বরিশাল: বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশকে (বিএমপি) ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিল বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। এ সময়ের মধ্যে বিএমপি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিয়াজুলকে কোতোয়ালি থানা থেকে প্রত্যাহার না করা হলে মানববন্ধন, প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ রাখাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) জরুরি সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ডা. মো. মনিরুজ্জামান শাহিন।
তিনি বলেন, জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে বিএমপি পুলিশের এসআই রিয়াজুলকে কোতোয়ালি থানা থেকে প্রত্যাহার ও বিএমএ’র জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং আগামীতে যে কোনো চিকিৎসককে এভাবে হয়রানি না করা হয় তার দাবি জানানো হয়। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আমাদের দারি পূরণের জন্য আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না করা হলে বরিশালের চিকিৎসকরা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। আন্দোলনের কর্মসূচির মধ্যে মানববন্ধন, চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ রাখা এবং পর্যায়ক্রমে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে বলে জানান শাহিন।
এ আগে দুপুর ১২টায় বিএমএ’র সভাপতি ডা. মো. ইসতিয়াক হোসেনের সভাপতিত্বে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের (শেবাচিম) কনফারেন্স কক্ষে এ জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. এস এম সরওয়ার, সাবেক অধ্যক্ষ ডা. রনিজৎ খা ও বিএমএ’র সহ-সভাপতি এবং সাবেক অধ্যক্ষ ডা. সৈয়দ মাকসুমুল হক, সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ডা. মো. মনিরুজ্জামান শাহিন, প্রফেসর ডা. জহিরুল হক মানিক, ডা. হাওয়া আক্তার জাহান, ডা. ইমরুল কায়েস, ডা. নাজিমুল হক, শেবাচিমের আউটডোর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সৌরভ সুতার, সাধারণ সম্পাদক নূরুন্নবি তুহিন, বিএমএ’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ভিপি ডা. মাসরেফুল ইসলাম সৈকত, আন্তঃবিভাগ চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. আসিক দত্ত, ডা. সিরিন সাবিহা তন্নি বক্তব্য রাখেন।
চিকিৎসকরা জানান, গত ২২ ডিসেম্বর রাত ৯টার মোবাইল ফোনে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) বরিশালের সভাপতি ডা. মো. ইসতিয়াক হোসেনের সঙ্গে এসআই রিয়াজুল অসদাচারণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। বিষয়টিতে চিকিৎসকরা ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাই ওই এসআইকে কোতোয়ালি মডেল থানা থেকে প্রত্যাহার ও তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ইতোপূর্বে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বিএমএ দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক দিনেও এ দাবি পূরণ হয়নি। এ কারণে দুপুরে বিএমএ জরুবি বৈঠক করে।
বিএমএ’র বরিশালের সহ-সভাপতি ডা. সৈয়দ মাকসুমুল হক বলেন, পৃথিবীব্যাপী করোনাকালীন দুর্যোগে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা যেখানে নিবেদিতপ্রাণ ও সফলতার সঙ্গে চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রেখেছেন। সেখানে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার বরিশাল বিভাগের চিকিৎসকদের কর্মস্পৃহা ও স্বাস্থ্যসেবা স্থবির করে দেবে।
তিনি বলেন, গত ১৬ ডিসেম্বর (বুধবার) ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ডা. এম. এস রহমান সুমনের তত্ত্বাধায়ণে মানিক কারিকর নামে এক রোগীর অপারেশন সম্পন্ন হয়। ওই চিকিৎসক ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের নিয়োগ করা চিকিৎসক নন, কেবলমাত্র কনসালটেন্ট হিসেবে চেম্বার বা অপারেশন করেন। তথাপি অপারেশন পরবর্তী জটিলতা সৃষ্টি হলে এবং হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. ইসতিয়াক হোসেনের কাছে বিষয়টি রোগী অবহিত করেন। তিনি রোগীর প্রতি মানবিক দিক বিবেচনা করে পরবর্তী চিকিৎসার বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে রোগী কতিপয় ব্যক্তি কর্তৃক প্ররোচিত ও প্রভাবিত হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই দিন প্রাথমিক তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে এসআই রিয়াজুল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কোনো রূপ অবহিত করেই ২২ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে হাসপাতালে যান। এ সময় মোবাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও বিএমএ বরিশাল শাখার সম্মানিত সভাপতি ডা. ইসতিয়াকের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং মামলায় দুই নম্বর আসামি হিসেবে তাকে অন্তর্ভূক্ত করার হুমকি দেন। ওই রোগীর চিকিৎসায় কোনো ধরনের সংশ্লিষ্ট না থাকা সত্ত্বেও মামলা গ্রহণ করে তাকে হয়রানিমূলক ভাবে দুই নম্বর আসামি করা হয়। পরবর্তীতে রোগী পুনরায় সংশ্লিষ্ট সার্জারি বিশেষজ্ঞ কর্তৃক আশ্বস্ত হয়ে মামলা প্রত্যাহার করতে গেলে থানা থেকে গড়িমসি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোগী গত ২৪ ডিসেম্বর এফিডেভিটের মাধ্যমে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২০
এমএস/আরআইএস