ঢাকা, শনিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি আসনের বিপরীতে ১৪ নেত্রীর দৌড়ঝাঁপ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪
চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি আসনের বিপরীতে ১৪ নেত্রীর দৌড়ঝাঁপ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত একটি আসনের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ১৪ জন নেত্রী দলীয় মনোনয়নপত্র ফরম দাখিলের পর শুরু করেছেন দৌড়ঝাঁপ। অধিকাংশ নেত্রীরাই ঢাকায় অবস্থান করছেন।

শেষ মুহূর্তে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য।  

জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলগুলোতে নেই কোনো আগ্রহ। বিশেষ করে সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সব প্রার্থী জামানত হারানোয় অনেকটা নিশ্চুপ তাদের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে গোমস্তাপুর ও সদরের প্রার্থী আবারও এলাকা ছেড়ে ঢাকায় অবস্থান করায় এ নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে জাতীয় পার্টির মহিলা দলের কোনো কার্যক্রম না থাকায় এবং উল্লেখযোগ্য কোনো নারী নেত্রী না থাকায় অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে মহিলা আওয়ামী লীগ। তবে সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য প্রার্থীদের মধ্যে কে বিজয়ের হাসি হাসবে তা জানতে জেলাবাসীকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

জানা গেছে, যে-সব নেত্রী আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম দাখিল করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সদ্য সাবেক সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ ফেরদৌসী ইসলাম জেসি, শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিউলি বেগম, সাবেক প্রধান বিচারপতি মাইনুর রেজা চৌধুরীর ভাতিজি জারা জাবিন মাহবুব, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাকিনা খাতুন পারুল, সাধারণ সম্পাদক হালিমা বেগম, জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইয়াসমিন সুলতানা রুমা, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রয়াত মঈনুদ্দীন মণ্ডলের সহধর্মিণী ময়না পারভীন, আদিবাসী নেত্রী রঞ্জনা বর্মন, সাবেক প্রয়াত সংসদ সদস্য ডা. মইন উদ্দিন আহম্মেদের মেয়ে ও জঙ্গি হামলায় নিহত লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদের সহধর্মিণী এবং আদিনা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক  সুরাইয়া সুলতানা, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবিহা শবনম কেয়া, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য  শওকত আরা বেগম, শামীমা আখতার পারুল, ফারহানা হক ও মোসা. কুইন আরা খাতুন।

দলটির একটি সূত্র জানায়, লেখাপড়ার সময় সুরাইয়া সুলতানা ছাত্রলীগের প্রত্যক্ষ রাজনীতি করলেও বিয়ের পর দীর্ঘদিন থেকেই জেলা বাইরে। জারা জাবিন মাহবুবও স্থায়ীভাবে ঢাকায় থাকেন। বাকিদের সবাই নিজ নিজ এলাকায় থাকেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাশী এসব নেত্রীদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন ছাত্রীকালীন সময়ে ছাত্রলীগ করতেন। বাকিরা পারিবারিক সূত্রে বা সংসদ সদস্যদের অনগত হওয়ায় আলোচনায় এসেছেন। তবে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর ২-৪ জন বাদে সবাই এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য তদবির করছেন।

জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইয়াসমিন সুলতানা রুমা জানান, তিনি ও তার বাবা দলের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনেক কাজ করেছেন। তাই দল তাকে মূল্যায়ন করবে এমনটা প্রত্যাশা করেন তিনি।

অন্যদিকে আদিনা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক সুরাইয়া সুলতানা দাবি করেন, তার বাবা ও স্বামী দেশের জন্য আমৃত্যু কাজ করেছেন। বিশেষ করে স্বামী দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে জঙ্গি হামলায় সিলেটে প্রাণ দিয়েছেন। তাছাড়াও তিনি নিজেও দলের জন্য একসময় কাজ করার পাশাপাশি নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাই দল তাকেই মূল্যায়ন করবে বলে বিশ্বাস তার।

এদিকে তৃণমূল মহিলালীগের এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নেতা-নেত্রীরা পদ বা নির্বাচন নিয়ে কোন্দল করে। যার প্রভাব পড়ে তৃণমূলে। তাই আমরা কারো আক্রোশের শিকার হতে চাইনা। নেত্রী যাকে এমপি করবেন আমরা তাকেই নিয়ে কাজ করব।

শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় মহিলালীগের সদস্য শাহিদা খাতুন রেখা বলেন, অতীতে যারা প্রত্যক্ষভাবে দল করেছেন এবং এলাকায় স্থায়ীভাবে থাকেন তাদের কাউকে সংসদ সদস্য বানানো হোক। এ বছর অনেকেই নতুন মুখ মনোনয়নপত্র তুললেও ত্যাগীদের মূল্যায়ন হবে।

জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হালিমা বেগম জানান, যেহেতু এটা ইলেকশন নয় সিলেকশন তাই আমাদের নেত্রী যাকে এমপি হিসেবে ঘোষণা দেবেন আমরা তাকেই মেনে নেব এবং আমি দলের পক্ষ থেকে তাকে প্রথম অভিনন্দন জানিয়ে এলাকা ও দেশের স্বার্থে এক হয়ে কাজ করব। একটি আসনের জন্য এতগুলো মনোনয়নপত্র প্রত্যাশার বিষয়টি তিনি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নয় বরং প্রতিযোগিতা বলে মনে করেন।

অন্যদিকে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাকিনা খাতুন পারুল দলে কোনো কোন্দল বা কলহ নেই দাবি করে বলেন, সম্মান দেওয়ার মালিক আল্লাহ। আর নেত্রী শেখ হাসিনা উসিলা। তাই যিনিই সংসদ সদস্য হোন আমরা মেনে নেব। এমনকি যদি এ আসনটি নেত্রী জাতীয় পার্টিকেও ছেড়ে দিতে বলেন, আমরা একবাক্যে ছেড়ে দেব।

জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৫০টি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের পক্ষ থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য নির্বাচনের ক্ষমতা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন। ফলে আওয়ামী লীগ নিজ দলের এবং স্বতন্ত্রদের মিলে মোট ৪৮ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য দিতে পারবে। বাকি দুটি আসনে নারী সংসদ সদস্য দিতে পারবে জাতীয় পার্টি (জাপা)।

বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।