ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ জুলাই ২০২৪, ০১ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

থমথমে রামেক হাসপাতাল

শিক্ষার্থীদের ভাঙচুর, ধর্মঘটে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২২
শিক্ষার্থীদের ভাঙচুর, ধর্মঘটে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা

রাজশাহী: চিকিৎসায় অবহেলার কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগে ভাঙচুর ও বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে উঠেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল ক্যাম্পাস।  

বর্তমানে (বুধবার, ১৯ অক্টোবর দিনগত রাত ১২টা) রাবির শিক্ষার্থীরা রামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে পুরো হাসপাতাল এলাকা। আর ভেতরে অবস্থান নিয়েছেন রামেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও। তারা ভেতরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন।

মাঝখানে অবস্থান নিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে কোনো পক্ষই শান্ত না হওয়ায় রামেক হাসপাতালে বর্তমানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।  

শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগ তুলে রাবির শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে ভাঙচুর চালান। এরপর বিক্ষোভ শুরু করেন। এদিকে হাসপাতালের ভেতর ভাঙচুর ও চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল স্টাফদের ওপর হামলার অভিযোগে দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবি, তাদের চিকিৎসকদের ওপর হামলা করেছেন রাবি শিক্ষার্থীরা।  

তারা দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে হামলা ভাঙচুরে প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেন তারা। এ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে। বর্তমানে হাসপাতালের ভেতরে ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং বাইরে রাবির শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।  

খবর পেয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিক্ষুব্ধরা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।

এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানীও শিক্ষার্থী এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি সিসিটিভি ফুটেজ দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কোনো পক্ষই তা মানতে রাজি হয়নি। ফলে সেখানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।  

এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের চারতলার ছাদ থেকে পড়ে এক শিক্ষার্থী আহত হন। পরে রামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে ওই শিক্ষার্থী ছাদ থেকে পড়ে গেলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।  

নিহত শিক্ষার্থীর নাম শাহরিয়ার (২৬)। হবিবুর রহমান হলের ৩৫৪ নং কক্ষের আবাসিক ছাত্র শাহরিয়ার মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।  

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক তারেক নূর জানান, কীভাবে শাহরিয়ার ছাদ থেকে পড়েছেন, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন,বুধবার রাত ৮টার দিকে শাহরিয়ার ছাদ থেকে পড়ে গেলে সহপাঠীরা তাকে প্রথমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেয়। সেখান থেকে তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করার পর ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নেওয়া হয়। পরে সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে ছাত্রের মৃত্যুর কথা ঘোষণার পর রামেক হাসপাতালে ভাঙচুর শুরু করেন বিক্ষুব্ধ রাবি শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা হাসপাতালের ৮ নং ওয়ার্ডের দুই চিকিৎসককে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এছাড়া টেবিল চেয়ারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন।

রাজশাহীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম জানান, চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা হামলা চালিয়েছেন। এসময় রামেক হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। শিক্ষার্থীরা ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দুই চিকিৎসককে অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক নেতারা সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। এ পরিস্থিতিতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২২

এসএস/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।