সাভার, (ঢাকা): ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ। যেটা এবার ঈদযাত্রায় প্রমাণ হয়েছে।
অল্প সময়ে আরামদায়কভাবে দক্ষিণের জেলাগুলোতে মানুষ যাত্রা করছেন। কোনো ক্লান্তি বা ভোগান্তি ছাড়া। তবে উত্তরে যাওয়ার জেলাগুলোর মানুষের চিত্র একদমই উল্টো। সেই বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ার পর থেকে যেভাবে বাসের ছাদে বা ট্রাকে অথবা ট্রেনে যেতো এখনও সেভাবেই যেতে হচ্ছে তাদের। এই কয়েক বছরে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় উন্নতি হলেও তাদের ওপর যেনো ভোগান্তির ছাপটা এখনও রয়েছে। এর মধ্যে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল প্রায় বন্ধ করে দেওয়াসহ উত্তরের জামালপুর-বগুড়া ফেরি চালু করে আবার বন্ধ করে দেওয়া সেই দুর্ভোগ হয়েছে দ্বিগুণ।
![](http://banglanews24.com/public/userfiles/images/AAT-07-2-2022-1/09-04-2022-AAT/11-04-2022-aat/13-04-2022-aat/14-04-2022-AAT/16-04-2022-AAT/18--4-2022-AAT/20-4-2022-AAT/21-04-2022-AAT/23-4-2022-AAT/23-04-2022-AAT-2/24-4-2022-AAT-3/25-04-2022-AAT/25-04-2022-aat2/30-04-2022-AAT/02-05-2022-aat/3-05-2022-aat/04-5-2022-aat/10-05-2022-aat/14-05-2022-aat/16-5-2022-aat/17-05-2022-AAT/19-05-2022-aat/21-05-2022-AAT/22-5-2022-aat/25-05-2022-aat/28-05-2022-AAT/29-05-2022-aat/31-05-2022-aat/5-6-2022-AAT/Sly/16-06-2022-aat/18-06-2022-AAT/22-06-2022-AAT/23-06-2022-AAT/28-06-2-2022-aat/30-06-2022-AAT/04-06-2022-AAT/5-07-2022-aat/06-7-2022-AAT-2/pic-4.jpg)
দেশের সবচেয়ে বড় নদী বন্দর সদর ঘাট থেকে স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মাছুম কামাল জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে রোববার (২৬ জুন)। এর প্রভাব পড়েছে নৌ-পথে চলাচলকারী যাত্রী ও লঞ্চ মালিকদের ওপর। নৌ পথে যাত্রী অনেক কমে গেছে। সেসঙ্গে যাত্রী না পাওয়া লঞ্চ ভাড়া কমিয়ে দিয়েছে। এবার যারা লঞ্চে করে ঈদযাত্রায় বাড়ি ফিরেছেন তারা স্বস্তিতে যেতে পেরেছেন।
বাংলানিউজের মানিকগঞ্জ করেসপন্ডেন্ট সাজেদুর রহমান রাসেল জানিয়েছেন, ঈদযাত্রায় প্রথম দুই দিন যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কম থাকায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুটের ফেরিগুলো অলস সময় পার করেছে। যাত্রীদের চাপ কম থাকায় সহজেই সাধারণ পণ্যবোঝাই ট্রাক পার হচ্ছে এই নৌপথে। এই দুই দিন দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ফেরিগুলো আসছে অধিকাংশই ফাঁকা ছিল। ঈদযাত্রার শেষ দিনে কিছুটা চাপ থাকলেও গত কয়েক বছরের তুলনাই তা কিছু না। এবার এই পথে শান্তির করেছে মানুষ।
মাদারীপুর করেসপন্ডেন্ট ইমতিয়াজ আহমেদ জানিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চলবাসীর জন্য এবারের ঈদযাত্রা একেবারেই ভিন্ন। ঘরে ফিরতে আর কোনো বাধা নেই। পদ্মা সেতু পার হয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরেছে হাজার হাজার মানুষ। ঈদ মৌসুমে চিরচেনা বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের সেই দৃশ্য আর নেই এই ঈদে। ঝুঁকি নিয়ে গাদাগাদি করে পাড়ি দিতে হয়নি না উত্তাল পদ্মা। ঠেলা-ধাক্কা দিয়ে নৌযানে নিজের জায়গা করে নেওয়ার প্রতিযোগিতাও নেই এবার। বাড়ি ফেরা নিয়ে বাড়তি টেনশনও করতে হচ্ছে না দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের।
নারায়ণগঞ্জের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মাহাফুজুর রহমান পারভেজ জানিয়েছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে ঈদযাত্রায় যানবাহনের চাপ থাকলেও ছিল না যানজট। এছাড়া যাত্রীরা কিছু সময়ের জন্য পরিবহন সংকটে পরলেও যে যেভাবে পারছে বাড়িতে যাচ্ছেন। যদিও দক্ষিণের মানুষ এই পথ দিয়ে কম যায়। তবুও কুয়াকাটার বেশ কয়েকটি পরিবহন এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে। আমরা এতক্ষণ দক্ষিণবঙ্গের ঈদের স্বস্তির যাত্রার খবর জানছিলাম। এবার উত্তরবঙ্গের অসহনীয় দুর্ভোগের বিষয়ে জানবো।
