ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অনলাইনে অর্ডার: প্যাকেটে মিললো ভাঙা ফোন-নষ্ট চার্জার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২০
অনলাইনে অর্ডার: প্যাকেটে মিললো ভাঙা  ফোন-নষ্ট চার্জার

ঢাকা: অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে গত ৯ ডিসেম্বর এএসশপডটকম নামে একটি অনলাইন শপে ৭ হাজার ৭০০ টাকায় দুটি স্মার্টফোন (VIVO-Y50) অর্ডার করেন রাকিবুল ইসলাম। অর্ডার করা স্মার্টফোনের প্রকৃত বাজার মূল্য ১৫ হাজার ৯৯০ টাকা।

অর্ডার নিশ্চিত করতে ১৫০ টাকা বিকাশও করেন তিনি।  

দুইদিন পর (১১ ডিসেম্বর) এসএ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসের মিরপুর শাখায় পণ্যের দাম পরিশোধ করে অর্ডারটি বুঝে নেন তিনি। এরপর দুটি প্যাকেট খুলতেই দেখা যায়- ভেতরে কাগজ, দুটি নষ্ট নকিয়া মোবাইলফোন ও ব্যবহারের অযোগ্য দুটি ফোন চার্জার।

এ বিষয়ে রাকিবুল ইসলাম ওই অনলাইন শপে যোগাযোগ করলে তারা জানায় ভুলে এমনটা হয়েছে। প্রতারক চক্রটি পণ্য পরিবর্তনের আশ্বাস দিয়ে তাকে আরও ২ হাজার টাকা বিকাশ করতে বলে। বিকাশে এই ২ হাজার টাকা পাঠালে তাদের কোম্পানির ডেলিভারিম্যান বাসায় গিয়ে স্মার্টফোন দুটি দিয়ে আসবেন। এরপর থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় চক্রটি।

রাকিবুল ইসলাম মিরপুর বাংলা কলেজের ইসলামিক স্টাডিজের একজন শিক্ষার্থী। শুধু রাকিবুল ইসলাম নয়, তার শতশত এসএমশপডটকম অনলাইন শপ পরিচালাকারী চক্রটির মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।

পরবর্তীকালে ১৩ ডিসেম্বর ভুত্তভোগী রাকিবুল ইসলাম রাজধানীর মিরপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

অভিযোগ তদন্ত করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের রসুলপুর এলাকা থেকে ই-কমার্স প্রতারণা চক্রের তিনটি গ্রুপের ৬ জনকে গ্রেফতার করে ।

গ্রেফতার হওয়া প্রতারক চক্রের সদস্যরা হলেন, রকি বিশ্বাস (২৫),  হেকমত আলী (২৭), কচিবুর রহমান (২২), শিমুল মণ্ডল (২৭), আনিছুর রহমান শেখ (২৯), মাজহারুল ইসলাম (২৪)।

অভিযানে তাদের কাছ থেকে ২০২টি এসএ পরিবহন পার্সেল অ্যান্ড কোচ সার্ভিসের বুকিং মেমো, ১১৭টি পণ্য বিক্রয়ের ক্যাশ মেমো, বিভিন্ন রংয়ের ব্যবহারের অযোগ্য ৪৬ জোড়া জুতা, বিভিন্ন মডেলের ভাঙাচোরা/ব্যবহারের অযোগ্য ১২টি মোবাইল ফোন ও ১০টি চার্জার, একটি ল্যাপটপ, বিভিন্ন পণ্যের বুকিং ফেরতযোগ্য বক্স ১৫টি এবং প্রতারণা কাজে ফেসবুক পেইজে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন মডেলের ১৪টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কেএম হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেফতার হওয়া আসামিরা দারাজ অনলাইন, দারাজ অনলাইন ৭১, দারাজ অনলাইন শপ, দারাজ এক্সপ্রেস, দারাজ অনলাইন বিডি, ফ্যাশন জোন, গ্যালাক্সি ২৪, অনলাইন মোবাইল গ্যালাক্সি, শপিং সেন্টার নেট, শপিং জোন বিডি, শপিং ডেলস, স্মার্ট শপ বিডি, উইনটার কালেকশন, সোনিয়া ফ্যাশন হাউজ, সু বাজার ডট কম, ফ্যাশন হাউজ ২৪, চায়না ফ্যাশন বিডি, বিডি ফ্যাশন শপ সহ ফেসবুকে অনেকগুলো পেইজ খুলে অনলাইনে ভালো মানের মোবাইল, জুতা, ঘড়ি, খ্রি-পিস, শাড়িসহ মূল্যমান প্রয়োজনী সামগ্রীর বিজ্ঞাপন দেয়।

