ঢাকা: দেশব্যাপী বিভিন্ন পণ্যের মূল্যস্ফীতির ছোঁয়া লেগেছে বেকারি পণ্যেও। নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সব ধরনের ভোক্তার জন্য উৎপাদিত বেকারি পণ্যের মূল্য বেড়েছে।
রাজধানীর ব্যস্ততম সায়েন্স ল্যাব মোড়ে শনিবার (২৮ মে) দুপুরে ফুটপাতে শাকিলের টং দোকানে নাস্তা করছিলেন রিকশাচালক গণি মিয়া। সারাদিন রিকশা চালিয়ে যখন ক্লান্ত হয়ে যান, তখন বিশ্রাম নেওয়ার পাশাপাশি চা-নাস্তা করেন এসব টং দোকানে। এভাবে দিনে ৩ থেকে ৪ বার বসেন বলে জানান বাংলানিউজের এ প্রতিবেদককে।
আগে তিনি চায়ের দোকানে বসে এক কাপ দুধচায়ে বনরুটি ভিজিয়ে খেতেন, সঙ্গে নিতেন একটা কেক। এক কাপ চা ৫ টাকা, একটি বনরুটি ৫ টাকা আর একটা কেক ৭ টাকা। মোট খরচ হতো ১৭ টাকা, দিনে ৪ বারে ৬০ থেকে ৭০ টাকা খরচ হতো।
গত ১০ দিন ধরে তার খরচ প্রায় দেড়গুণ বেড়েছে। এক কাপ দুধ চা ৭ টাকা, বনরুটি দ্বিগুণ বেড়ে ১০ টাকা, কেকের দাম ৩ টাকা বেড়ে হয়েছে ১০ টাকা। এখন প্রতিবারে ২৭ টাকা ও সারাদিনে ১১০ টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানান গণি মিয়া।
বেকারি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তার মতো বিপাকে পড়েছেন পাশে বসা আব্দুল করিমও। তিনি দাম বাড়ায় আগের থেকে একবার কম খাচ্ছেন কিংবা নাস্তা কম করছেন বলে জানান।
দাম বাড়া প্রসঙ্গে কথা হয় টং দোকানি শাকিল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, দোকানের খাবারের দাম তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। আগে একটি বনরুটি বিক্রি হতো পাঁচ টাকায়। এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ১০ টাকা। আগে যে কেক ৭ টাকা ছিল এখন তা ১০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। আগে যে বিস্কুট তিন টাকা ছিল এখন সেটা পাঁচ টাকা।
দাম বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বললেন, আগে যে দামে কিনতাম প্রতিটি পণ্যই ১ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। এজন্য বাধ্য হয়েই দাম বাড়াতে হয়েছে বলে জানান এই টং দোকানি।
বেড়েছে মধ্য ও উচ্চবিত্তদের জন্য উৎপাদিত কনফেকশনারি পণ্যের দামও। রাজধানীর ধানমন্ডি এলকার কিংস কনফেকশনারিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় কেক, রুটি, বিস্কুটসহ সব ধরনের পণ্যেরই দাম বেড়েছে।
দোকানের কর্মচারী সজিব হোসেন জানান, ৫ পিসের যে মিল্ক বনের আগে দাম ছিল ৮৫ টাকা, এখন সেটা হয়েছে ১১০ টাকা। প্লেইন সুগার বানও আগের চেয়ে ২৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ১১০ টাকা। বার্গার বান ৩০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৩০ টাকা। চার পিসের বিস্কুটের প্যাকেট ৩০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৪০ টাকা।
এ দোকানে পণ্য কিনতে আসা মাসুদ হোসেন বলেন, মোটামুটি দামে এখানে সুস্বাদু পণ্য পাওয়া যেত। কিন্তু এখন প্রতিটি পণ্যের দামই বেড়েছে।
ধানমন্ডি, হাতিরপুল, উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মধ্যম ও ভালো মানের দোকানে সব ব্রান্ডের বেকারি পণ্যের দাম বেড়েছে।
পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকার একটি বেকারির মালিক সাত্তার হোসেন জানান, এপ্রিল মাসে ৫০ কেজি ওজনের ময়দার বস্তার দাম ছিল ২ হাজার টাকা। মে থেকেই দাম বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকা। বেড়েছে চিনি, গুঁড়া দুধ, আটাসহ বেকারির সব কাঁচামালের দাম। সেজন্য আমাদের সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়াতে হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৯ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২২
এনবি/এমএমজেড