সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি উল্লেখ করে, মন্ত্রী নিজেকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা দেয়া সাহসিকতার পরিচায়ক হতে পারে। তবে একই সঙ্গে এ সৎ সাহসের যথার্থতার স্বার্থেই নৈতিক অবস্থান থেকে তিনি পদত্যাগ করে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন- এ প্রত্যাশা করছে টিআইবি।
বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত সংবাদসূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এর আগে মন্ত্রণালয়ের এক অধিদফতরের দুর্নীতির ব্যাপকতা রোধে কর্মকর্তাদের ‘সহনশীল’ মাত্রায় ঘুষ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেজে সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নিজেসহ মন্ত্রিপরিষদের সব সহকর্মীদের দুর্নীতিগ্রস্ত বলে মন্তব্য করেন।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর ওই বক্তব্য যেমন জাতির জন্য উদ্বেগজনক, তেমনি এতে কেবল তার নিজের বিভ্রান্তি ও হতাশার প্রতিফলন ঘটেছে। মন্ত্রীর বক্তব্যে এটাও পরিষ্কার যে এর আগে শিক্ষা খাতে টিআইবি’র একাধিক গবেষণায় উঠে আসা ব্যাপক মাত্রার দুর্নীতির চিত্র ও বিশ্লেষণকে তিনি শুধু ধারাবাহিকভাবে অস্বীকার-উপেক্ষাই করেননি, বরং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়েছেন। যার ফলে এখন নিজেকে দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের হাতে জিম্মি ভাবতে হচ্ছে। তার যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সৎসাহস ও দৃঢ়তা থাকত তাহলে এরূপ অসহায়ত্বের মাধ্যমে দুর্নীতির আরো বিস্তার ঘটানোর প্রেসক্রিপশন দেয়ার প্রয়োজন ছিল না। সেক্ষেত্রে তিনি তার দাবি অনুযায়ী দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য-সহনশীলতার কার্যকর প্রয়োগ করতে পারতেন।
ড. জামান বলেন, ঢালাওভাবে সব সরকারি কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের যেভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে আখ্যায়িত করার অপচেষ্টা শিক্ষামন্ত্রী করেছেন, তা অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য। প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী কর্তৃক মন্ত্রিপরিষদের সব সহকর্মীসহ নিজেকে চোর সম্বোধন জনমনে সরকার সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ধারণার অবতারণা করেছে। এমন সময়ে জাতির ভবিষ্যত বিনির্মাণে নিবেদিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মত সংবেদনশীল একটি মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ ধরনের বক্তব্য কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয়।
ড. জামান আরো বলেন, নিজেকে দুর্নীতিগ্রস্তের দলভুক্ত করা যদি সৎসাহসের পরিচয় হয় তবে আমরা তাকে প্রশংসা করি। একইসঙ্গে এ সৎসাহসের ধারাবাহিকতায় তিনি নৈতিক অবস্থান থেকেই পদত্যাগ করে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। নিজেকে দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করা যদি তার ক্ষোভ ও অসহায়ত্বের প্রকাশ হয়ে থাকে তবে পদত্যাগের পর যথাযথ প্রক্রিয়ায় যদি তিনি দুর্নীতিমুক্ত প্রমাণিত হন তাহলে তিনি দেশবাসীর প্রশংসার পাত্র হতে পারেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
এসএইচ
