ঢাকা: উদ্বোধনের অপেক্ষায় কোটি হৃদয়ের ভালোবাসার পদ্মা সেতু। পদ্মার ওপর দিয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটবে গাড়ি।
আগামী ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন সকাল ১০টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে সেতুটি। পদ্মা সেতু যখন উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে তখন এই রুট ব্যবহারকারী ২১ জেলার মানুষের জন্য নতুন গণপরিবহন, বিশেষ সার্ভিস নামানোর কথা ভাবছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
এই সেতু চালুর ফলে পালটে যাচ্ছে ২০ জেলার বাস চলাচলের রুট। পদ্মার দক্ষিণ পাড়ে থাকা এসব জেলায় আগে রাজধানী থেকে বাস যেত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া হয়ে। ২৫ জুনের পর সেগুলো পার হবে পদ্মা সেতু। এজন্য চলছে নানা আয়োজন। ৬০ পরিবহন কোম্পানি প্রায় দেড় হাজার বাস সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এসব রুটে দূরত্ব কমবে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি। সেই সঙ্গে ফেরি পারের ঝক্কি না থাকায় এখনকার তুলনায় প্রায় ২ ঘণ্টা কম লাগবে গন্তব্যে পৌঁছাতে। এরই মধ্যে ১৩ রুটের ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে বিআরটিএ।
ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী সাকুরা পরিবহন (প্রা.) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির জানান, আমাদের কোম্পানিতে থাকা ৭০টি বাস মূলত বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। সেতু উদ্বোধনের পর পদ্মা পাড়ি দিয়েই চলাচল করবো আমরা। এতে সময় ও দূরত্ব দুটোই কমবে।
হানিফ পরিবহনের মালিক কফিল উদ্দিন জানান, গাবতলী থেকে বরিশাল-খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় দৈনিক দেড় হাজারের বেশি বাস চলাচল করে। অন্তত ৬০টি পরিবহন কোম্পানির বাস চলে এসব রুটে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এ বাসগুলো চলে যাবে সায়েদাবাদ টার্মিনালে।
বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক এ সাধারণ সম্পাদক বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে যুক্ত হবে আরও নতুন নতুন পরিবহন। এতদিন ফেরি পারাপারের ঝামেলার কারণে অনেক বিলাসবহুল বাস চলেনি এ রুটে। সেগুলোও এখন যুক্ত হবে। বিপুলসংখ্যক বাসের জন্য সায়েদাবাদ টার্মিনালের আয়তন বৃদ্ধি বা রাজধানীর বাইরে পদ্মা সেতুমুখী এলাকায় নতুন টার্মিনাল করা এখন সময়ের দাবি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরীয়তপুরের পদ্মা ট্রাভেলস, শরীয়তপুর পরিবহন ও গ্লোরি পরিবহন ঢাকার সঙ্গে বাস চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিটি কোম্পানি নতুন বাস আনার পরিকল্পনা করছে। তাদের মধ্যে পদ্মা ট্রাভেলস ও শরীয়তপুর পরিবহনের কয়েকটি বাস এরই মধ্যে ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া পর্যন্ত চলাচল করছে।
শরীয়তপুর পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু বেপারী জানান, সেতু চালু হলে অনেক পরিবহন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে। আমরা কিছু এসি গাড়ি সেতু উদ্বোধনের পরই পরই উদ্বোধন করবো।
পিছিয়ে নেই মাদারীপুরের বাস মালিকরাও। সার্বিক, সোনালি ও চন্দ্রা নামের পরিবহন নিয়মিত গাড়ি চলাচল করে ঢাকা-মাদারীপুর সড়কে। মাদারীপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান হাওলাদার জানিয়েছেন, নিয়মিত চলা তিনটি পরিবহনের বাইরে আমরা কতোটা লাভজনক পর্যায়ে আসতে পারবো সেটি ভাবছি এবং যাত্রীদের সর্বোচ্চ সুবিধা দিয়ে গাড়ি চালু করবো ইনশাল্লাহ।
ইতোমধ্যেই পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় সেতুর দুই প্রান্তে পদ্মা সেতু উত্তর থানা ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা নামে দুটি থানা স্থাপন করা হয়েছে। সেতুর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু উত্তর থানার আওতায় থাকবে মেদিনীমন্ডল ও কুমারভোগ দুটি ইউনিয়ন। জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার আওতায় থাকছে পূর্ব নাওডোবা ও পশ্চিম নাওডোবা ইউনিয়ন। থানা দুটি এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ছাড়াও সেতুর দুই প্রান্তে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার টোল আদায়ের নিরাপত্তায়ও কাজ করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২২
এইচএমএস/এমজেএফ