ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বসুন্ধরা শুভসংঘ

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসে জবিতে বসুন্ধরা শুভসংঘের বিতর্ক প্রতিযোগিতা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২৪
আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসে জবিতে বসুন্ধরা শুভসংঘের বিতর্ক প্রতিযোগিতা

জবি: আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) দুর্নীতি বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ আয়োজন করেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

 

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ল্যাবরুমে এ প্রতিযোগিতা হয়। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের চারটি দল।

তারা হলো- ইতিহাস বিভাগের হেরোডোটাস দল, ইংরেজি বিভাগের ওল্ড ম্যারিনার এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মুক্তবাক ও এডওয়ার্ড সাঈদ দল। প্রথম রাউন্ডে হেরোডোটাস এবং মুক্তবাকের মধ্যে এবং ওল্ড ম্যারিনার ও এডওয়ার্ড সাঈদ দল বিতর্ক করে। ফাইনাল রাউন্ডে ওল্ড ম্যারিনারকে হারিয়ে বিজয় অর্জন করে মুক্তবাক।  

বিজয় অর্জনকারী শিক্ষার্থীরা হলেন- মো. জহিরুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম পারভেজ ও ইব্রাহীম খলীল।
রানার্সআপ হয়েছেন- মেহেদী হাসান, খাদিজাতুল কুবরা এবং মো. শাহরিয়াজ আহম্মদ।

সরকারি দলের মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, দেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামো বিনির্মাণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি করার জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি, নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সামাজিক আন্দোলন, আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। এর মাধ্যমেই দেশের দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

রবিউল ইসলাম পারভেজ বলেন, আমরা দেখেছি, বিগত আওয়ামী সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। জনগণের সচেতন একটি অংশ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এ দুর্নীতিবাজ সরকারের পতন ঘটিয়েছে। ফলে জনগণ যদি সচেতন হয় তাহলে কোনো সরকার ও ব্যক্তি বৃহৎ কিংবা ক্ষুদ্র পরিসরে দুর্নীতি করার সাহস দেখাবে না এবং সচেতন জনগণের চাপের মুখে দুর্নীতি দমনে সরকারও সোচ্চার থাকবে।  

ইব্রাহীম খলীল বলেন, অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে থাকেন। সেটাকে তারা ঘুষ নয় বরং বকশিস মনে করেন। এ ভাবনা মূলত সচেতনহীনতার পরিচায়ক। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে জনগণ আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন। আমরা যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারি, তাহলে দুর্নীতি নামক ক্যান্সার থেকে এই দেশ রক্ষা পাবে।

বিরোধীদলীয় নেতা মেহেদী হাসান বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা পারে দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে। যথাযথ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষমতা, আইনের সঠিক প্রয়োগ, জনসংযোগের মধ্যমে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে দুর্নীতি প্রতিরোধ হবে।
খাদিজাতুল কুবরা বলেন, অধিকাংশ দুর্নীতিতে যে বা যারা দায়ী থাকে, তারা কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় বড় হয়। সাধারণ জনগণের কেউ প্রতিবাদ করলে, পরবর্তী সময়ে তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
মো. শাহরিয়াজ আহম্মদ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মীদের প্রশ্রয় না দিয়ে, জনগণ ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগুলোকে সহযোগিতা করে, তাহলে দেশের দুর্নীতি কমানো সম্ভব।
   
বিচারকের বক্তব্যে নাইমা আক্তার রিতা বলেন,  বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে দুর্নীতি পুরোপুরি নির্মূল করা অসম্ভব। দুর্নীতি রোধ করা কিংবা কমানোটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে হ্রাস পাবে এই দুর্নীতি।  এগুলোর মধ্যে ‘দেশের আমলাদের দ্বারা প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কঠোরভাবে নিশ্চিত করা, আইনের শাসন ও সব স্তরের ব্যক্তিসচেতনতা জাগ্রত করা'  দুর্নীতি রোধ করার প্রথম এবং প্রধান হাতিয়ার।

বক্তব্যে বসুন্ধরা শুভসংঘ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মো. জুনায়েত শেখ বলেন, শুধু আইন প্রয়োগ করলেই দুর্নীতি নির্মূল হবে না। এর সঙ্গে নৈতিকতা, মূল্যবোধ, ব্যক্তিসচেতনতা, জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ মিডিয়ার স্বাধীনতা থাকা প্রয়োজন। সব অঙ্গনে সব বিষয়ের তথ্যের অবাধ প্রসার সৃষ্টিও দুর্নীতি হ্রাস করবে।

অতিথির বক্তব্যে সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেনাজ হক বলেন, আমার বেশ ভালো লেগেছে। নারীদের অংশগ্রহণ ছিল। সবাই পাল্টা যুক্তি দিয়েছে। একে অপরের কাছ থেকে এভাবেই আমরা শিখব।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক কামনা আক্তার বলেন, বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মানুষ নতুন বিষয় জানতে পারে। তৈরি হয় জনপরিসর। এর মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠবে। সরকার ও জনগণের মধ্যে তৈরি হবে ইতিবাচক পরিবর্তন।  

বসুন্ধরা শুভসংঘ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপদেষ্টা শেখ আবু রাইহান সিদ্দিকী বলেন, আমি বসুন্ধরা শুভসংঘকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি বিতর্ক শুরু করেছি ক্লাস ফাইভ থেকে। আমার শিক্ষক বলেছেন, দার্শনিক ভলতেয়ারের কথা। তোমার মতের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান থাকতে পারে, কিন্তু তোমার মতপ্রকাশের জন্য আমি জীবনও দিতে পারি। বিতর্ক করতে হলে সাম্প্রতিক ইস্যু, দেশ, সাম্প্রতিক সময় সম্পর্কে জানতে হয়। সমাজের দুর্নীতি নির্মূল হবে জনসচেতনতার মাধ্যমে। এ বিতর্ক জনসচেতনতা সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।