ঢাকা: এক আত্মীয়কে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এগিয়ে দিয়ে বাসযোগে নবীনগর ফিরছিলেন কলেজছাত্র জিসান হাবীব (১৮)। পথিমধ্যে আব্দুল্লাহপুর এলাকায় বাসের জানালা দিয়ে মোবাইল নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে ছিনতাইকারী।
মোবাইল উদ্ধারে ছিনতাইকারীর পিছু নেওয়াই কাল হল জিসানের জীবনে। কিছু দূর দৌড়ানোর পর তাকে এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা। আর এতেই ঘটনাস্থলেই প্রাণ যায় জিসানের।
রাজধানীর উত্তরা আব্দুল্লাহপুর এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে কলেজছাত্র জিসান হাবিবকে হত্যার ঘটনায় নয়জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন- সুন্দরী সুমন, স্বপন, বিপ্লব, তৈয়ব আলী ওরফে উজ্জ্বল ওরফে তবলা ওরফে বাবলা, জাহাঙ্গীর ব্যাপারী ওরফে হৃদয়, তানভীর রহমান নেহাল, জিহাদ, নূরুল ইসলাম রাব্বি ও রাকিব।
বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে উত্তরা পূর্ব থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ।
তিনি বলেন, জিসান নোয়াখালী সোনাইমুড়ী খলিলুর রহমান ডিগ্রি কলেজের প্রথমবর্ষের ছাত্র। গত ২৮ নভেম্বর নোয়াখালী থেকে ধামরাইয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জিসান এক আত্মীয়কে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে যান। সেখান থেকে রুহুল আমিন নামে এক আত্মীয়ের সঙ্গে বাসযোগে নবীনগর ফিরছিলেন। তাদের বহনকৃত বাসটি আবদুল্লাহপুর এলাকায় এলে জানালা দিয়ে এক ছিনতাইকারী জিসানের মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
এ সময় দ্রুত বাস থেকে নেমে দৌড়ে ছিনতাইকারীকে ধরে ফেলেন তিনি। এ সময় রুহুলও বাস থেকে নেমে সেখানে যান। এরপর তারা দু’জন ছিনতাইকারীর কাছ থেকে মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করতে গেলে পেছন থেকে অপর দু’জন ছিনতাইকারী এসে জিসান ও রুহুলকে এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাত করেন।
পরে আহত জিসান ও রুহুলকে চিকিৎসার জন্য শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক জিসানকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
ডিসি বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় এ ঘটনায় জড়িত অভিযুক্তদের শনাক্ত করে প্রথমে উত্তরা ও টঙ্গী এলাকা থেকে সুন্দরী সুমন ও স্বপনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়। তাদের বিজ্ঞ আদালতের আদেশে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের সহযোগীদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।
পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নরসিংদীর রায়পুরা থানার বাঘাইকান্দী চর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিপ্লব ও তৈয়ব আলীকে গ্রেফতার করা হয়। অব্যাহত অভিযানে উত্তরা ও টঙ্গী এলাকা থেকে সংশ্লিষ্ট জাহাঙ্গীর ব্যাপারী, তানভীর রহমান নেহাল, জিহাদ, নূরুল ইসলাম রাব্বি ও রাকিবকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতাররাসহ পলাতক কবির ও নাতি সোহাগ আব্দুল্লাহপুর ও উত্তরা এলাকায় ছিনতাই করে। দলের একটি গ্রুপ বিভিন্ন স্থানে পাহারা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যরা আশপাশে আসছে কিনা। গ্রুপের কোনো একজন ধরা পড়লে গ্রুপের অন্য তিন থেকে চারজন সদস্য মুরুব্বী সেজে ঘটনাস্থলে আসে এবং ‘কি হয়েছে, কি হয়েছে ভাই’ ইত্যাদি কথা বলে আটক ছিনতাইকারীকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
ঘটনার দিন জিসানের মোবাইল ছিনতাই করে পালানোর সময় জিসান ও রুহুল বাস থেকে নেমে ছিনতাইকারী হৃদয়কে ধরে ফেললে দলের গ্রেফতারকৃত অন্য সদস্যরা হৃদয়কে ছাড়ানোর জন্য আসে। এ সময় ছিনতাইকারীরা এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে জিসান ও রুহুল আমিনকে রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায়।
চক্রটির প্রায় সব সদস্যের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় চুরি, মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। পলাতকদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২০
পিএম/আরবি