ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আন্দোলন চলাকালে পুলিশের ভূমিকা ছিল বিতর্কিত।
এর জেরে বিক্ষুব্ধ জনতা ওই সময়ে থানাসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। এসব ঘটনায় ৪৪ পুলিশ সদস্য নিহত হন। এমন পরিস্থিতিতে কর্মবিরতিতে বেশ কয়েকদিন বন্ধ ছিল পুলিশি কার্যক্রম, বন্ধ ছিল থানার কার্যক্রমও।
তখন পুলিশের পক্ষ থেকেই ১১ দফা দাবি আসে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এসব দাবিতে দেশের বিভিন্ন পুলিশ লাইন্সে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ মিছিল করেন অধস্তন পুলিশ সদস্যরা।
এরমধ্যে বাহিনীটির ইউনিফর্ম ও লোগোয় (মনোগ্রাম) পরিবর্তন আনার দাবিও ওঠে। তখন অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশের ইমেজ ফেরাতে ইউনিফর্ম ও মনোগ্রামে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশের মনোগ্রাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া অনেকটা এগিয়েছে। নতুন মনোগ্রামও নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত মনোগ্রাম পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। তা এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
পুলিশ সদরদপ্তর সূত্র বলছে, পুলিশের নতুন পোশাকের জন্য রং নিয়ে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী সপ্তাহে পুলিশের পোশাকের রং চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তবে ইউনিফর্মে হালকা ধূসর (লাইট গ্রে) অথবা হালকা নীল রং (লাইট ব্লু) নির্ধারণের সম্ভাবনা বেশি। আরও দুই একটি রয়েছে। তবে তা চূড়ান্ত হলেই বলা যাবে।
পুলিশের মনোগ্রাম পরিবর্তন করে ২০০৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। পরে ২০০৯ সালে এই মনোগ্রামে পরিবর্তন করা হয়, যেটি বর্তমানে আছে। বর্তমান মনোগ্রামে রয়েছে, ‘পালবাঁধা নৌকার দুই পাশে গম ও ধানের শীষের মালা। পালের ওপরে একটি শাপলা। আর নৌকার নিচে বাংলায় পুলিশ লেখা। ’
সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ে পাঠানো পরিবর্তিত মনোগ্রামে থাকছে, ‘শাপলার দুই পাশে গম ও ধানের শীষের মালা। ওপরে থাকবে তিনটি পাটপাতা। আর ধান ও গমের শীষের নিচে বাংলায় পুলিশ লেখা থাকবে। ’
সূত্রটি আরও জানায়, নতুন মনোগ্রাম এখনো অনুমোদন পায়নি। এ ছাড়া পুলিশের পোশাকের রঙ নিয়ে এখনো কাজ চলছে। নির্ধারণ করা হয়নি পোশাকের রং। আগামী সপ্তাহে রং নির্ধারণ করে তা মন্ত্রণালয় পাঠানো হবে।
রং চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পর সে অনুযায়ী পোশাক বা ইউনিফর্ম তৈরি হবে। তৈরির পর তা পরিবেশ ও আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই কি না তা পরীক্ষা করা দেখা হবে। সেইসঙ্গে কাপড়ের মানও দেখা হবে। নতুন ইউনিফর্মের রং বাহিনীর জন্য উপযুক্ত কি না এবং সদস্যরা তা পরে স্বস্তি বোধ করছেন কি না, এসব বিষয় বিবেচনা করেই কাজ এগিয়ে চলছে।
পুলিশ অধিদপ্তরের এক স্মারকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশ মনোগ্রাম উপযুক্তভাবে সংশোধনে বাজেটে অতিরিক্ত কোনো অর্থের প্রয়োজন হবে না। পুলিশের প্রস্তাবিত মনোগ্রামের একটি ছবি (পতাকা-ক), নমুনা (পতাকা-খ) এবং খসড়া প্রজ্ঞাপন (পতাকা-গ) পাঠানো হয়েছে।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে তিন দিন দেশে সরকার না থাকার নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে। ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।
১১ আগস্ট পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে তাদের ১১ দফা দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। সেই বৈঠকে পুলিশের ইউনিফর্ম ও মনোগ্রামে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর ১২ আগস্ট পুলিশ সদরদপ্তরের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ডিআইজি (লজিস্টিকস) মোহাম্মদ আতাউল কিবরিয়াকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। আর কমিটির সদস্যসচিব করা হয় মো. নুরুজ্জামানকে।
মোহাম্মদ আতাউল কিবরিয়া বাংলানিউজকে বলেন, মনোগ্রাম বাছাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৫
এজেডএস/আরএইচ