ঘটনাটি অসম্ভব মনে হলেও বাস্তবেই ঘটছে। যে জাতের আমের চাহিদা বেশি, সেই জাতের গাছের ডাল দিয়ে কলম করা হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আম বাগানে।
ধরা যাক কারও গাছে ছোট আকৃতির টক আম ধরছে, যে আম মুখেও নেওয়া যায় না টকে। সেই গাছেই মিষ্টি এবং বড় আকৃতির আম ধরানো সম্ভব। আবার এমনও হতে পারে একটি বড় গাছের এক পাশে ক্ষিরসাপাত অন্য পাশে লকনা জাতের আম। অর্থাৎ এক গাছেই দুই জাতের আম।
শিবগঞ্জে প্রধান সড়কের পাশেই একটি বিশাল আকৃতির বুড়ো গাছের প্রতিটি কাণ্ডেই সাদা পলিথিন ঝুলতে দেখে চোখ আটকে যায়। গাছের মগডালে রবিউল, সোহেল রানা ও জেনারেল ইসলাম একের পর এক গাছের কাণ্ড কাটছেন।
তারা গুটি আমগাছে লকনা জাতের কাণ্ড লাগিয়ে দিচ্ছেন। এবছর কলম করছেন আগামী বছরই ওই গাছে ধরবে লকনা আম। এসময় কলম করার পদ্ধতি বর্ণনা করে রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রথমে লকনা আম গাছ থেকে অগ্রভাগের কাণ্ড কেটে নিয়ে আসছি, সেই কাণ্ড গুটি গাছের কাণ্ড কেটে পলিথিন দিয়ে পেঁচিয়ে দিচ্ছি।
এভাবে একটি কলম ১৫ দিনের মধ্যে পরিপক্বতা লাভ করে। পনেরো দিন পর এসে ওই পেঁচানো পলিথিনের মাথা কেটে দেওয়া হয় এবং গিট কেটে আগলা করে দেওয়া হয়। যেখানে লকনার ডাল বা কাণ্ড জোরা লাগানো হয়েছিল তার মাথায় নতুন কাণ্ড গজায়। আর সেই কাণ্ড থেকেই পরের বছর আম ধরে।
এভাবে এক জাতের গাছে আরেক জাতের আম উদ্ভাবন করা হচ্ছে। প্রতিটি কলম-এর জন্য রবিউলরা পাচ্ছেন পাঁচ টাকা করে। আর যদি চারা গাছে কলম করা হয় তাহলে প্রতিটি চারার জন্য পান এক টাকা করে। সাধারণত এক-দেড় বছরের চারা গাছেই কলম করার উপযুক্ত সময়। চারা গাছে কলম আকার ভেদে ১০০ টাকা থেকে ১৫০, ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর যারা কলম করছে তারাও দিনে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা করে আয় করছেন। অর্থাৎ যিনি কলম করছেন তিনি মাসে ৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারছেন।
আর এই কলম পদ্ধতি জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শুরু হয়ে চলে ভাদ্র মাস পর্যন্ত। শীত পড়া শুরু হলে আর কলম করা যায় না। বর্ষা মৌসুমে সাধারণত নতুন কাণ্ড ছাড়ে, তাই এই সময়ই কলম করার উপযু্ক্ত সময়। কলম করা গাছে ফলনও বেশি। মনে রাখা ভালো- যে কাণ্ডটি কেটে আনা হচ্ছে সেটা দিনের টা দিনে কলম করতে পারলেই ভালো, খুব বেশি হলে পরের দিন পর্যন্ত ওই কাণ্ড কাজে লাগানো যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৮
এসএম/টিএ