ঢাকা: ব্যস্ততম রাজধানীতে জীবিকাসহ ব্যক্তিগত নানা প্রয়োজনে প্রতিদিন ঘর থেকে রাস্তার বের হতে হয় লাখো মানুষকে। কিন্তু যানজটের কবলে পড়ে সময় মতো নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন না সবাই।
কমলাপুর রেলস্টেশনে তাই বেড়ে গেছে লোকাল রুটের যাত্রী সংখ্যা। প্রতিদিন কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করছেন নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গি-গাজীপুর-জয়দেবপুর এবং ময়মনসিংহ এই তিন রুটে।
সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে কমলাপুর রেলস্টেশনের সাত নম্বর প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে চট্টলা এক্সপ্রেস। ছেড়ে যাবে চট্টগ্রামের উদ্দেশে। ঘড়ির কাঁটায় যখন বেলা ১টা, তখনই হুইসেল বাজে চট্টলার। যেসব যাত্রীরা তখনও টেনে উঠতে পারেননি। শুরু হয় তাদের দৌড়াদৌড়ি।
আগে থেকেই ট্রেনের কামরায় যাত্রী ভরপুর। তারপরও অপেক্ষারত যাত্রীরা তাড়াহুড়ো করে উঠতে থাকেন ট্রেনে। ট্রেন চলতে থাকার পরেও হাতল ধরে ট্রেনে উঠতে ব্যস্ত লোকজনের ভিড় ছিল কয়েক সেকেন্ড।
ভিড়ের মধ্যে ট্রেনে ওঠার চেষ্টায় ব্যস্ত বিমানবন্দরের যাত্রী সুফিয়া ইসলাম আঁখি নামে যাত্রী। দুই শিশু সন্তান আমসান ও শিমুলকে কোলে নিয়ে ট্রেনের দরজার সামনে যেন বিজয়ের যুদ্ধে নেমেছেন।
আগে অপেক্ষমাণ এই নারী ট্রেনে যাওয়ার কারণ হিসেবে বাংলানিউজকে বলেন, বাসে সময় অনেক বেশি লাগে, ভাড়াও বেশি। তাছাড়া বাসে উঠলে বাচ্চা বমি করে। তাই বিমানবন্দরে যেতে ট্রেনেই যাতায়াত করি।
মায়ের বাসা পুরান ঢাকায় থেকে বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থিত শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার ক্ষেত্রে ট্রেনকেই একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেওয়া এই যাত্রী বলেন, ট্রেনে যাতায়াত যাতায়াত আরামদায়ক ও ঝুঁকিমুক্ত।
চট্টলা এক্সপ্রেসে টঙ্গী যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন আরেক যাত্রী শরিফুল ইসলাম। টঙ্গীতে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন তিনি। প্রতিদিন ট্রেনে যাওয়াত করে অফিস করেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ট্রেনে গেলে অনেক সময় বাঁচে। তাছাড়া ঝুঁকিমুক্ত ও আরামদায়ক যাতায়াত। ওই যাত্রী জানান, আন্ত:নগরে ৪৫ টাকা, আর অন্য ট্রেনগুলোতে ২০ টাকা।
রেলস্টেশনের আট নম্বর টিকেট কাউন্টারে টিকেট বিক্রেতা জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন ট্রেনে লোকাল যাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজারের মত। টিকেট দিতে প্রতিদিন আমরা হিমশিম খাই।
টিকেটের ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আন্তঃনগরে ৪৫ টাকা এছাড়া অন্য ট্রেনে ২০ থেকে ২৫ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়।
কাউন্টারে দাঁড়িয়ে টিকেট নিচ্ছিলেন রইচ মিয়া। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে ঢাকার যানজটের সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। যানজটের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ট্রেন ছাড়া উপায় নাই।
লোকাল যাত্রীর বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকায় যানজটের কারণে লোকাল যাত্রী দিন দিন বেড়ে চলেছে। আমরা ধারণা করছি ট্রেনের উপরে আরো চাপ বাড়বে।
তিনি বলেন, প্রতিদিন কমলাপুর থেকে বিভিন্ন রুটে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার যাত্রী আসা যাওয়া করে। আগামীতে এই সংখ্যা আরো বাড়বে।
টিকেট ছাড়া ট্রেন ভ্রমণের বিষয়ে জানতে চাইবে তিনি জানান, টিকেট না কাটলে জরিমানাসহ মূল টাকা দিতে হয়। তবে লোকাল যাত্রীদের টিটি ট্রেনের ভেতরেও টিকিট দিয়ে থাকেন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
আরএটি/আরআই