ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মিটার ছাড়াই চলছে সিএনজি অটোরিকশা

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
মিটার ছাড়াই চলছে সিএনজি অটোরিকশা ছবি: সংগৃহীত

কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছে না সিএনজি চালিত অটোরিকশাকে। একদিকে চালকের অজুহাত অন্যদিকে মালিকের দৌরাত্ম্য। সবমিলিয়ে প্রতিনিয়ত অটোরিকশা যাত্রীদের হতে হচ্ছে হয়রানির শিকার।

ঢাকা: কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছে না সিএনজি চালিত অটোরিকশাকে। একদিকে চালকের অজুহাত অন্যদিকে মালিকের দৌরাত্ম্য।

সবমিলিয়ে প্রতিনিয়ত অটোরিকশা যাত্রীদের হতে হচ্ছে হয়রানির শিকার।

রাজধানীতে মিটারে অটোরিকশা চালানোর জন্য নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। তবুও সরকারের নির্দেশকে বুড়োআঙুল দেখাচ্ছে মিটার চালিত সিএনজি চালকরা। আর চালকরা দাবি করছেন, মালিকের বেশি ভাড়া আদায়ের জন্য তাদের পক্ষে মিটারে সিএনজি চালানো সম্ভব হচ্ছে না।

সোমবার(১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর নতুনবাজার ও গুলশান এলাকায় একজন অটোরিকশা চালককেও খুঁজে পাওয়া গেল না যিনি মিটারে যেতে রাজি।

নতুনবাজার থেকে আহসানুল্লাহ ইউনিভার্সিটি যাবেন শিক্ষার্থী আলামীন ইসলাম। এক এক করে পাঁচজন সিএনজি চালককে মিটারে যাওয়ার কথা বললেন তিনি। কিন্তু কোনো চালকই রাজি হলেন না। তারা যাবেন মিটার ছাড়া। অবশেষে ২৫০ টাকা চুক্তিতে যেতে রাজি হলেন সিএনজি চালক মোসলেম। তবে, চালকের দাবি রাস্তায় কোথাও পুলিশ ধরলে তাকে বলতে হবে তিনি মিটারে যাচ্ছেন। কিন্তু সিএনজিতে চেপে বসার পর দেখা গেল অটোরিকশা সিএনজির মিটারই নষ্ট। অথচ নতুনবাজার থেকে আহসানুল্লাহ ইউনিভার্সিটিতে মিটারে উঠে ১৩০-১৫০ টাকা।

মিটারে গেলে সমস্যা কোথায় জানতে চাইলে সিএনজি চালক মোসলেম বাংলানিউজকে বলেন, তিনি বিগত ১৭ বছর ধরে সিএনজি চালান। কিন্তু অতিমুনাফা লোভী মালিকদের জন্য চালকরা বাধ্য হয়েই মিটার ছাড়া সিএনজি চালাচ্ছেন। কারণ প্রতি শিফটে মালিককে জমা দিতে হয় ৯৫০ টাকা। আর রাতের শিফটে সকাল ৬টা অবধি চালালে মালিককে দিতে হয় ৬০০ টাকা। ফলে, তাদের পক্ষে মিটারে সিএনজি চালিয়ে পরিবার নিয়ে রাজধানীতে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।

সোমবার দুপুরে গুলশান থেকে শাহবাগ যাবেন বেসরকারি চাকরিজীবী মেহেদী হাসান। কিন্তু কোনো সিএনজি চালকই মিটারে যেতে রাজি নন। শুধু তাই নয়, রাস্তায় ব্যাপক যানজটের কারণে দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় পড়ে থাকতে হয়। এজন্য মিটারে গেলে তাদের লোকসান হয় বলে তারা মিটারে যাবেন না, বললেন সিএনজি চালক রবিউল। অবশেষে ৩৫০ টাকায় মিটার ছাড়াই যেতে বাধ্য হলেন মেহেদী হাসান।

এসময় বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। অফিসের প্রয়োজনে গুলশানে আসা। কিন্তু কোনো সিএনজি চালক মিটারে যেতে রাজি নন। ফলে, মিটার ছাড়াই দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে শাহবাগে যেতে হচ্ছে। মিটারে গেলে ভাড়া কতো ওঠে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড়জোর ১৮০-২১০ টাকা। ‍

এদিকে, ‍রাজধানীতে নিবন্ধিত সিএনজির বাইরেও চলাচল করছে বিভিন্ন জেলার সিএনজি চালিত অটোরিকশা। যার অধিকাংশ সিএনজি চালকের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। অন্যদিকে অবৈধ সিএনজি ও মিটারে সিএনজি চলাচল করছে কিনা সেটি দেখভালে মাঝে মাঝে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টি বসানো হয় বিআরটিএ’র মোবাইল কোর্ট। কিন্তু তারপরও বন্ধ হচ্ছে না যাত্রী হয়রানি।

নতুন ভাড়া অনুযায়ী অটোরিকশার প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ টাকা। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১২ টাকা। প্রতি এক মিনিট ওয়েটিংয়ের (যাত্রাবিরতি, যানজট ও সিগন্যাল) জন্য দুই টাকা। মালিকের জমা ৯০০ টাকা। কিন্তু ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পরও অনেক চালকই তা মানছেন না।

এ বিষয়ে ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন বাংলানিউজকে বলেন, রাজধানীতে চলাচলের জন্য নিবন্ধিত সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। এছাড়া সিএনজি অটোরিকশাগুলো দুই শিফটে চলাচল করছে। যেখানে এক শিফটে সিএনজি চলাচল করার কথা। ফলে চালকরা বাধ্য হয়েই যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নিচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
এসজে/পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।