রতি জনগণের আস্থা গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে এই ট্রায়ালগুলোর সাফল্যের অভিজ্ঞতা ব্যাপক আকারে ব্যবহারের আদর্শ উদ্দীপক (ideal catalyst) হিসেবে কাজ করতে পারে।

(জ) এরূপ একটি সিস্টেম ডিজাইন করার সময় আমাদের অবশ্যই সেসব ভোটারদের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত যাদের স্মার্টফোন নেই। এই গোষ্ঠীর ভোটারদের জন্য আমাদের একটি বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, যার মাধ্যমে তারা বিকল্প পদ্ধতিতে অনলাইনে ভোট দিতে পারেন।  

সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর সংস্কার কার্যক্রম শুরু করবে অন্তর্বর্তী সরকার।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৫
ইইউডি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।