বগুড়া: বাগড়া কলোনিতে আক্রমণ চালায় পাকসেনারা। মিছিলকারী স্বাধানীতাকামীদের ঘিরে ফেলে তারা।
এরপর তাদের ওপর চালানো হয় মেশিনগানের গুলি। শহীদ হন ৩২ জন স্বাধীনতাকামী। গুলিবিদ্ধ হন বেশ ক’জন। তাদের মধ্যে পাওয়া গেছে ১৯ জনের নাম।
তারা হলেন- আফসার মণ্ডল, শরকত মণ্ডল, আলী আকবর মণ্ডল, আয়েজ উদ্দিন মণ্ডল, আলতাব শেখ, সিফাত মোল্লা, কুদ্দুস, হোসেন, মনছের, খোকা, আফজাল, ঈমান, হযরত, সাত্তার, রিয়াজ উদ্দিন, যদিমুদ্দিন, সদর আলী সরকার, আজিজ ও নবা ফকির।
১৯৭১ সালের এপ্রিলের শেষ দিকের ঘটনা। এটি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের একটি গ্রাম।
যুদ্ধাহত ফরিদ উদ্দিন, এলাচী বেওয়া বাংলানিউজকে বলেন, পাকবাহিনীর গুলিতে নিহত শহীদদের ১০-১২ জনকে গ্রামের পূর্বপাশের একটি ভিটায় দাফন করা হয়। সেখানে ইটখোলার কোনো অস্তিত্ব নেই। বর্তমানে স্থানটি কয়েকটি তাল গাছে ঘেরা রয়েছে। স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও এসব শহীদদের নামে কোনো নামফলক বা স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এমনকি এই বধ্যভূমির কথাও জানেন না অনেকেই, বলেন এ দুই যুদ্ধাহত।
আগামী প্রজন্মের কাছে শহীদদের আত্মত্যাগের ঘটনা স্মরণীয় করে রাখতে এতোদিনেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বধ্যভূমি ও গণকবরগুলো সংরক্ষণের জন্য একাধিকবার মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে জানানো হলেও ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্টরা।
এতে সেদিনের সেই বীরসেনাদের স্মৃতি বিজড়িত বধ্যভূমি ও গণকবরগুলোর অবস্থা করুণ আকার ধারণ করেছে। উপজেলায় এরকম পাঁচটি বধ্যভূমি ও গণকবর রয়েছে।
স্বাধীনতার দীর্ঘ সময়ে দু’টি গণকবর সংরক্ষণের জন্য নিরাপত্তাপ্রাচীর ও নামফলক স্থাপন করা হয়েছে। বাকিগুলো সেই থেকে আজ পর্যন্ত অযত্ন অবহেলায় পড়ে রয়েছে।
১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল, শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের দড়িমুকুন্দ গ্রামে পাকবাহিনী নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। দিনটি ছিল ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল। দড়িমুকুন্দ গ্রামে হানা দিয়ে পাকবাহিনী ২৪ জনকে গুলি করে হত্যা করে। জ্বালিয়ে দেয় তাদের বাড়িঘর।
আজাহার আলী ফকির, ওসমান গণি ফকির, আজিজুর রহমান, একরামুল হক, সুজার উদ্দিন, সেকেন্দার আলী, বুল মাজন মিয়া, রমজান আলী, মোখলেছুর রহমান, ইসাহাক আলী, আবেদ আলী, আলিমুদ্দিন, ছোবহান আলী, গুইয়া প্রামানিক, দলিল উদ্দিন, হাসেন আলী, উজির উদ্দিন, আয়েন উদ্দিন, আফজাল হোসেন, মোহাম্মাদ আলী, আজিমুদ্দিন, নেওয়াজ উদ্দিন, হায়দার আলী ও জপি প্রামানিক পাকসেনাদের গুলিতে শহীদ হন। পরে ঘটনাস্থলের পাশেই তাদের কবর দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে শেরপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে নামফলক তৈরি করা হয়। গণকবর সংরক্ষণের জন্য নির্মাণ করা হয় নিরাপত্তা প্রাচীর।
সুঘাট ইউনিয়নের কল্যাণী গ্রামে পাকসেনাদের হাতে প্রাণ হারান ২০ জন স্বাধীনতাকামী।
তারা হলেন- বীরেন্দ্রনাথ পাল, যজ্ঞেশ্বর পাল, ঢলু পাল, মতিলাল পাল, হারান পাল, সুদেব পাল, রাজেন পাল, লাল বিহারী পাল, চিত্ত পাল, কৃষ্ণ পাল, ক্ষুদিরাম পাল, রাধিকা নাথ পাল, মনিন্দ্র মোহন্ত, বাদুলী পাল, মনিন্দ্র নাথ পাল, নারায়ন পাল, মনিন্দ্র নাথ প্রকৌশলী, পুস্প পাল, নেংড়া পাল ও শ্রীবাস শীল।
এসব বীরদের স্মৃতি ধরে রাখতে সেখানে নামফলকসহ শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একেএম সরোয়ার জাহান বাংলানিউজকে বলেন, বধ্যভূমি ও গণকবরগুলো সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে জানানো হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত কোনো অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া গেলে শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ শেরপুর শাখার কমান্ডার ওবায়দুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বধ্যভূমি ও গণকবরগুলো সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ ব্যাপারে ভাল খবর পাওয়া যাবে বলেও আশা করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৬
এমবিএইচ/জেডএস