আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে এমন কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিসের সঙ্গে আলাপ করে আম পরিবহনে তাদের কাজের বিভিন্ন তথ্য জানা গেলো। তবে সেবা দিয়ে থাকলেও পণ্য সঠিক সময়ে না পৌঁছানো, যত্নের অভাব, কর্মীদের অসদাচারণসহ এসব কুরিয়ার সার্ভিসের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগ বিস্তর।
শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নে পৌঁছামাত্র একটি কুরিয়ার সার্ভিসের আমকেন্দ্রিক বাণিজ্যের একটি চিত্র ফুটে উঠলে ব্যানারে ‘আম বুকিং চলছে’ লেখা দেখে। মানে এবার আম পরিবহনের পুরো বাণিজ্যটা ‘জননী কুরিয়ার সার্ভিস’ যে ‘বাগিয়ে’ নিতে চায় তা ব্যানার দেখেই স্পষ্ট।
তবে শুধুমাত্র আমের গাড়িতে আম পরিবহন করে ও যত্নসহকারে তা পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে কম যাচ্ছে না দেশব্যাপী পণ্য পরিবহনে একসময় ‘আস্থা’ অর্জন করা ‘সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস’। যদিও প্রতিযোগিতার বাজারে অন্যদের কর্মতৎপরতায় সেই সুনাম হারাতে বসেছে প্রতিষ্ঠানটি।
আবার তুলনামূলক কম পয়সায় দ্রুত সময়ে পণ্য পৌঁছে দিয়ে সুনাম কুড়ানো ‘এস আর পার্সেল সার্ভিস’ ভরসা দিচ্ছে গ্রাহকের আস্থার।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আম পরিবহনে এসব কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যক্রম নিয়ে শিবগঞ্জ বাজারে তাদের এজেন্ট পয়েন্টে কথা হয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে। যেখান থেকে বোঝা গেলো বিভিন্ন বিষয়।
বাজারে বছর তিনেক আগে কুরিয়ার সার্ভিস সেবা চালু করেছে ‘এস আর পার্সেল সার্ভিস’। এ পয়েন্টের এজেন্সি প্রতিনিধি মো. রাহিত বিল্লাহ রাজু বাংলানিউজকে জানান, প্রতি কেজি আম পরিবহনে খরচ নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। আর প্লাস্টিকের প্যাকিং ও লেবার খরচ ২০ টাকা। তবে কেউ যদি প্লাস্টিকের প্যাকিং করে আনেন সেক্ষেত্রে ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে না। প্লাস্টিকের প্যাকেটের প্রয়োজন কী-এমন প্রশ্নে তিনি জানান, এতে আমাদের সিরিয়াল নম্বর লিখতে হয়। আর কার্টন বা অন্য কিছুতে গ্রাহক আম নিয়ে এলে তা নষ্ট হয়ে রস অন্য পণ্যে লাগতে পারে, সেটা থেকে মুক্ত করতেই এ প্যাকিং।
তবে চাঁপাইয়ের আম ভাঙা শুরু না হওয়ায় এখনও আম নিয়ে তাদের কার্যক্রম জমে উঠেনি।
গলি পেরিয়ে খানিক দূরেই ‘সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস’। আম পরিবহনে তাদের সেবা সম্পর্কে এজেন্সি প্রতিনিধি নুরুল হুদা বলেন, আমরা প্রতি কেজি আম পরিবহনে খরচ নিচ্ছি ১৪ টাকা। আর প্যাকিং লেবার খরচ ৩০ টাকা। আপনাদের টাকা বেশি কেনো- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আমের সঙ্গে অন্য কোনো পণ্য পরিবহন করি না। মানে আমাদের আমের জন্য পৃথক সার্ভিস দেওয়া হয়। আর এজন্য রয়েছে আলাদা জনবল। সেজন্যই মূলত খরচটা একটু বেশি।
পাটানোর পরের দিনই আম গ্রাহকের হাতে পৌঁছানো হয় জানিয়ে নুরুল হুদা বলেন, রাস্তায় যানজট থাকলে একটু সময় নেয়। আর হোম সার্ভিস নয়, গ্রাহককে আম নিতে হয় নিকটস্থ শাখা অফিস থেকে।
পিছিয়ে নেই ‘জননী কুরিয়ার সার্ভিস’। আম পরিবহনে তারা কেজিতে নিচ্ছে ১০ টাকা। প্যাকিংয়ের জন্য নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা। তবে ‘পরিচিত’ মানুষের কাছে প্যাকিং খরচ নেওয়া হয় না বলে জানান শিবগঞ্জ বাজারে সার্ভিসটির এজেন্সি প্রতিনিধি মো. তৌহিদুল ইসলাম।
দেশের একেক স্থানে পরিবহন খরচ একেক রকম জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পণ্যের বুকিং নেওয়া হয়। পণ্যবোঝাই শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে গাড়ি ছেড়ে যায়।
শিবগঞ্জ বাজার থেকে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো তাদের পণ্য পাঠায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। মূলত চাঁপাই থেকেই পণ্যবোঝাই গাড়িগুলো ঢাকার পথে রওনা হয়। সেক্ষেত্রে সড়কের অবস্থার উপর নির্ভর করে গ্রাহকের পণ্য পাওয়ার সময়। তবে দ্রুত সময়ে পৌঁছে দেওয়ার ‘প্রতিশ্রুতি’ দিয়ে এসব কুরিয়ার সার্ভিসগুলো ব্যবসা করে যাচ্ছে। আর গ্রাহকের পণ্য পরিবহনে মুনাফা ‘ভালো’ বলেই হয়তো এখাতে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৪ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৮
জেডএস/এইচএ/