প্রকৃতির রুক্ষতাকে কাটিয়ে ঝুম বর্ষায় পাহাড়ের রূপে অন্যরকম আবহ। চারপাশজুড়ে সবুজে সাজানো।
পথে পথে যেতে যেতে দেখা মিলবে পাহাড় আর ঝিরিপথের নান্দনিক সৌন্দর্য। মাইল চারেক হাঁটার পর কানে ভেসে আসবে ঝরনার কলতান, চোখ জুড়ানো রুপ ‘রূপসী’র। বলছি মিরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বড়কমলদহ পাহাড়ের রূপসী ঝর্ণার কথা।
এ উপজেলার খইয়াছড়া, নাপিত্তাছড়া, মহামায়া, সহস্রধরার পর এবার প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে পর্যটকদের কাছে টানছে রূপসী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিস্ময় রূপসী ঝরনা। প্রতিদিন এই ঝরনা দেখতে ঢল নামছে পর্যটকদের। এবারের ঈদুল আজহার সময়টায় এ ঝরনায় পর্যটকদের আগমন ছিল চোখেপড়ার মতো।
আঁকাবাঁকা গ্রামীণ সবুজ শ্যামল মেঠো পথ পার হয়ে পাহাড়ের পাদদেশের এই ঝরনা রয়েছে অন্যরকম সৌন্দর্য। ঝরনাটি দেখতে যাওয়ার পথে দৃষ্টিনন্দন জলের ছড়া, পাহাড়, সবুজ প্রকৃতি, তিন ধাপের ভিন্ন ভিন্ন অপরূপ রূপসীর সৌন্দর্যকে অন্য যেকোনো ঝরনা থেকে আলাদা করেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ঝরনার মায়াবী রূপ দেখে দর্শনার্থীরাই এই ঝরনার নাম দিয়েছেন ‘রূপসী ঝরনা’।
এ ঝরনার তিনটি ধাপ। কমলদহ, ছাগলকান্দা ও পাথরভাঙ্গা ঝরনা। প্রথম ধাপটা বড় একটি ঝর্ণার মতো। অনেকটা খাড়া তবে ঢালু। বর্ষায় পুরো ঝর্ণা বেয়ে পানি পড়ে। শুষ্ক মৌসুমে শুধু দক্ষিণ দিকটায়। ভেতরের রূপ আরো বেশি সুন্দর। উপরে উঠলে খোলা একটা জায়গা। তারপর একটা বড় পাথর। এই পাথরের মাঝ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে। দশ ফুটের খাড়া পাথরটি বেয়ে উঠতে পারলেই এবার অন্যরকম এক সৌন্দর্য। বিশাল ছড়া, তবে বেশ আঁকাবাঁকা। ঠিক বয়ে চলা কোন নদীর মতো।
দুই পাশে সুউচ্চ পাহাড়। শোঁ শোঁ শব্দে উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম শীতল পানি গড়িয়ে যাচ্ছে ছড়া দিয়ে। মেঘের মতো উড়ে আসা শুভ্র এ পানি আলতো করে ছুঁয়ে দেখলেই শীতল পরশ মুহূর্তে ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে, আবার মূল ঝরনায় যাওয়ার পথে দেখা মিলবে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও রং বেরংয়ের কীটপতঙ্গ। শোনা যাবে ঝিঁ ঝিঁ পোকার গুঞ্জন, অচেনা পাখিদের ডাক। সবকিছু মিলে এ এক অন্যরকম অনুভূতি।
এরইমধ্যে রূপসী ঝরনার রূপের খবর ভ্রমণপিপাসুদের কাছে পৌঁছে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে। যে কারণে বর্তমানে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসছেন এখানে। এবারের ঈদুল আজহার ছুটির দিনগুলোতে এ ঝরণায় ছিল উপচেপড়া ভিড়।
যেভাবে যাবেন রূপসীতে
বাসযোগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের বড়দারোগাহাট বাজারে নামতে হবে প্রথমে। মিরসরাইয়ের বড় দারোগারহাট বাজারের সামান্য উত্তরে ব্রিকফিল্ড সড়ক ধরে পূর্ব দিকে আধা কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই রেললাইন। রেললাইন পেরুলেই পথ, দু’পাশে সবুজ ফসলের মাঠ পেরিয়ে সামনে গেলে পাহাড়ের বিশালতা। সেই পথ ধরে একটু এগিয়ে গেলে পাহাড়ের পাদদেশ। বাঁ দিকে ৫০ গজ হাঁটলেই বিশাল ছড়া। যেটি রূপসীর প্রবেশপথ। তা ধরে মাইল খানেক হাঁটার পর রূপসীর প্রথম ধাপটা বড় একটি ঝর্ণার মতো। অনেকটা খাড়া তবে ঢালু। বর্ষায় পুরো ঝরনা বেয়ে পানি পড়ে। অনেকেই মনে করে রূপসী শুধু এটাই। কিন্তু এটি রূপসীর বাইরের রূপ। এরপর আরো হাঁটলে পাওয়া যাবে রুপসীর আরো দু’টো ধাপ।
থাকা-খাওয়া
ঘুরতে যাওয়া পর্যটকরা যদি দুপরের খাওয়া খেতে চান তাহলে রেল লাইন পার হয়ে হাঁটার পথে গ্রামের দোকানগুলোতে খাওয়ার অর্ডার করলে ঝরনা দেখে ফেরার পথে খেয়ে নিতে পারবেন। আর না হয় মিরসরাইয়ের বড় দারোগার হাটে এসেই খাওয়া সেরে নিতে হবে, সেখানে কয়েকটি হোটেল রয়েছে। থাকতে হলে সীতাকুণ্ড কিংবা মিরসরাইতে থাকতে হবে। সেখানে আবাসিক হোটেল রয়েছে। রূপসী ঝরনার বড়কমলদহে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে কেউ ইচ্ছে করলে তাঁবু করে থাকতে পারেন। গ্রামের মানুষগুলো ভীষণ আন্তরিক।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৮
এসএইচডি/জেডএস