ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন দেশের ৫৮২ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরীর স্বাক্ষরিত এক যুক্ত বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে গত ৯ আগস্ট থেকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎিসাধীন আছেন। তিনি বর্তমানে লিভার সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছেন। এ কারণে শরীরের অন্যান্য প্যারামিটার সঠিক মাত্রায় নেই। এছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, লিভারসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসা কার্যক্রম তদারকি করছেন। লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিনী ডা. জোবায়েদা রহমান সব সময় চিকিৎসদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং মনিটরিং করছেন।
এরই মধ্যে মেডিকেল বোর্ড বলেছেন, খালেদা জিয়ার যেসব জটিলতা রয়েছে তার চিকিৎসা বাংলাদেশে সম্ভব নয়। তাকে বিদেশে লিভার ট্রান্সপারেন্টের সুবিধা সম্বলিত আধুনিক মাল্টিপারপাস অ্যাডভান্স সেন্টারে দ্রুত পাঠানো জরুরি।
এ প্রসঙ্গ তুলে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, ‘চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণের মতো অবস্থানে চলে গেছেন। দেশে তাকে চিকিৎসা দেওয়ার মতো আর কিছু বাকি নেই। খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে বিদেশে অ্যাডভান্স সেন্টারে নিয়ে ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। তাই আমরা সরকারকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে মানবিক দিক বিবেচনা করে তাঁকে অবিলম্বে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানাই। ’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বয়স এখন ৭৮ বছর। প্রবীণ বয়সেও তিনি ফরমায়েশি রায়ে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। অবশ্য সরকারের বিশেষ অনুমতিতে তিনি এখন নিজ বাসভবনে বন্দি অবস্থান করছেন। নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। দীর্ঘ চার বছর তার যথাযথ কোনো চিকিৎসা হয়নি। কারাগারে অমানবিক পরিবেশেও তিনি অনেক নতুন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। হার্টের সমস্যা, লিভারের সমস্যা, কিডনি ও চোখের সমস্যা ছাড়াও পুরনো আর্থ্রাইটিস এবং কভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়া ও কোভিড পরবর্তী জটিলতায় তার শারীরিক অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ’
বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের প্রধান সাংবাদিকদের কাছে তার অসুস্থতার যে বিবরণ দিয়েছেন, তা খুবই উদ্বেগজনক। আমরা মনে করি, দেশের একজন শীর্ষ রাজনীতিক, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বয়োজেষ্ঠ নাগরিক, একজন নারী হিসেবে উপরন্তু একজন জেলবন্দি ব্যক্তির যথাযথ সুচিকিৎসা পাওয়া ন্যূনতম মানবাধিকারের অংশ। তার মৌলিক অধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জাতি হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমরা তাই আদালতের মাধ্যমে তাকে স্থায়ী জামিনে মুক্তি দিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। ’
বিশিষ্ট নাগরিকরা খালেদা জিয়ার তিনবার সরকারপ্রধান থাকাকালে দেশের নানা উন্নয়ন করেছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘তাই আমরা আশা করি—এমন একজন দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদের সামগ্রিক অবদান এবং তার বার্ধক্যের এ কঠিন সময়ের কথা বিবেচনা করে সরকার রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ প্রদর্শন করবে। তিনি যাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারেন, তার ব্যবস্থা করলে সরকারের এ পদক্ষেপকে দেশবাসী ইতিবাচক হিসেবেই দেখবে। ’
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্য রয়েছেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, দৈনিক নয়াদিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিশিষ্ট চিকিৎসক প্রফেসর ডা. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক প্রফেসর ড. তাসমেরি এস এ ইসলাম, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আবদুল লতিফ মাসুম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৩
টিএ/এমজেএফ