ঢাকা: টিকিট কাউন্টারে লম্বা দুটি লাইন। কেউ কেউ অধৈর্য্য হয়ে হুড়োহুড়ি করছেন।
ওয়াটার ট্যাক্সিতে ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ আর গন্তব্যে যাওয়া দুইই এখন বাস্তবতা।
এই 'ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস’ চালু হয়েছে রাজধানীর সৌন্দর্যের প্রতীক হাতির ঝিলে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে নিমির্ত স্বপ্নিল হাতিরঝিল প্রকল্পে যোগ হয়েছে বিনোদনের আরেকটি উপকরণ। সাথে উন্মুক্ত হয়েছে যোগাযোগের নতুন দ্বার।
উদ্যোক্তারা বলছেন, ওয়াটার ট্যাক্সি সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি যাত্রীদের যাতায়াত সুবিধা সহজ করেছে যানজটের এই রাজধানী ঢাকায়।
বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে শুক্রবার দুপুরে হাতিরঝিলের মেরুল বাড্ডা অংশে এ সার্ভিসের উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকে সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে এই যোগাযোগ মাধ্যম। যোগাযোগের সুবিধার পাশাপাশি একটুখানি বিনোদন পেতে লাইনে দাঁড়িয়ে ১০ মিনিটে টিকিট মিললো। এফডিসি টু বাড্ডা। টিকিটের দাম ২৫ টাকা।
টিকিট হাতে পেয়ে সবাই ছুটলেন ঘাটের দিকে। সেখানেও লাইন। যাত্রী যত ট্যাক্সির আসন তত নয়। তাই অপেক্ষা। একেকটি ট্যাক্সিতে ৩০টি আসন। ট্যাক্সি রয়েছে চারটি। দুটি এফডিসি-মধ্যবাড্ডা, দুটি এফডিসি টু গুলশান রুটে চলছে।
প্রথম দিনে যাত্রী চাপ কেমন ছিল জানতে চাইলে কাউন্টারের কর্মী তুহিন জানান, ‘সকাল থেকে কম ছিল। দুপুর নাগাদ বেড়েছে। বিকেলে হয়তো আরো বাড়বে। ’
ঘাটে আরো ১০-১২ মিনিটের অপেক্ষা। এসে পড়লো ট্যাক্সি।
ভেতরে যে যার মত সিটে বসে পড়লেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেড়ে গেলো ওয়াটার ট্যাক্সি।
ভেতরে সহযাত্রীদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অনেকেই বললেন, এটি একটি অসাধারণ সার্ভিস। তবে কেউ কেউ ভাড়াটা একটু বেশি বলেই মত দিলেন।
তাদের মতে, বাসের ভাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভাড়া ১০ থেকে ১৫ টাকা হলে ভালো হতো।
তবে অপর এক যাত্রীর মত, এই ভাড়াই ঠিক আছে। বাসের চেয়ে সময় কম লাগছে।
‘বাসে গেলে তো আর পানির ট্যাক্সির এ মজা পাওয়া যেতো না। এতে তো রথ দেখা কলা বেচাঁ দুটোই হচ্ছে,’ বললেন তিনি।
বোট চালিয়ে নিচ্ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। হাতির ঝিলের ভেতর দিয়ে যখন এগিয়ে যাচ্ছিলো, মনে হলো সবার মধ্যেই একটা স্বস্তির অভিব্যক্তি কাজ করছে। চারিদিকে দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য, রাস্তা দিয়ে সাই সাই করে চলে যাচ্ছে প্রাইভেট কারগুলো, ফাঁকে গাছ দুপাশের এসব দৃশ্য দেখতে দেখতে মুগ্ধ যাত্রীরা। ব্রিজগুলোর নিচে দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকেই আনন্দে চিৎকার করছিলেন। বোটের মধ্যে যারা তারা, আর যারা ব্রিজের ওপর থেকে দেখছে তারাও।
সব মিলিয়ে এ ছিলো এক আনন্দ যাত্রা।
অল্পেই কেটে গেল প্রায় ১০ মিনিট। এরমধ্যে মধ্য বাড্ডা ব্রিজের কোনায় এসে ভীড়লো ওয়াটার ট্যাক্সি।
ধীরে ধীরে নেমে পড়লেন যাত্রীরা। লাফ দিয়ে দিয়ে নামছিলো ছোট শিশুরাও। সবারই চোখের ভাষায় বোঝা গেল হাতিরঝিল থেকে তারা নিতে এসেছে এক টুকরো বিনোদন। আর যারা কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন তাদের জন্য ছিলো স্বস্তির যাত্রা।
এপারেও তখন যাত্রীদের লাইন। তারা অপেক্ষায় রয়েছেন এফডিসির পথে যাওয়ার।
এই ঘাটে দেখা গেলো করিম গ্রুপের সিস্টার কর্নসার্ন গোল্ডেন লাইন কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার মো. আব্দুল কুদ্দুস ব্যবস্থাপনায় ব্যস্ত। সেনাবাহিনী তদারকিতে সার্ভিসটি পরিচালনা করছে গোল্ডেন গ্রুপ।
আবদুল কুদ্দুস জানালেন, এফডিসি থেকে গুলশান দুটি ও এফডিসি থেকে মধ্য বাড্ডা দুটি বোট দেওয়া হয়েছে। দুটো রুটেই ভাড়া ধরা হয়েছে ২৫ টাকা। সকাল ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত চালু থাকবে এই ওয়াটার ট্যাক্সি।
জানুয়ারি মাসে আরো চারটি ট্যাক্সি দেওয়ার কথাও জানালেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
জেডএফ/এমএমকে