ঢাকা: শিক্ষার ক্ষেত্রে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা করোনা ভাইরাসের সময়ে বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। করোনার আগে থেকেই শিক্ষা খাতে যে ধরনের বৈষম্য বিদ্যমান ছিল, এ সময়ে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।
দেশের মাত্র ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ বাড়িতে (খানা বা হাউসহোল্ড) কম্পিউটার বা ল্যাপটপ সুবিধা রয়েছে, শহরাঞ্চলে এ হার ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং গ্রামে ২ দশমিক ৮২ শতাংশ। অন্তত একবার কম্পিউটার ব্যবহার করেছেন এমন নারী জনগোষ্ঠীর হার ৪ শতাংশ, যা শহরাঞ্চলে ১০ শতাংশ এবং গ্রামে ২ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা খাতে জেন্ডার, অঞ্চল ও আয়ভেদে আগে থেকে বিদ্যমান বৈষম্য মহামারির কারণে আরও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে আগামী পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষাতে বৈষম্য হ্রাস, শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার কমানো, কারিগরী শিক্ষার গুরুত্ব বহুগুণে বাড়ানো, কারিকুলামের আধুনিকায়ন হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
শনিবার (৫ ডিসেম্বর) সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং একশনএইড বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে “করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় তরুণ ও জেন্ডার বিষয়ক এজেন্ডার প্রতিফলন” শীর্ষক ওয়েবিনারে গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সানেমের জ্যৈষ্ঠ গবেষণা সহযোগী ইশরাত শারমীন। ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।
একশনএইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবিরের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা।
ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন কারিগরী শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ সায়েদ আলী, ব্র্যাকের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী এবং সহজ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা এম কাদির।
ওয়েবিনারে বিশেষ বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্বের হার ১০ দশমিক ৭ শতাংশ যা বিশ্বব্যাংকের গবেষণা অনুসারে করোনার প্রভাবে ২৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রায় ৩০ শতাংশ তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে যারা শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণ (এনইইটি) কোনটিতেই নেই। এক্ষেত্রে আগামী পাঁচ বছর মেয়াদী পরিকল্পনায় তরুণ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহায়তা দেওয়া, শ্রম বাজারে নারীদের অধিক অংশগ্রহণের জন্য সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ওয়েবিনারে কারিগরী শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২০০৯ সালে যেখানে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ছিল মাত্র ১ শতাংশ, তা ২০১৯ সালে বেড়ে হয়েছে ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। যদিও বিগত সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কারিগরি শিক্ষায় নারীদের ভর্তির হার আশা করা হয়েছিল ৪০ শতাংশে পৌঁছাবে, তবে বর্তমানে এ হার ২৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। বর্তমানে ৩২৯টি উপজেলার প্রত্যেকটিতে একটি করে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ৪৯২টি উপজেলার প্রত্যেকটিতে একটি করে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের লক্ষ্য রয়েছে। এর বাইরে এ বছর থেকে প্রায় ১০ হাজার সরকারি ও বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতভাগ নারী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির আওতায় আনা হবে। কারিগরি শিক্ষার কারিকুলাম প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাতের শ্রম চাহিদাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু কারিগরি শিক্ষাতে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ভর্তির হার বেশি। এজন্য করোনার এ সময়ে এসব শিক্ষার্থীদের ধরে রাখা, আবার শিক্ষাতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা- একটি চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০২০
এসই/আরআইএস