ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দিগন্ত জুড়ে হলুদ সমুদ্র

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১৭
দিগন্ত জুড়ে হলুদ সমুদ্র দিগন্ত জুড়ে হলুদ সমুদ্র

সিরাজগঞ্জ: ঋতু বৈচিত্রের এ বাংলায় বছরের বিভিন্ন সময় বর্ণিল রঙ আর অনাবিল সৌন্দর্য নিয়ে সজ্জিত হয় চলনবিল। কখনো সবুজ রঙে ছেয়ে যায় মাঠ, কখনো রূপালী জলে ভরে যায় বিল আবার কখনো সোনালী ধানের শীষে লাগে বাতাসের দোল।

সিরাজগঞ্জ: ঋতু বৈচিত্রের এ বাংলায় বছরের বিভিন্ন সময় বর্ণিল রঙ আর অনাবিল সৌন্দর্য নিয়ে সজ্জিত হয় চলনবিল। কখনো সবুজ রঙে ছেয়ে যায় মাঠ, কখনো রূপালী জলে ভরে যায় বিল আবার কখনো সোনালী ধানের শীষে লাগে বাতাসের দোল।

আর শীতের শুরুতে দিগন্ত জুড়ে সরিষা ফুল হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

গ্রীষ্মে যেমন সোনালী ধান, বর্ষায় ভরে রূপালী জলে, বসন্তে সবুজ ধানের চারা আর শীতে হলুদ সরিষায় মাঠ ভরা। ঋতুতে ঋতুতে এমনই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য নিয়ে হাজির হয় চলনবিল।

পৌষের শুরুতে শীতের তীব্রতা বাড়ার পাশাপাশি চলনবিলের মাঠ ছেয়ে যায় হলুদ সরিষায়। ফুলে ফুলে মৌমাছির মন মাতানো গুনগুন সঙ্গীত প্রকৃতিপ্রেমীদের মন কেড়ে নেয়।

কবির ভাষায়-

‘দিগন্ত মাঠ জুড়ে হলদে সরিষা ফুলের
নয়ন প্রসন্ন করা যে রূপ দেখিয়াছি,
মুহুমুহু মাতাল করা সেই গন্ধের মিঠালী সমীরণে
পলেপলে আমি যেন তার প্রেমে পড়িয়াছি। ’

দিগন্ত জুড়ে হলুদ সমুদ্রসম্প্রতি এক সকালে চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলার সগুনা, মাগুড়া বিনোদ, উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুর, বড় পাঙ্গাসী, উদুনিয়া ও পুর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায় হলুদ সরিষায় ছেয়ে গেছে মাঠ।

এ সময় কথা হয় সগুনা ইউনিয়নের কৃষক দুলাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সরিষার আবাদ চলনবিলের একটি ঐতিহ্য। প্রায় সব কৃষকই একযোগে সরিষার আবাদ শুরু করেন। তিনি নিজেও ১০ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করছেন।

একই ইউনিয়নের কামারশোন গ্রামের হায়দার আলী, আবিদ হোসেন, উল্লাপাড়ার বড় পাঙ্গাসী ইউনিয়নের খাদুলী গ্রামের নুরুল, পুর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়নের হেলাল, মোফাজ্জলসহ সরিষা চাষী কৃষকেরা জানান, বন্যার পানি নেমে যাবার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সরিষা বীজ বপণ করি। একযোগে সরিষা বোনার কারণে একসাথে চারা বড় হওয়ার পাশাপাশি ফুলও আসে। ফলে সরিষা মাঠ জুড়ে হলুদে ছেয়ে যায়।

সগুনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহেল বাকী জানান, চলবিলের এই সরিষার মাঠ দেখার জন্য দূর-দুরান্ত থেকে মানুষেরা ছুটে আসেন, ছবি তোলেন। বিশেষ করে শুক্রবারে দর্শনার্থীরা স্বপরিবারে আসেন। সরিষা ক্ষেতের মাঝখানে দাড়িয়ে তারা ছবি তোলেন। এতে কিছু সরিষা নষ্টও হয়ে যায়। তারপরও কোন কৃষক তাদের বাধা দেন না। বিভিন্ন স্থানের দর্শনার্থী দেখে এখানকার কৃষকেরাও নিজেদেরকে গর্বিত মনে করেন।
দিগন্ত জুড়ে হলুদ সমুদ্র

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর ও রায়গঞ্জ, পাবনা জেলার চাটমোহর, ফরিদপুর ও ভাঙ্গুড়া, নাটোর জেলার সিংড়া ও গুরুদাসপুর এবং নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার বিস্তৃতি অঞ্চল নিয়ে চলনবিল গঠিত। ১৬ টি নদী ও ২২টি খাল রয়েছে। নদীগুলির মধ্যে করতোয়া, আত্রাই, বড়াল, গুড়, হিজলী, তুলশী, ইছামতি, নন্দকুজা, গুমানী, চৈচুয়া, ভাদাই, চিকনাই, বানগঙ্গা, কুমারডাঙ্গা, মরা আত্রাই ও করতোয়া উল্লেখযোগ্য। ফসলি জমির পরিমাণ ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৩৫ হেক্টর।

এ এলাকার হাজার হাজার কৃষকের জীবন-জীবিকা চলনবিলের বিস্তৃত কৃষি জমির উপর নির্ভরশীল। এ বিলে উৎপন্ন ধান, সরিষা এবং বর্ষাকালের মাছ ধরেই এখানকার অধিকাংশ মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন।

চলনবিলের বিভিন্ন উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে এ বছর ৬২ হাজার ৩শ ৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা। প্রতি বিঘা জমি থেকে কৃষক ৪/৫ মণ সরিষা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী জানান, আসন্ন ইরি ধান মৌসুমের আগে চলনবিলের কৃষকেরা সরিষা চাষ করেন। এতে করে যেমন বাড়তি আয়ের পাশাপাশি ইরি চাষের জন্য জমিও উপযুক্ত হয়। সরিষা আবাদ করা জমিতে ধানচাষ করলে বেশি রাসায়নকি সারের ব্যবহার করতে হয় না। এ কারণেই কৃষকেরা সরিষার প্রতি ঝুঁকছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৭
বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।