ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কোয়েল চাষে শখ থেকে স্বপ্ন পূরণ

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১৭
কোয়েল চাষে শখ থেকে স্বপ্ন পূরণ মাটিরাঙ্গায় কোয়েলের চাষ-ছবি অপু দত্ত

খাগড়াছড়ি: মাটিরাঙ্গা পৌর শহরের চৌধুরীপাড়া এলাকার বাসিন্দা ছবুর হোসেন (৩৫)। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাইক ভাড়া দেওয়াই ছিল তার কাজ। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ছবুর রিয়াজ উদ্দিন বাজার থেকে ৪০টি কোয়েল পাখি কিনে বাসায় একটি খাঁচায় রেখে পালন করতে শুরু করেন।

একপর্যায়ে তার আগ্রহ বেড়ে গেলে পরের ধাপে আরো কয়েকটি কোয়েল পাখি কিনে নিজের বাড়ির পাশে কাঠ আর লোহার জাল দিয়ে দ্বোতলা বিশিষ্ট দু’টি খাঁচা তৈরি করে তাতে পাখিগুলো পালতে থাকেন। খাঁচা দু’টিতে বর্তমানে ৮শ’ কোয়েল রয়েছে, তার মধ্যে বাচ্চা রয়েছে ১৫০টি।

প্রতিদিন এ সব পাখি থেকে ২৫০-২৮০টি ডিম সংগ্রহ করেন তিনি। প্রতিদিন ডিম ও কোয়েল বিক্রি করে তার আয় হয় ১৩ থেকে ১৫শ’ টাকা।

পানি পান করছে কোয়েল-ছবি-অপু দত্তকোয়েল চাষি ছবুর হোসেন বলেন, প্রথমে তো শখের বশে কোয়েল পালন শুরু করি। কিন্তু দেখলাম কোয়েল চাষে খুব বেশি পরিশ্রম নেই। রোগ বালাইও কম, লাভও বেশি। তাই কোয়েল চাষে আগ্রহটা বেড়ে গেলো। এখন কোয়েল চাষ করে সব খরচ বাদ দিয়েও প্রতি মাসে কম করে ৩৫ হাজার টাকা আয় হয়।

এ বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা গন্ধরাজ দাশ, ও আরিফ হোসেনের সঙ্গে। তারা জানান, ছবুর হোসেনের কোয়েল চাষ দেখে এলাকার অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এদিকে কোয়েল পাখির ডিম ও মাংস পুষ্টিকর হওয়ায় প্রতিদিন এলাকার লোকজন খাওয়ার জন্য বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন।

ছবুরের বাবা দেলোয়ার হেসেন বলেন, ‘আমার ছেলের কোয়েল চাষ থেকে এলাকার লোকজনকে উদ্বুদ্ধ হতে দেখে খুব ভালো লাগছে। নতুন নতুন যারা কোয়েল পাখি চাষ করতে চায় তারা আমার ছেলের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছে। আমরা এই কোয়েল চাষে অল্প দিনে বেশ লাভবান হয়েছি’। কোয়েল পাখির ডিম-ছবি অপু দত্ত

অন্যদিকে, দীঘিনালার কবাখালী গ্রামের কামাল হোসেন (৪৫) পেশায় ছিলেন জোত পারমিট বোঝাই কাঠের গাড়ির চালানদার। কিন্তু কাজ বন্ধ হয়ে গেলে বেকার হয়ে পড়েন কামাল। সংসারে অভাব জেঁকে বসে। একদিন টিভিতে কোয়েল পাখির চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। পরে ময়সনসিংহ থেকে কোয়েল চাষের উপর প্রশিক্ষণ নেন।

প্রশিক্ষণ শেষে এলাকায় ফিরে এসে বেসরকারি সংস্থা থেকে স্ত্রীর নেওয়া ৭০ হাজার টাকা ঋণের টাকা দিয়ে জুলাই মাসে শুরু করেন কোয়েল পাখির চাষ।   কবাখালী বাজার সংলগ্ন নিজের কোয়েল পাখির খামারে উপরে টিন আর চারপাশে লোহার নেটের বিশাল দু’টি ঘরে ৪টি রুমে ৬শ’ কোয়েল পাখি লালন পালন করছেন তিনি। কোয়েল পাখি-ছবি অপু দত্ত

কোয়েল পাখি কিনে আনার সপ্তাহখানেক বাদে ডিম দিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে বদলে যায় অভাবি ঘরের চিত্র। বর্তমানে তার খামারে প্রায় ১৪শ’ কোয়েল রয়েছে।

প্রতিদিন খামার থেকে সাড়ে ৪শ’ ডিম সংগ্রহ করেন তিনি। ডিম আর কোয়েল বিক্রি করে প্রতিদিন আয় প্রায় দুই হাজার টাকা। খামার করার পর থেকে প্রায় দুই হাজার কোয়েলও বিক্রি করেছেন।

কামাল হোসেন বলেন, কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। পরে অনেক চিন্তা ভাবনা করে কোয়েলের খামার গড়ে তুলেছি। এখন প্রতি জোড়া কোয়েল বিক্রি করছি আড়াইশ’ টাকায়। প্রতিদিন কোয়েলের ডিম বিক্রি করে প্রায় আঠারশ’ টাকা আয় হয়। মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা থাকছে। কোয়েলের ডিম সংগ্রহ করা হচ্ছে

দীঘিনালার ৩ নং কবাখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. নওশাদ বলেন, ‘এলাকায় কামাল হোসেনের কোয়েল চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেক বেকার যুবক এখন কোয়েল চাষে নেমেছে। রোগ বালাই কম এবং অল্প পুঁজিতে অনেক লাভ বলে দিনে দিনে স্থানীয়দের মধ্যে আগ্রহটা বেড়ে চলেছে।

রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের পরামর্শক ডা. পলাশ নাগ বাংলানিউজকে বলেন, কোয়েলের ডিম ও মাংসে প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল রয়েছে। কোয়েলের ডিম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, সরকার কোয়েল চাষিদের যদি ঋণের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে এই পাখি চাষে অনেক বেকার যুবকের আগ্রহ বাড়বে। স্বাবলম্বী হবে পরিবার।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৭
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।