ঢাকা, রবিবার, ১৮ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অসময়ে ভাঙন, পদ্মার চরাঞ্চলে সর্বস্বান্ত মানুষের হাহাকার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২২
অসময়ে ভাঙন, পদ্মার চরাঞ্চলে সর্বস্বান্ত মানুষের হাহাকার

রাজশাহী: রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় পদ্মা নদীর ভাঙন আগ্রাসী রূপ ধারণ করছে। অসময়ে পদ্মার তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন চরাঞ্চলের মানুষ।

ঠিকানা হারানো মানুষগুলো ঘরবাড়ি গুটিয়ে ছুটছেন আশ্রয়ের সন্ধানে। এলাকায় বসতি স্থাপনের জায়গা না পেয়ে কেউ কেউ পার্শ্ববর্তী উপজেলায় চলে গেছেন। আবার কেউ এলাকায় বসতি স্থাপনের জায়গা খুঁজছেন।

ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ রিক্ত ও নিঃস্ব হয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কৃষক, জেলে এবং পেশাজীবী মানুষরা তার পেশা ও পৈত্রিক ভিটেমাটি হারিয়ে হচ্ছেন সর্বস্বান্ত। এক সপ্তাহে ভাঙনে গৃহহারা হয়েছে ৩১টি পরিবার। এর মধ্যে শত শত বিঘা ফসলের জমি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে ২১টি বৈদ্যুতিক খুঁটি।

স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, গত তিন দশকে ভাঙনের কবলে পড়ে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি, বসতভিটা, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও কবরস্থান। গত এক সপ্তাহে হঠাৎ করে পদ্মার চরে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েই চলেছে।

উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের তিন নম্বর কালীদাসখালী চরে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৩১টি পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়েছে। বাড়িঘর, গাছপালা, নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তারা ইতোমধ্যেই অন্যত্র সরে গেছেন। ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে প্রায় ৪৫টি পরিবার। ভাঙনের ভয়ে তারা বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের চরকালিদাখালী চরের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, এ ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা এক হাজার ২৬২ জন। পরিবার ছিল চার শতাধিক। এরমধ্যে নদী ভাঙনের কারণে ইতোমধ্যে দুই শতাধিক পরিবার বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে।

অসময়ে নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন কালিদাসখালী গ্রামের আসফার বেগমের পরিবার। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এক সপ্তাহ আগেও সব ঠিক ছিল। ভাঙনের আগে আমার স্বামী কাজের সন্ধানে ঢাকায় যান।

এখন অসময়ের ভাঙনের ফল ছেলে-মেয়ে নিয়ে বড্ড বিপদে পড়েছি। এলাকায় বসতি স্থাপনের জন্য জায়গা খুঁজছি। কিন্তু পাচ্ছি না। সরিয়ে আনা বাড়ির টিনের চালা তুলে আপাতত বসবাস করছি।

কালিদাসখালীর বাসিন্দা সুব্রত রায় বলেন, তার ৩০ বিঘা জমি ছিল। সব জমিগুলো পদ্মায় চলে গেছে। বর্তমানে বাড়ি করার মতো জমি নেই। সাত কাঠা জমি বছরে পাঁচ হাজার ২০০ টাকায় ভাড়া নিয়ে ঘর করে বসবাস করছি। সেই বাড়িও ভাঙনের মুখে পড়েছে। জমি অন্যত্র ভাড়াও পাচ্ছি না। চার সদস্যের পরিবার নিয়ে নিরুপায় হয়ে পড়েছেন।

স্থানীয় মুদির দোকানি সিরাজুল ইসলাম বলেন, পদ্মার ভাঙনের মুখে রয়েছি। এ বছরে দু’বার দোকান ভাঙনের কারণে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আবারও ভাঙনের মুখে পড়েছি। দোকান সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছি।

চকরাজাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ডি এম মনোয়ার হোসেন বাবলু দেওয়ান বলেন, এক সপ্তাহ আগে অসময়ে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

বাঘা সাব জোন পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের ডি জি এম সুধির কুমার বলেন, এক সপ্তাহে ২১টি বৈদ্যুতিক খুঁটি উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে যারা অন্য স্থানে বাড়ি করছে তাদের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আখতার বলেন, অসময়ে পদ্মার ভাঙনের ফলে অনেক পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২২
এসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।