উত্তরের ট্রেনের যাত্রা নিয়ে কমলাপুর থেকে স্টাফ করেসপন্ডেন্ট হোসাইন মোহাম্মদ সাগর জানিয়েছেন, ট্রেনের অগ্রিম টিকিসহ ট্রেন পাওয়া পর্যন্ত যাত্রীরা কষ্ট করেছেন। এই টিকিটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছিল আবার ট্রেনের অপেক্ষায় বসে থেকেছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কেউ কেউ স্টেশনেই শুয়ে থেকে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। যাত্রীদের অভিযোগ রয়েছে অনেক। এবার ঈদের আগে-পরে কোনো ট্রেনেরই শিডিউল ঠিক ছিল না।
এদিকে দেশের উত্তবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ পথ সাভারে ঈদযাত্রার চিত্রে দেখা গেছে, সাভার থেকেই মানুষ দুর্ভোগ নিয়ে বাড়ি দিকে রওয়ানা হচ্ছিলেন। গত দুই দিন বাইপাইল এলাকায় দাঁড়ানোর মতো জায়গা ছিল না যাত্রীদের জন্য। সেই তুলনায় বাস ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে ট্রাক, পিকআপভ্যান ও বাসের ছাদে চড়ে গেছে। এছাড়া সাভারেই দীর্ঘ সময় ধরে যানজটের জন্য আটকে ছিল ঘরমুখো মানুষ। এখনও যাচ্ছে মানুষ তবে যানজট নেই। উত্তরবঙ্গের খবর নিয়ে গাজীপুরের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মো. রাজীব সরকার জানিয়েছেন, পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন কল-কারখানা একসঙ্গে ছুটি হওয়ায় ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়ে যায় সড়কে। মানুষের ঢল নামে মহাসড়কের বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ডগুলোতে। রেল স্টেশনগুলোতেও মানুষের উপচেপড়া ভিড়। স্রোতের মতো মানুষজন ছুটতে শুরু করেছিল গ্রামের দিকে।
এদিকে মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ অতিরিক্ত বাড়ায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা ময়মনসিংহ সড়কে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাড়ির দীর্ঘ লাইন। মহাসড়ক দুটিতে নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ ট্রাকসহ পিকআপভ্যানে যাচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা রাস্তায় বসে অথবা গাড়ি বসে রোদে পুড়ছে। তবুও কষ্ট করে মানুষ যাচ্ছে। এখনও সড়কে যানবাহনের চাপ রয়েছে।
টাঙ্গাইল করেসপন্ডেন্ট সুমন কুমার রায় জানিয়েছেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে শুক্রবার (৮ জুলাই) ভোর থেকে শুরু হওয়া যানজট ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। মনে হচ্ছে আজ সারা দিন এই যানজট থাকবে। ঘরমুখো আটকে থাকা এই মানুষগুলো বাড়ি গিয়ে ঠিকঠাক ঈদ করতে পারবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না।
তিনি গত দুই দিন থেকে সড়কের পরিস্থিতি নিয়ে খবর জানিয়েছেন। তিনি আজ জানিয়েছেন, হাজার হাজার নারী ও শিশুরা ট্রাকের ওপর প্রচণ্ড রোদে পুড়ছে। আর রাত থেকে গাড়ি থেমে থাকায় রাস্তার পাশেই প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিচ্ছেন অনেকেই। এই কষ্ট বলার অপেক্ষা রাখে না। এবার ঈদেরই এত ভোগান্তি ও কষ্ট করে উত্তরবঙ্গে যাচ্ছে মানুষ। সিরাজগঞ্জের করেসপন্ডেন্ট স্বপন চন্দ্র দাস জানিয়েছেন, তীব্র যানজটে নাকাল হয়ে পড়েছে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে যাওয়া উত্তরের যাত্রীরা। ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক পর্যন্ত বরাবরই দুর্ভোগের কোনো অন্ত ছিল না যাত্রীদের। মাঝেমধ্যে গাড়ি চালাচলে কিছুটা ধীরগতি থাকলেও বেশিরভাগ সময়েই গাড়ির চাকা ঘুরছেই না। এ কারণে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের চরম দুর্ভোগ দেখা গেছে। বিশেষ করে খোলা ট্রাকে চেপে আসা নিম্নআয়ের মানুষগুলোর যেন ভোগান্তির অন্ত নেই।
তিনি কয়েকজন ঘরমুখো মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত আসতে তাদের ১৪ ঘণ্টা সময় লেগেছে। প্রচণ্ড রোদের উত্তাপ মাথায় করে তারা এ পর্যন্ত এসেছেন। রাতে রোদ না থাকলেও গরমে তাদের অবস্থা আরও বেগতিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনো সেতুর দুই পাড়ে যানজট রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২২
এসএফ/এএটি