তিনি বলেন, বিজ্ঞাপনে কোনো ব্যক্তি ভালো মানের সামগ্রী দেখে অর্ডার করলে, অর্ডার নিশ্চিত হওয়ার পর রকি বিশ্বাস, হেকমত আলী ও কচিবুর আসামী আনিছুর রহমান শেখ ও মাজহারুল ইসলামের মাধ্যমে নকল ভাঙ্গাচুরা নষ্ট ও নিমনমানের সামগ্রী প্যাকেটিং করে এসএ পরিবহন অ্যান্ড কুরিয়ার সার্ভিসে বুকিং দিয়ে অভিনব পদ্ধতিতে প্রতারণা করে আসছিলো।

কেএম হাফিজ আক্তার জানান, এদের মধ্যে আসামি শিমুল মণ্ডল ও তার আপন বড় ভাই পলাতক আসামি আশিকুর রহমান ওরফে সুজন নড়াইলে বসে অর্ডার কনফার্ম হলে ফোনে জানানোর পর চক্রের সদস্যরা গাউছিয়া ও নিউমার্কেটর সামনে ফুটপাত থেকে নকল, ভাঙাচোরা, নষ্ট ও নিম্নমানের সামগ্রী সংগ্রহ করে এসএ পরিবহন অ্যান্ড কুরিয়ার সার্ভিসে বুকিং দিয়ে অভিনব পদ্ধতিতে প্রতারণা করে থাকে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, কেউ যদি হোম ডেলিভারি চায় সেক্ষেত্রে পার্সেলের ১৫০ টাকাসহ পণ্যের মূল্য অনুযায়ী পুরো টাকা বিকাশের মাধ্যমে নিয়ে নেয়। টাকা পাওয়ার পর কোনো পণ্য পাঠায় না এবং যোগাযোগ বিছিন্ন করে দেয়। ক্রেতা তবুও যদি অন্য কোনো মাধ্যমে যোগাযোগ করে তবে তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতো।

চক্রগুলো পণ্য সরবরাহের জন্য এসএ পরিবহনকে ব্যবহার করতো। প্রতারণায় এসএ পরিবহনের কেউ জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।

কে এম হাফিজ বলেন, ই-কমার্সের তদারকির জন্য নিয়ন্ত্রণকারী কোনও প্রতিষ্ঠান নেই। কুরিয়ার সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অবহেলা রয়েছে। তারা অনেকক্ষেত্রে চেক না করে বুকিং নেয় এবং পণ্যের দাম আগে নিলেও কোনো দায়ভার নেয় না। আমরা এই দুর্বলতাগুলো নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে অবহিত করবো। প্রতারণায় কোনো প্রতিষ্ঠান জড়িত কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।

ডিবি লালবাগ জোনের উপ কমিশনার রাজিব আল মাসুদ বলেন, অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে ফাঁদে পড়া যাবে না। বাজার মূল্যের তুলনায় অবিশ্বাস্য কম দামে পণ্য কিনতে গেলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষের সরল বিশ্বাসকে পুঁজি করে প্রতারকরা এগুলো করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২০
এসজেএ/এমইউএম/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।