বরিশাল: টানা ২২ দিন পার হলেও সন্ধান পাওয়া যায়নি সুমন দেবনাথ নামে বরিশাল সদর উপজেলার এক ওষুধ ব্যবসায়ীর। বিভিন্ন থানা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার অফিসে খুঁজে সন্ধান না পাওয়ায় চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে নিখোঁজ ব্যবসায়ীর পরিবার।
নিখোঁজ সুমনের পরিবারের দাবি, সুমনকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ আসার ছয় ঘণ্টা আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলার টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নের সাহেবেরহাট বন্দরের রতন মেডিক্যাল হলের স্বত্বাধিকারী সুমন দেবনাথ। তার বাবা তপন দেবনাথ একই বাজারের কাপড় ব্যাবসায়ী। গত ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় সুমনকে তার দোকান থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান ৬/৭ জন ব্যক্তি। বাজারে উপস্থিত লোকজন সুমনকে তুলে নিয়ে যেতে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন প্রতক্ষদর্শী রাজিব।
নিখোঁজ সুমনের বাবা তপন দেবনাথ বলেন, ঘটনার দিন আনুমানিক রাত ১২টার দিকে আমাদের বাড়িতে স্থানীয় ইউপি সদস্য অমর দেবনাথকে নিয়ে হাজির হন দামুরহুদা থানার ওসি। তাদের সঙ্গে বন্দর থানার পুলিশ সদস্যরাও ছিলেন। এ সময় তারা আমাকে জানান, সুমন দামুরহুদা থানায় একটি হত্যা মামলার আসামি। কিন্তু সুমনকে সন্ধ্যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যান কতিপয় ব্যক্তি। আমরা এখনো বুঝতে পারছি না, আমার ছেলে গ্রেফতার হয়েছে নাকি গুম হয়েছে!
তপন দেবনাথ অভিযোগ করে বলেন, আমরা বন্দর থানায় জিডি করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু থানার ওসি আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য অমর দেবনাথ বলেন, আমাকে সাথে নিয়েই দামুরহুদা মডেল থানার ওসি রাতে সুমনদের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারি তাকে তুলে নিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, সুমন অপরাধী হলেও তার পরিবারের সদস্যদের অধিকার রয়েছে তার অবস্থান বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার।
টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাহাউদ্দীন আহমেদ বলেন, আমি বিষয়টা শুনেছি। সুমন যদি অপরাধী হয়েও থাকে তাহলে তার পরিবারকে জানানো হোক।
সাহেবেরহাট বন্দর ব্যাবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামিম খান লিখন বলেন, আমি সুমনের বাবা তপন দেবনাথকে নিয়ে বন্দর থানায় গিয়েছিলাম সুমনের সন্ধান পেতে। এ বিষয়ে পুলিশ নিজেদের অপারগতা প্রকাশ করেছে।
সুমনের সন্ধান না পেয়ে তার স্ত্রী-সন্তান দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সুমনের স্ত্রী সংগীতা দেবনাথ বলেন, আমার স্বামী অপরাধী হলেও তা আমাদের জানতে হবে। এটা আমার অধিকার। আমার স্বামীর আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ চাই। ৩ বছরের বাচ্চা নিয়ে বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুরহুদা মডেল থানার ওসি আমার কাছে এসেছিলেন এবং একজন হত্যা মামলার আসামি হিসেবে সুমনের গ্রেফতারের আইনগত সহয়তা চাইলে আমি তাকে সহায়তা করি। কে বা কারা তাকে তুলে নিয়ে গেছে তা আমরা অবগত নই।
দামুরহুদা থানা সূত্রে জানা গেছে, চিকনগুনিয়া নিবাসী মীম হত্যা মামলার আসামি সুমন দেবনাথ। তাকে গ্রেফতার করতে ২৪ নভেম্বর দিবাগত রাত ১২টার দিকে বরিশালে তার বাড়িতে অভিযান চালিয়েও তাকে পায়নি পুলিশ।
ওই থানার ওসি আব্দুল খালেক সাংবাদিকদের জানান, চিকনগুনিয়ার একটি হত্যা মামলার আসামি সুমন দেবনাথকে গ্রেফতার করতে বরিশালে তার বাড়িতে অভিযান চালিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। শুনেছি কে বা কারা ওইদিন সন্ধ্যায় সুমনকে তার দোকান থেকে তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু কারা নিয়েছে তা আমি জানি না।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২০
এমএস/এমজেএফ