ঢাকা, সোমবার, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৯ জুলাই ২০২৪, ২২ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

সংকট কাটাতে জনগণকে সতর্ক হওয়ায় জোর দিচ্ছে সরকার

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২২
সংকট কাটাতে জনগণকে সতর্ক হওয়ায় জোর দিচ্ছে সরকার

ঢাকা: জ্বালানিসহ জিনিসপত্রের দাম বাড়ার ফলে  বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশে যাতে এর বড় ধরনের কোনো প্রভাব না পড়ে, সেজন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে সরকার। তবে চলমান এই বৈশ্বিক সংকট কাটিয়ে উঠতে এসব পদক্ষেপের পাশাপাশি জনগণকে সতর্ক হয়ে চলার উপরও জোর দিচ্ছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।

করোনা ভাইরাস মহামারি পরবর্তী পরিস্থিতি এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় যে সংকট তৈরি হয়েছে, বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বলছে বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে চলমান বৈশ্বিক সংকটের প্রভাবে অতিরিক্ত চাপ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয় গত ১৬ জুলাই আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, যেসব দেশের উচ্চমাত্রার ঋণ রয়েছে এবং যাদের নীতিমালার পরিসর সীমিত- তারাই অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়তে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলোও পরপর চার মাস ধরে টেকসই মূলধনের বহিঃপ্রবাহের সম্মুখীন হচ্ছে। এটি তাদের উন্নত অর্থনীতির স্বপ্নকে ঝুঁকির সম্মুখীন করেছে।

এর কারণ হিসেবে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, মুনাফার হার বৃদ্ধি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন, উচ্চমাত্রার ঋণ ও বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়াকে দেখা হচ্ছে। বিষয়গুলো এশীয় দেশগুলোর অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, চলতি বছরের মে মাসে দেশটির মূল্যস্ফীতি গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। বাংলাদেশকে সরকারি ব্যয়ের ব্যাপারে আরও সতর্ক হতে হবে। কারণ,  বিষয়টিকে পুনঃ অগ্রাধিকার দিতে হবে। ভোক্তা কার্যক্রমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করাটাও জরুরি।

এদিকে সরকারের সংশ্লিষ্টরাসহ বিভিন্ন দিক থেকে বলা হচ্ছে, রফতানি ও রেমিটেন্স আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় গত কয়েক মাসে বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দেশে রিজার্ভ কমে এসেছে। গত ২৭ জুলাই এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, করোনাকালীন সময় আমদানি বন্ধ ছিল। এরপর আমদানি করতে হয়েছে, আমদানি এবং উন্নয়নমূলক কাজ করতে গিয়ে আমাদের রিজার্ভ খরচ করতে হয়েছে। করোনার ভ্যাকসিনসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানিতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়েছে।

তবে এটাকে এখনই সংকট বলা যায় না বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে আগামী ৯ মাসের খাবার কেনা যাবে।

এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার পাশাপাশি দেশের খোলা বাজারে ডলারের দাম এরই মধ্যে ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে ডিজেলসহ জ্বালানি তেল, এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি বন্ধ রয়েছে। ফলে ডিজেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে পর্যায়ক্রমে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় তখন এই সংকট কেটে যাবে বলে সরকারের সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। সার এবং জ্বালানিতে সরকার বরাবরই ভর্তুকি দিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে সার ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে বিভিন্নভাবে ভাবতে হচ্ছে বলে নীতিনির্ধারকরা জানান। এ কারণে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে সরকারের পদক্ষেপের পাশাপাশি দেশের জনগণকেও সাশ্রয়ী হওয়ার কথা বলছেন তারা।

সরকারেরর নীতিনির্ধারকরা জানান, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ কতোদিন চলে তার ওপর বর্তমান পরিস্থিতি নির্ভর করছে ৷ যুদ্ধ বন্ধ হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কিন্তু চলমান এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে জনগণকেও নিজ নিজ অবস্থান থেকে ব্যয় কমিয়ে এবং অপচয় না করে, সাশ্রয়ী হয়ে সতর্কভাবে চলার বিকল্প নেই।

গত ২৭ জুলাইয়ের ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীও সতর্ক ও সাশ্রয়ী হওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন ৷ তিনি বলেন, কিন্তু আমাদেরকে আবার সেই পদক্ষেপ নিতে হবে যে খাদ্যশস্য যেন কিনতে না হয়, আমরা নিজেরাই যাতে উৎপাদন করতে পারি। আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে ।

এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকার সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সার-তেলের দাম বেশি, কিছু করার নেই। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ কখন বন্ধ হবে, তার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে ৷ যুদ্ধ তো বন্ধ হবেই, সারা জীবন তো আর যুদ্ধ চলতে পারবে না। তবে এই সময়টা আমাদের কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে, সাবধানে চলতে হবে।

তিনি বলেন, সুইজারল্যান্ডের মাথাপিছু আয় ৪০ হাজার ডলার, তাদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ সময় আমাদের আরও সতর্ক হয়ে চলতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২২
এসকে/এমএমজেড 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।