সিলেট: সিলেট সিটি করেপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির আরিফুল হকও সরকারের মদদপুষ্ট প্রার্থী হতে পারেন, এতদিন এমন গুঞ্জন ছিলো। তবে সেই গুঞ্জনকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন আরিফ।
শনিবার (২০ মে) বিকেলে নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এমন মন্তব্য করেন।
বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে গত জানুয়ারিতে ব্রাক্ষণবাড়িয়া-২ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন উকিল আব্দুস সাত্তার। ওই নির্বাচন ‘উকিল আব্দুস সাত্তার মডেল’ হিসেবে পরিচিতি পায় রাজনীতিতে।
এমন গুঞ্জনকে উড়িয়ে আরিফুল হক বলেন, যারা মনে মনে আমাকে উকিল আব্দুস সাত্তার বানানোর চেষ্টা করেছিলেন, তারা আজ হতাশ হয়েছেন।
আরিফুল হক কখনো উকিল আব্দুস সাত্তার হবে না। আমি আপনাদের আরিফ, বিএনপির আরিফ। তাই নেত্রী আমার খালেদা জিয়া, নেতা তারেক রহমান ও আমার মা ও মুর্শিদের নির্দেশে আমি এ নির্বাচনে প্রার্থী হবো না। তাদের আদেশই আমার জন্য শিরোধার্য।
আসন্ন সিসিক নির্বাচনকে প্রহসনের উল্লেখ করে মেয়র বলেন, এ মুহূর্তে সিলেট তথা সারাদেশেই নির্বাচনী কোনো পরিবেশ নেই। আপত্তি সত্ত্বেও সিলেটে ইভিএমে ভোটগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। অথচ সিলেটের মানুষ ইভিএমের সঙ্গে একেবারে অপরিচিত। এখানে ইভিএম নিয়ে আসাই ভোট ডাকাতির ইঙ্গিত।
তিনি বলেন, আপনাদের সামনে আজ আমি খোলামেলা কথা বলতে চাই, কারণ গত কয়েক সপ্তাহ থেকে আমার ওপর যে মানসিক চাপ যাচ্ছে। তা আমি ছাড়া আর কেউ উপলদ্ধি করতে পারবে না। আমার নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে। আমি বিএনপির সিদ্ধান্তের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আমি প্রহসনের নির্বাচনে প্রার্থী হবো না।
নাগরিক সভায় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, বিএনপি আমার অস্থিমজ্জায়। ছাত্রজীবনে জিয়াউর রহমানের আর্দশে অনুপ্রাণিত হয়ে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম। আজীবন বিএনপিই হবে আমার শেষ ঠিকানা।
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, বর্তমান নির্বাচনও কমিশন সুষ্ঠু ভোট চায় না। তারা ডিজিটাল মেশিনের মাধ্যমে ডিজিটাল ভোট ডাকাতি চায়। নির্বাচনে কারচুপির নীল নকশার অংশ হিসেবে পুলিশ প্রশাসনে রদবদল করা হয়েছে। এবার একটি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।
এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেয়র আরিফ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে নগরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আমার বাসায় গিয়ে আমাকে প্রার্থী হওয়ার অনুরোধ করছেন। তাদের ‘এতিম অবস্থায়’ ফেলে না যাওয়ার অনুরোধ করছেন। আমি তাদের সবার কাছে, এ নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমাকে ক্ষমা করে দিন। তবে মেয়র না থাকলেও এ নগরবাসীর যেকোনো প্রয়োজনে, সব ভালো কাজে এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আমি সবসময়ই থাকবো।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনেও নানা ভয়, প্রতিবন্ধকতা ও কারচুপি উপেক্ষা করে এ নগরবাসী আমাকে বিজয়ী করে এনেছেন। তারা ফলাফল ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র ছাড়েননি। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবার আপনারা চাইলেও আমাকে বিজয়ী করতে পারবেন না। কারণ এবারের ভোট হবে ইভিএমে। এবার আপনারা একজায়গায় ভোট দেবেন, কিন্তু তা অন্য জায়গায় গিয়ে জমা হবে। যেখানে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো ইভিএমকে না বলে দিয়েছে, বাংলাদেশের আপামর জনগণ যেখানে ইভিএমকে না করছে, সেই জায়গায় সিলেটে তারা ইভিএম নিয়ে এসেছে। এটি কিসের ঈঙ্গিত? এটা আরেকটি ভোট ডাকাতির ইঙ্গিত।
তিনি নগরবাসী ও নেতাকর্মীকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই নির্বাচন আসলে নির্বাচন নয়, এটি প্রহসন। তাই আমার দলীয় নেতাকর্মীসহ সকল নাগরিককে এই নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানাই। দয়া করে আপনারা কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না।
তিনি বলেন, এ সিলেট রাজনৈতিক সম্প্রীতি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। সেই সম্প্রীতি সৌহার্দের ধারাবাহিকতায় সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমান সিলেটের তৎকালীন মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে অকুণ্ঠ করেছেন। একইভাবে আমি দায়িত্ব পালনকালে সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম আবুল মাল আব্দুল মুহিত এবং বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি আন্তরিক সহযোগিতা করেছেন।
উন্নয়ন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমি যা করেছি, তা অনেকে অপরিকল্পিত উন্নয়ন বলছেন, তা নিতান্তই হাস্যকর। যেখানে সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী আমার কাজের প্রশংসা করেছেন। শুধু তাই নয়, কর্মসম্পাদন চুক্তিতে টানা কয়েকবার সিলেট সিটি করপোরেশন কাজের মাধ্যমে প্রথম হওয়ার বিরল সম্মান অর্জন করেছে। সুতরাং ঢালাওভাবে এসব মূল্যহীন বক্তব্য যারা দিচ্ছেন, তারা আয়নায় নিজেদের মুখ একবার দেখে নেওয়ার অনুরোধ জানান এবং বাস্তবেই তাদের জ্ঞানের পরিধি কতটুকু, তার বিচারের ভার নগরবাসীর উপরই ছেড়ে দেন তিনি। তিনি কতটুকু কী করেছেন, তা এই শহরের প্রতিটি অলি গলির মানুষ ভালোই জানেন।
শনিবার দুপুরে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নিজ বাসা নগরের কুমারপাড়া থেকে হেঁটে হযরত শাহজালাল (র.) মাজারের উদ্দেশে রওনা দেন। সেখানে মাজার জিয়ারত শেষে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের নিয়ে মিছিল সহকারে নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে প্রবেশ করেন।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৩ মে এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন। আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২৩
এনইউ/জেএইচ