ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সাংবাদিকদের সুরক্ষায় সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনার আহ্বান 

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩০ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২২
সাংবাদিকদের সুরক্ষায় সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনার আহ্বান 

ঢাকা: সাংবাদিকদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে ২০১২ সালে জাতিসংঘ প্রণীত কর্মপরিকল্পনা (প্ল্যান অব অ্যাকশান) সংশোধন করে সময়োপযোগী করার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের সুরক্ষার অধিকার প্রসারে বিশ্বজুড়ে কাজ করা এই সংস্থাটি মনে করে, পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতির আলোকে এক দশক পুরানো এই আন্তর্জাতিক কর্মপরিকল্পনাটি সংশোধন করা প্রয়োজন।

 

এক্ষেত্রে ডিজিটাল যুগের উত্থান, কোভিড মহামারি, আফগানিস্তানের পটপরিবর্তন, ইউক্রেন যুদ্ধসহ অন্যান্য সমসাময়িক ইস্যু, চাহিদা ও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে হবে।

 নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে অনুষ্ঠিত সাংবাদিকদের সুরক্ষায় জাতিসংঘের কর্মপরিকল্পনা (ইউএনপিএ) বিষয়ক সাউথ এশিয়া রিজিওনাল কনসালটেশনে আর্টিকেল নাইনটিন এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে। কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের ১০ম বার্ষিকীতে নেপাল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং নেপালি সাংবাদিক ফেডারেশনের সহযোগিতায় ইউনেস্কোর নয়াদিল্লি ও কাঠমাণ্ডু কার্যালয় যৌথভাবে দুই দিনব্যাপী (৩১ মে – ১ জুন ) এই পরামর্শ সভার আয়োজন করে।  
বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভুটান এবং নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই পরামর্শ সভায় সরকারি কর্মকর্তা, গণমাধ্যমে নীতিনির্ধারক, মিডিয়া শিক্ষাবিদ, বিচার বিভাগ এবং আইন বিশেষজ্ঞ, ইন্টারনেট ব্যবসার অংশীজন, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী এবং তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ইউএনপিএর বর্তমান বাস্তবায়ন অবস্থা মূল্যায়ন করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা গত এক দশকে সাংবাদিকদের সুরক্ষায় ইউএনপিএর বাস্তবায়ন তথা এর প্রধান তিনটি দিক: প্রতিরোধ, সুরক্ষা, বিচারের সম্মুখীন করার ক্ষেত্রে সাফল্য ও চ্যালেঞ্জের ওপর আলোকপাত করেন।  
একইসঙ্গে তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের গুরুত্ব তুলে ধরে মানুষের জানার অধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ এবং সঠিক তথ্যের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে সুপারিশ করেন।
 
উল্লেখ্য, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য একটি অবাধ ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে এবং বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের দায়মুক্তি মোকাবেলার জন্য ২০১২ সালে ইউনাইটেড ন্যাশনস প্ল্যান অব অ্যাকশন গৃহীত হয়।

অনুষ্ঠানে ইউনেস্কোর দক্ষিণ এশীয় যোগাযোগ ও তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা হেজকিয়েল দ্লামিনি বলেন, এই অঞ্চলে সাংবাদিকদের সুরক্ষায় গত এক দশকে ইউএনপিএর সাফল্য ও চ্যালঞ্জগুলো খতিয়ে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে এই সম্মেলন, যা কর্মপরিকল্পনার বর্তমান অবস্থা মূল্যায়নে সহায়ক হবে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, ইউএনপিএ তৈরি হয়েছিল ১০ বছর আগে। এরপর নাগরিক সাংবাদিকতার প্রবর্তন, মতপ্রকাশ ও তথ্যের উৎস হিসেবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের বিকাশ, অনলাইন মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে দেশে দেশে আইনি কাঠামো প্রণয়ন এবং কোভিড মহামারি পরিস্থিতির মতো বিভিন্ন ঘটনায় সাংবাদিক ও যোগাযোগকারীদের জন্য বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এসেছে। তাই অবিলম্বে ইউএনপিএ পর্যালোচনা করা দরকার। এটি সংশোধনের মাধ্যমে সময়োপযোগী করার জন্য এখনই সঠিক সময়।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সাংবাদিকদের অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ও চ্যালেঞ্জের ধরন একই রকম। এগুলো হলো দায়মুক্তি, হুমকি এবং ভীতি প্রদর্শন, সেল্ফ-সেন্সরশিপ, আইনি হয়রানি, শারীরিক আক্রমণ, অনলাইন হয়রানি, ট্রলিং, মানসিক স্বাস্থ্যকে বাধাগ্রস্ত করা এবং প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ক্ষেত্রে কার্যকর সুরক্ষা ব্যবস্থার অভাব।  
পরিস্থিতির উন্নয়নে অনুষ্ঠানে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। এগুলো হলো- সচেতনতা বাড়ানো, সাংবাদিকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, অধিকার লঙ্ঘনের প্রামাণ্য ডকুমেন্টেশন, দায়মুক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অ্যাডভোকেসি করা। এছাড়া আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ ও প্রতিশ্রুতি পূরণের ক্ষেত্রে  রাষ্ট্র ও এর বিচার ব্যবস্থার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সুরক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা।


বাংলাদেশ সময় : ২২.১৭ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২২
টিআর/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।