ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাথার ওপরেই দোকানদারি!

টিটু দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৭
মাথার ওপরেই দোকানদারি! মাথার ওপরেই দোকানদারি-ছবি: বাংলানিউজ

কিশোরগঞ্জ: ফরিদা আক্তার। বয়স ৩৭ বছর। তিন ছেলে নিয়ে সংসার। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে স্বামী সিরাজ মিয়া মারা যান ৪ বছর আগে। তারপর থেকে ফরিদার জীবনযুদ্ধ শুরু। এখনও তিন ছেলে ও নিজের ভরণ-পোষণের জন্য নিরন্তর ছুটে চলেছেন গ্রাম থেকে গ্রামে।

বাড়ির পাশের দোকান থেকে বিভিন্ন কোম্পানির ম্যালামাইনের তৈজসপত্র মাথায় নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে বিক্রি করেন ফরিদা। সেগুলো বিক্রি করে প্রতিদিন ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা উপার্জন করেন ফরিদা।

উপার্জিত এ সামান্য আয় দিয়ে চলে তার সংসার। আবার কোনো কোনো দিন বিক্রি না হলে ম্যালামাইনের দোকানির কাছ থেকে টাকা ধার করেন।

এভাবেই চলছে ফরিদাসহ ৭০-৮০ জন নারীর সংসার।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কিশোরগঞ্জ পৌর এলাকার হারুয়া চৌরাস্তায় ৮-১০টি ম্যালামাইনের দোকান। সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এসব দোকান থেকে ম্যালামাইন পণ্য নিয়ে ঝুড়িতে সাজান ৭০-৮০ জন নারী। সাজানো শেষ হলে ঝুড়ি ও পণ্যগুলো কাপড়ে বেঁধে মাথার বিড়ায় ঝুড়ি রেখে হাঁটতে শুরু করেন যার যার গন্তব্যস্থলে।

নিজ নিজ এলাকা ছাড়াও জেলার ভৈরব, কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, কটিয়াদী, পাকুন্দিয়া, হোসেনপুর উপজেলা এমনকি ময়মনসিংহের নান্দাইল ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত নিয়েও ম্যালামাইনের তৈজসপত্র বিক্রি করেন ওই নারীরা। দূরে  যেতে ঝুড়িতে সাজানো পণ্য ইঞ্জিনচালিত যানবাহনে বহন করেন তারা।

ম্যালামাইন বিক্রি করতে ঝুড়ি মাথায় গ্রামের পর গ্রামে হাঁটেন তারা। সারাদিনের বিক্রি শেষে আবার দোকানির কাছে বিক্রিত পণ্যের অর্থ ও অবিক্রিত পণ্য বুঝিয়ে বাড়ি ফেরেন এসব নারীরা।

উপার্জনের অর্থ দিয়ে বাজার করে রান্না-বান্না ও খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়েন। আবার সকাল হলেই ছুটতে হয় জীবিকার টানে। মাথার ওপরেই দোকানদারি-ছবি: বাংলানিউজফরিদা ক্ষোভের সঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, ‘শুনেছি, সরকার বিধবা ভাতার কার্ড দেয়। কিন্তু ৪ বছর ধরে আমার কোনো কার্ড নেই। একবার বিধবা ভাতার কার্ড করতে আমাদের এলাকায় এসেছিলেন কর্মকর্তারা। কিন্তু আমি কার্ড করতে গেলে তারা বলেন, কাগজ শেষ হয়ে গেছে’।

একই ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শারমিন আক্তার (৩৪), হালিমা বেগম (৩৬) ও বিলকিছ বেগম (৩৮)।

শারমিন আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিধবা ভাতার কাড (কার্ড) কেমনে পামু, আমরার তো ট্যাহা (টাকা) নাই। ট্যাহা থাকলে কার্ড মিলে। যারা কাড পাইছে তারা হগলেই (সবাই) বড়লোক’।

রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী ছিলেন প্রতিবন্ধী। মারা গেছেন প্রায় ৩ মাস। স্বামী বেঁচে থাকতেই দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে জীবনযুদ্ধে নামছি। যে ট্যাহা (টাকা) পাই তাতে সংসার চলে না, লেহাপড়া (লেখাপড়া) করামু কেমনে?’
      
ভাই ভাই স্টোরের মালিক সঞ্জয় দত্ত বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার দোকান থেকে ১০ জন নারী ম্যালামাইনের তৈজসপত্র নিয়ে বিক্রি করেন। আমি প্রতিদিন ৫-৬ হাজার টাকার পণ্য দেই। তারা সেগুলো বিক্রি করে টাকা আমাকে বুঝিয়ে দেন এবং আমিও তাদের পাওনা বুঝিয়ে দেই’।

শ্যামল স্টোরের মালিক শ্যামল মিয়া বলেন, ‘এসব নারী থাকায় আমাদের কর্মচারী রাখার দরকার পড়ে না। তাই আমরা কোনো কর্মচারী রাখি না’।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৭
আরআর/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।