টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে পালিত হয়েছে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর পদতলে কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র জমা দেওয়ার ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস।
আর তাদের যোগদান করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। সেই ক্ষোভ প্রকাশে জেলা আওয়ামী লীগের কোনো নেতা ওই অনুষ্ঠানে যাননি।
অনুষ্ঠানে এসে মুক্তিযুদ্ধে কাদের সিদ্দিকীর বিশেষ অবদানের জন্য প্রশংসা করেন মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও কেন্দ্রীয় নেতা মৃণাল কান্তি দাস। আগামীতে তাকে নিয়ে জোট করাও ইঙ্গিত ছিল তাদের বক্তব্যে।
অপরদিকে মন্ত্রী ও আ.লীগ নেতার উপস্থিতিতেই নিজের বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং জেলার সংসদ সদস্যদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন কাদের সিদ্দিকী।
এ নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও কয়েকজন সংসদ সদস্য।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, গত ২৩ ডিসেম্বর কাদের সিদ্দিকী সপরিবারে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারপর থেকেই রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয় তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে যাচ্ছেন। ওই সাক্ষাতের পর মঙ্গলবারই ছিল কাদের সিদ্দিকীর টাঙ্গাইলে প্রথম কোনো সভা।
ওই অনুষ্ঠানে বক্তৃতার এক পর্যায়ে কাদের সিদ্দিকী জেলা আ.লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেন।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, অনুষ্ঠানে ফজলুর রহমান খানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি অনুষ্ঠানে আসতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এজন্য তাকে (ফজলুর রহমান খান ফারুক) আর শ্রদ্ধা করেন না।
ফজলুর রহমান খান ফারুককে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য একুশে পদক দেওয়া সঠিক হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এছাড়াও জেলার সংসদ সদস্যদের অযোগ্য বলে উল্লেখ করেন।
এ প্রসঙ্গে ফজলুর রহমান খান ফারুকের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান ওরফে সোহেল হাজারী বলেন, আওয়ামী লীগের সতীর্থ হলে কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ও দলের নেতাদের সম্পর্কে এমন মন্তব্য করতে পারতেন না। দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন দিয়েছেন। তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করা মানে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করা।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বক্তৃতাকালে বলেন, কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সম্পর্কে যে মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে তা আমার জন্য বিব্রতকর। আমরা এই অনুষ্ঠানকে জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে দেখতে চাই। সম্পর্কের কোন অবনতি থাকলে তা জাতীয়ভাবে নিতে চাই না।
জেলার নেতৃবৃন্দকে না জানিয়ে কাদের সিদ্দিকীর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতার যোগদান, কাদের সিদ্দিকীর প্রশংসা, অপরদিকে কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র জামিলুর রহমান বলেন, অনেকদিন পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর গত ডিসেম্বরে সাক্ষাৎ হয়েছে। আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম। কিন্তু মন্ত্রীর উপস্থিতিতে দলীয় সংসদ সদস্য ও নেতাদের সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে আমরা হতাশ হয়েছি।
এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) বলেন, কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে জোট হওয়ার বিষয়ে কেন্দ্র থেকে কোন নির্দেশনা পাননি। বঙ্গবন্ধুর কাছে কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র জমাদানের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে একজন মন্ত্রী ও একজন কেন্দ্রীয় নেতা কিভাবে এলেন সে সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই। আমরা দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনার বাইরে নেই। তবে জেলায় দলের শৃঙ্খলা যাতে বজায় থাকে সে বিষয়টিও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ লক্ষ্য রাখবেন, সেই প্রত্যাশা করি।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৩
এসএএইচ