ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

একাত্তর

স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন চৌধুরী পরিবারের ১০ জন

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২৪
স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন চৌধুরী পরিবারের ১০ জন

সিরাজগঞ্জ: হাজার বছর ধরে শোষণ-বঞ্চনার শিকার বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে নিজেদের মুক্তির জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। যুগের পর যুগ বিদেশি বেনিয়াদের হাতে শৃঙ্খলিত বাংলাকে মুক্ত করার জন্য কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, জনতা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে।

 

মাতৃভূমির মুক্তির জন্য মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে বাবা-ছেলে, ভাই, বন্ধু-স্বজন নিয়ে অসংখ্য মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কোথাও কোথাও একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি সরাসরি যুদ্ধে যোগ দেন।  

তেমনই সিরাজগঞ্জের চৌধুরী পরিবার থেকে ১০ জন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা বরেণ্য সাংবাদিক প্রয়াত আমিনুল ইসলাম চৌধুরীর অনুপ্রেরণায় পরিবারের ১০ জন সদস্য ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন।  

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের বাহুকা গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবার তালুকদার গোষ্ঠী। এ পরিবারটি ব্রিটিশ আমল থেকে শিক্ষা-সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে এগিয়ে। ইংরেজ শাসনামলে পরিবারের এক সদস্য চৌধুরী খেতাবে ভূষিত হন। পরে পুরো সিরাজগঞ্জে তারা চৌধুরী পরিবার হিসেবে সমাদৃত হন।

আজিজুল ইসলাম চৌধুরী বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত রতনকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তার ছেলে আমিনুল ইসলাম চৌধুরী সিরাজগঞ্জ কলেজছাত্র সংসদের ছাত্রলীগের প্রথম জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৬৮-৬৯ সালে গঠিত নিউক্লিয়াসের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি সিরাজগঞ্জে নেতৃত্ব দেন এবং সরাসরি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। ভাটপিয়ারী যুদ্ধে তার নিতম্বের ডান পাশে গুলি লাগে। আমিনুল চৌধুরীর অনুপ্রেরণাতেই তার পরিবারের ১০ জন সদস্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন তিনি।  

আমিনুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট ভাই আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী জগলু মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী বর্তমানে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।  

এ পরিবার থেকে মুক্তিযুদ্ধে আরও অংশ নিয়েছিলেন- আমিনুল ইসলাম চৌধুরীর চাচাতো ভাই শহিদুল ইসলাম চৌধুরী দুলাল, চাচাতো ভাই প্রয়াত বদিউজ্জামান চৌধুরীর দুই ছেলে খলিলুর রহমান চৌধুরী ও খালেকুজ্জামান চৌধুরী, চাচাতো ভাই মরহুম ছবদের আলী তালুকদারের ছেলে আলতাফ হোসেন তালুকদার, চাচাতো ভাই আব্দুল জব্বার তালুকদারের ছেলে নজরুল ইসলাম ঠান্ডু, চাচাতো ভাই ফজলার রহমান তালুকদারের ছেলে গোলাম মোস্তফা মিন্টু, চাচাতো ভাই শামসুল হুদা তালুকদারের ছেলে ইকবাল হোসেন হেলাল এবং চাচাতো ভাই আব্দুল খালেক তালুকদারের ছেলে লিয়াকত আলী তালুকদার।

তাদের মধ্যে আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, গোলাম মোস্তফা মিন্টু নজরুল ইসলাম ঠান্ডু ও লিয়াকত আলী তালুকদার মারা গেছেন। বাকি সবাই কর্মজীবন থেকে অবসর নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করছেন।  

চৌধুরী পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্য খাজা বিপুল চৌধুরী বলেন, আমাদের পরিবারের ১০ জনের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গর্বের। মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য জীবনের মায়া ত্যাগ করে তারা যুদ্ধে গেছেন। অনেক নির্যাতন সইতে হয়েছে তাদের। পূর্বপুরুষদের এ ত্যাগের কথা আমরা ও আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখবে।  

সিরাজগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বাহুকা গ্রামে আমাদের বিশাল বাড়িতে পরিবারের সবাই বসবাস করতাম। একটি রেডিও ছিল, একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে গ্রামের লোকজন দলবদ্ধভাবে এসে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান এবং বিবিসির খবর শুনতেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকেই আমরা মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকি। বড় ভাই আমিনুল ইসলাম চৌধুরীর অনুপ্রেরণায় আমাদের পরিবারের সব যুবক যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। পরিবারের সবাই ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে বিভিন্ন সেক্টরে সরাসরি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছি।  

তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের ৪০ জনেরও বেশি যুবক মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। সে কারণে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদরেরা গ্রামের ওপর চরম অত্যাচার চালায়। আমাদের বাড়িটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় হানাদারেরা।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।