রোববার (০৭ অক্টোবর) দুপুরে শ্রীমঙ্গল পৌর এলাকার চৌমুহনা, কলেজ রোড, সাগরদীঘি রোড, পোস্ট অফিস রোড, হবিগঞ্জ রোডসহ স্টেশন রোড ঘুরে বর্জ্যের বিশাল স্তূপ দেখা গেছে। মাছ বাজারে স্তূপ করে ফেলে রাখা এসব বর্জ্য পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
জানা যায়, শ্রীমঙ্গলে কলেজ সড়কের তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে পৌরসভার ময়লার ভাগাড় সরানোর আন্দোলন করে আসছেন স্থানীয় শিক্ষার্থীরা। প্রায় একবছর ধরে চলমান এ আন্দোলনে গত বুধবার (০৩ অক্টোবর) জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে এক সভায় সিদ্ধান্ত হয় দুইমাস বা স্বল্প সময়ের মধ্যে আগের স্থানেই পৌরসভার ময়লা ফেলা হবে। তাতে মুক্তি মিলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক আব্দুল মোত্তালিব আকিব বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ময়লার ভাগাড় নিয়ে গত বছরের জুলাই মাসে আমরা আন্দোলন করেছিলাম। অনেক আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচিসহ সংশ্লিষ্ট মহলে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এতো কিছুর পর গত বুধবার জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ভাগাড় অপসারণ নিয়ে একটি বৈঠক হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় ওই বৈঠকে আমাদের শিক্ষার্থীদের কোনো প্রতিনিধিকে ডাকা হয়নি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে আকিব বলেন, ভাগাড় অপসারণের আন্দোলন করছি আমরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা, অথচ আমাদেরই জেলা প্রশাসকের সভায় ডাকা হয়নি। যদি পৌরসভার মেয়র আমাদের লিখিতভাবে অঙ্গীকারপত্র দেন, তাতেই জেলা প্রশাসনের বৈঠকের সিদ্ধান্ত আমরা মানবো।
এদিকে পৌর কাউন্সিলররা বলেন, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মহসীন মিয়া মধু দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। ইউএনও (শ্রীমঙ্গল) আমাদের লিখিতভাবে বলতে হবে, দুইমাস বা স্বল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে ভাগাড় অন্যত্র সরানো হবে। তাহলেই জেলা প্রশাসনের বৈঠকের সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিবো।
প্রসঙ্গত, ১৯৩৭ সাল থেকে কলেজ সড়কের ময়লার ভাগাড়ে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ময়লা ফেলে আসছে। তখনকার সময়ে আশপাশে জনবসতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি।
সময়ের বির্বতনে শ্রীমঙ্গলের স্বনামধন্য স্কুল দি বার্ডস রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ ও একটি দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, জেলা প্রশাসনের বৈঠকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার সিদ্ধান্ত দেন, বিকল্প স্থান হিসেবে পৌরসভার অধিগ্রহণকৃত শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের উত্তর ভাড়াউড়ার জমিতে ভাগাড় স্থাপনের অবকাঠামো নির্মাণে পৌর কর্তৃপক্ষকে কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্চ আদালতে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ওই রুলের নিষ্পত্তিকালে যদি রায় প্রত্যাহার হয় তবে সেখানেই পৌরসভার ময়লা ফেলা হবে। এর আগে ওই স্থানে স্থাপনার অবকাঠানো নির্মাণ সামগ্রী নিতে সদর ইউনিয়ন পরিষদ যে সড়কে গেটের মাধ্যমে প্রাচীর তৈরি করেছিল তা ভেঙে অপসারণ করবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।
শ্রীমঙ্গল পৌরসভার প্যানেল মেয়র কাজী আব্দুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এরইমধ্যে বিকল্প একটি জায়গায় অস্থায়ীভাবে শ্রীমঙ্গল শহরের বিভিন্ন রাস্তায় জমে থাকা ময়লা আবর্জনা অপরসাণের চেষ্টা করছি। আশা করি, দু’একদিনের মধ্যেই তা শেষ হয়ে যাবে। জেলা প্রশাসক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা গিয়েছিলাম ময়লা ফেলতে। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বাঁশের খুঁটি পুঁতে গাড়ি যাওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা তো চাই যে পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গল থেকে এই মুহূর্তে ময়লা সরে যাক। সবাই তা চায়। অনেকে বলছেন, ইউএনও গিয়ে এ ব্যাপারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলুক। কিন্তু ইউএনও সেটা পারে না।
তিনি আরো বলেন, ক’দিন আগে এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত সভায় তারা একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এছাড়াও আমাদের স্থানীয় এমপিও পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনাও দিয়েছেন। পৌরসভার ময়লা পৌরসভার নির্ধারিত জায়গাতেই ফেলবে। ময়লা ফেলতে জটিলতা যেটা তৈরি হয়েছে এ বিষয়ে পৌরসভা উদ্যোগ নিয়ে বিষয়টি দ্রুত সমাধান করবে বলে আশা করি।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৮
বিবিবি/জেডএস