সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় বিনা চাষে সরিষার আবাদে উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা মোকাবিলা করে অনেক কৃষকই এগিয়ে এসেছেন তাদের পতিত জমিতে বিনা চাষের সরিষা আবাদে।
সরেজমিনে উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের নড়েরাবাদ গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, আমন ধান কাটার পর বিলের জমিতে এখনো রয়েছে ধানের গোড়া। এরই মধ্যে বেড়ে উঠেছে সরিষা গাছ। ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে বিলের পর বিল। যদিও এসব সরিষা ক্ষেতের পাশের জমিগুলো পড়ে রয়েছে পতিত অবস্থায়।
নড়েরাবাদ গ্রামের সুরঞ্জন কুমার মণ্ডল ও তার স্ত্রী রীতা রানী জানান, লবণাক্ততার কারণে তাদের এলাকার জমিতে শুধু আমন মৌসুমে ধান উৎপাদন হয়। এছাড়া বছরের বাকি সময়টাতেই পড়ে থাকে জমিগুলো। এবার প্রথমবারের মতো তিনি সাড়ে ছয় বিঘা জমিতে বিনা চাষে বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করেছেন। তার ক্ষেত ভরে উঠেছে সরিষা ফুলে। ইতোমধ্যে গাছগুলোতে সরিষার দানা বাঁধতে শুরু করেছে। তিনি আশা করছেন প্রতিবিঘা জমিতে তিন মণের অধিক সরিষা পাবেন।
তিনি বলেন, বিনা চাষের সরিষা আবাদে খরচ নেই বললেই চলে। তাই প্রায় তিনগুণ লাভ হতে পারে।
একইভাবে এ বছর প্রথমবারের মতো সরিষা আবাদ করেছেন বামনডাঙ্গার অনিমা বৈদ্য। তিনি বলেন, আমন ধান ওঠার পর আমাদের জমিগুলো পতিত অবস্থায় বছরের আট মাসই পড়ে থাকে। এ বছর বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন প্রচেষ্টার কর্মীরা এসে আমাদের বিনা চাষে সরিষা আবাদের জন্য বলেন। তারা বলেন, কোন খরচ যেহেতু হবে না, আপনারা একটু চেষ্টা করে দেখতে পারেন। যদি সফল হন, তাহলে তো অন্তত পরিবারের তেলের খরচটা উঠে যাবে। এরপর তারা বীজ ও জৈব সারও দেন। তখন আমরা বীজ ছড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি এবং আবাদ করি। যদিও জলাবদ্ধতার কারণে একটু দেরি হয়েছে। তারপরও আশা করছি ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
উন্নয়ন প্রচেষ্টার কৃষিবিদ নয়ন হোসেন বলেন, আমন মৌসুমের পর আশাশুনির হাজারো হেক্টর কৃষি জমি লবণাক্ততার কারণে পতিত থাকে। এসব জমি চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য উন্নয়ন প্রচেষ্টা পিকেএসএফ এর সহায়তায় আরএমপিটি প্রকল্পের মাধ্যমে দুইশ’ জন চাষিকে বীজ ও সারসহ অন্যান্য উপকরণ সহায়তা দিয়ে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এসব চাষি তাদের ফেলে রাখা জমিতে বিনা চাষে সরিষার আবাদ করেছেন।
আশাশুনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম এনামুল হোসেন বলেন, আশাশুনিতে কৃষি ফসল উৎপাদনে লবণাক্ততা একটা চ্যালেঞ্জ। এছাড়া জলাবদ্ধতাও আছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৯১০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু অর্জন হয়েছে মাত্র ৭১০ হেক্টর। এর মধ্যে ২৩৫ হেক্টর জমিতে বিনা চাষে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। কৃষকদের বিনা চাষে সরিষা আবাদে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তাদের বোঝানো হচ্ছে আমন ধান ওঠার পর সরিষা ছড়িয়ে দিলে লবণাক্ততার প্রকোপ শুরুর আগেই সরিষা তোলা যাবে। এতে অন্তত তেলের চাহিদাটা পূরণ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৫
আরআইএস