জাহাঙ্গীরনগর থেকে ফিরে: ক্যাম্পাসে প্রবেশের ফটক পেরিয়ে হলের সিঁড়ি-করিডোর, খাবারের হোটেল, জাকসু ভবন-সবখানেই রঙিন পোস্টার; পোস্টারে পোস্টারে সম্ভাব্য রাজা-রানীর হাসিমুখ। আলাদা করে রাখা আছে তাদের মুকুট।
“দেখা হলে বলিস, আমিও ঊনচল্লিশ/তাইলে ওই কথাই রইলো, রাজার/ভোট জয়কেই দিও!!!”; “কাস্ট ইওর ভোট ফর লাইলা”; “ক্ল্যাপ ইওর হ্যান্ডস/শুট ইট আউট লাউড/যোবায়ের ইজ দ্য কিং/হু উইল মেক ইউ প্রাউড…”; “কাস্ট ইওর ভোট ফর জয়া অ্যাজ কুইন”।
জয়, লাইলা, যোবায়ের, জয়া- এই চারজন রাজা-রানি পদের প্রার্থী, নিজের ছবি দিয়ে এসব স্লোগানে ভোটারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে প্রতিটি পোস্টারে। আর ভোটার, সবাই ঊনচল্লিশ ব্যাচেরই বন্ধু!
র্যাগ-৩৯ বা ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী উপলক্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন প্রচারে মুখর এই ব্যাচের রাজা-রানি নির্বাচন নিয়ে। শুধু পোস্টার নয়, ঘোড়ার গাড়ি, রিকশা-ভ্যান নিয়ে র্যালি বের করে সম্ভাব্য রাজা-রানিরা ভোট প্রার্থনা করছেন বন্ধুদের কাছেই!
সমাবর্তনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী র্যাগ পালন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী শিক্ষার্থীরা। আগের ব্যাচ থেকে জমজমাট আয়োজন নিয়ে হয় রাজা-রানি নির্বাচন। এই নির্বাচন সাময়িক হলেও তার ফল সুদূর প্রসারী, বিদায়ী বন্ধুদের মুখে মুখে থাকবে রাজা-রানির নাম।
একদিন পর রাজা-রানি নির্বাচন, তাই শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) ছিল সর্বশেষ প্রচার-প্রচারণার দিন। বুকে-পিঠে-জামায় পোস্টার সেঁটে বন্ধুরা নেমেছিল প্রচারে। নির্বাচনী প্রচারে বিজয় দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটির দিন ক্যাম্পাসে বেড়াতে যাওয়া দর্শনার্থীদেরও আকৃষ্ট করে সহজেই।
রাজা পদে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের নাহিদ-ই-রাকীব জয় নির্বাচন করছেন মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী শহীদ সালাম বরকত হলের যোবায়ের রহমান, যিনি নৃ-বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী।
আর রানি পদে নির্বাচন করছেন ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী জয়া চাকমা, যিনি বেগম খালেদা জিয়া হলের ছাত্রী; তার প্রতিদ্বন্দ্বী লাইলা ফেরদৌস অন্তির হল নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল, তিনি অর্থনীতির ছাত্রী।
শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসু ভবনে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এক হাজার ছয়শ’ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ফলাফল ঘোষণার পরই শুরু হবে র্যাগ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
র্যাগ উৎসব উদযাপন কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে ওই ব্যাচের মো. শাওন জোয়ার্দ্দার। র্যাগ উদযাপন কমিটির দায়িত্বে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন নাজনীন মাহমুদ চৌধুরী, উপ-আহ্বায়ক সাদিকুল ইসলাম নাহিদ, কোষাধ্যক্ষ মো. ওয়ালিউল্লাহ ওলি, উপ-কোষাধ্যক্ষ ফারিয়া রহমান এন্থি।
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষের কথা জানিয়ে উৎসব উদযাপন কমিটির কোষাধ্যক্ষ ৩৯তম ব্যাচের ছাত্র ওয়ালিউল্লাহ ওলি বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে জাকসু ভবনে উপাচার্যকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন থেকে পর্যবেক্ষক হিসাবে পর্যবেক্ষণ করবে।
আগামী ৭ ও ৮ জানুয়ারি এই শিক্ষা সমাপনী উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবে রাজা-রানিই নেতৃত্ব দেবে, যাদের হাত ধরে জাঁকজমকপূর্ণ হবে সব অনুষ্ঠান। আর সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েই ভোট চাইছেন প্রার্থীরা।
৭ জানুয়ারি সকালে র্যালি, সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কনসার্ট; ৮ জানুয়ারি ক্যাম্পাসজুড়ে আড্ডা ও রাতে আরেকটি কনসার্ট। ব্যাচের অংশগ্রহণে ৯ জানুয়ারি থাকবে গ্র্যান্ড ডিনার।
বাংলাদেশ সময়: ২২২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬
এমআইএইচ/জেডএস