যেনো তাদের টার্গেটে পরিণত হয়েছিলো দেশের অর্থনীতি। আসলে টার্গেট ছিলো দেশের গণতন্ত্র।
রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তখন একমাত্র শেখ হাসিনার অনড় অবস্থানের কারণেই এই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে পেরেছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৫ জানুয়ারির সেই নির্বাচন নিয়ে অনেক কথাই বলা হতো। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়া, ভোটারের কম উপস্থিতি এসব অভিযোগ রয়েছে। বস্তুত সেটাই ছিলো বাস্তবতা। কারণ দেশকে সাংবিধানিক সঙ্কটের মুখে ঠেলে দিয়ে আরও আগেই বিএনপি জামায়াত জোট এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলো।
দিনটি ছিলো ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর। সেদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছিলেন। রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছিলো আরও আগেই। যা সমাধানের সব ধরনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। আর সে কারণেই সেই সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন- সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় অপেক্ষা করা সম্ভব নয়৷ তাই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হবে।
তবে সে রাতেই বিএনপির চেয়ারপার্সনের গুলশান অফিসে সংবাদ সম্মেলন করে দলের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব (বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্বে) মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওই তফসিল প্রত্যাখ্যান করেন।
বৃহৎ একটি বিরোধী দলসহ অনেক রাজনৈতিক দলের সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় সেদিনের নির্বাচনের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ছিলো এতে কোনও সন্দেহ নেই তবে সাংবিধানিক এবং আইনগত বৈধতা নিয়ে এই নির্বাচনটির ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা কঠিন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত না হলে সরকার পরিচালনা ও প্রশাসনিক ধারাবাহিকতায় একটি বিরাট শূন্যতায় পড়ে যেতো দেশ। অতীতে এমন শূন্যতার উদাহরণ বার বার বাংলাদেশ দেখেছে।
কিন্তু সেটা হতে পারে নি। বলা চলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটা হতে দেননি। নির্বাচনের পরেও কিছু দিন অস্থিতিশীলতা চললেও ধীরে ধীরে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। আর একটি শান্ত পরিবেশে শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজতে থাকেন। তারই ফলে দেশ আজ বিশ্বের কাছে একটি উন্নয়নের রোল মডেলেও পরিণত হয়েছে। দেশ নিম্ন মধ্য আয়ের দেশের তালিকায় পৌঁছাতে পেরেছে। স্বপ্ন দেখছে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের আর ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছে যাওয়ার।
এ নিয়ে বাংলানিউজের কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অপরিহার্য ছিলো। দেশ সংবিধান প্রণীত নিয়ম নীতি দিয়ে চলে। সেই সংবিধান যখন সঙ্কটের মুখে পড়ে তখন দেশকে সে অবস্থা থেকে মুক্ত করা রাজনৈতিক দলগুলোর নৈতিক দায়িত্ব হয়ে ওঠে। ২০১৪ সালে সরকারী দল সে কাজটিই করেছে।
আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির জনককে হত্যার মধ্য দিয়ে যে সাংবিধানিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিলো তার মাশুল বাংলাদেশকে অনেক ক্ষতির মধ্য দিয়েই দিতে হয়েছে। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেটা সকলেরই দায়িত্ব।
তিনি বলেন, বিএনপি তখন নির্বাচন বয়কট করেছিলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তা হতেই পারে। কিন্ত তারা নির্বাচন বয়কট নয়, বানচাল করার চেষ্টা করেছিলো। সে লক্ষে তারা যে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়েছিলো তা মেনে নেওয়া যায় না। সাধারণ মানুষকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে, নির্বাচনী কর্মকর্তাকে হত্যা করে, নির্বাচন কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত স্কুলগুলোকে জ্বালিয়ে দিয়ে সে চেষ্টা করেছে। এ থেকে বোঝা যায় তাদের নির্বাচন বর্জন ছিলো ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
৫ জানুয়ারির নির্বাচন দেশকে উন্নতির পথে, গণতন্ত্রের পথে নিয়ে গেছে, বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিজয়েয়র দিন। সে সময় দেশকে একটি গভীর খাদ থেকে উদ্ধার করে গণতান্ত্রিক পথে রাখতে এই নির্বাচনের ভূমিকা ছিলো। দেশি-বিদেশি যড়যন্ত্রের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছিলো। দেশের গণতন্ত্রকে, সাংবিধানিক অগ্রযাত্রাকে অক্ষুণ্ন রাখতে ৫ জানুয়ারির সেই অবদান স্মরণেই আওয়ামী লীগ দিনটিকে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসেবে উদযাপন করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায়, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল কঠোর অবস্থান আর দেশের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততায় সেদিনের নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছিলো, বলেন হাছান মাহমুদ।
তবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে এখনও আগের অবস্থানেই রয়েছে বিএনপি। এ নিয়ে বাংলানিউজের কথা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আমাদের অবস্থান আগের জায়গায়-ই আছে। আমরা তখনো বলেছি, এই নির্বাচনে জনগণের মতামত ও ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি, এখনো বলছি বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নেতিবাচক উদাহরণ হয়েই থাকবে।
ওই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসা সরকারের সঙ্গে বিএনপি এখন আলোচনায় বসতে চাইছে। তার পরেও কেন সে নির্বাচনকে গ্রহণ করা যাচ্ছে না এই প্রশ্নর জবাবে তিনি বলেন, দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের সঙ্গে তো আলোচনায় বসতেই হবে। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণের কাছে বিএনপির তো দায়বদ্ধতা আছেই!
অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই বিষয়টিতেই আলোকপাত করেন ঢাবি উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের কাজ হচ্ছে দেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার বাস্তবায়ন করা। নির্বাচন বানচাল করে, ভণ্ডুল করার চেষ্টা করে তা কখনোই সম্ভব নয়। আর এটা মেনে নিয়ে এ ধরনের অপরাজনীতি থেকে দেশের সকল রাজনৈতিক দল বেরিয়ে আসবে সেটাই প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ সময় ০০১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৬
এমএমকে