ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

মুম্বাই-কলকাতার কড়চা-৭

মুম্বাইয়ের ‘বাজু’তে দিনভর ঘোরাঘুরি

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০১৫
মুম্বাইয়ের ‘বাজু’তে দিনভর ঘোরাঘুরি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মুম্বাই থেকে ফিরে: ‘গেটওয়ে ইন্ডিয়া কিতনা দূর’, জিজ্ঞেস করতেই উত্তর এক যুবকের, মুম্বাই ক্যা বাজু মে, কলাবা, তাজ হোটেল উধার ছে’।

হাজি আলী থেকে গেটওয়ে ইন্ডিয়া ৮ কিলোমিটার রাস্তা।

ট্যাক্সিতে সময় লাগলো আধাঘণ্টার কিছু বেশি। জ্যাম খুব বেশি না। পথে দেখা হলো মুম্বাই ইউনিভার্সিটি, মিউজিয়াম, ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম, মহারাষ্ট্র পুলিশ হেডকোর্টার, উচ্চ আদালত। তবে জার্নির সবচেয়ে এক্সাইটিং মুহূর্ত ছিলো ধনুকের মতো বাঁকা মেরিনড্রাইভ দিয়ে যাওয়ার পথটুকু। মেরিনড্রাইভের গল্প থাকবে আগামী পর্বে। আপাতত গেটওয়ে ইন্ডিয়ার গল্পে ফিরি।


‘বাজু’ শব্দের অর্থ বুঝতে একটু দেরি হলো। তবে ধারণা করতে পারছিলাম কি হতে পারে। বুঝলাম এক প্রান্তের পরপর লাগোয়া অংশকে বলা হচ্ছে বাজু।

আরব সাগরের কোলজুড়ে দক্ষিণ মুম্বাইয়ের শেষ সীমানা এটি। বলা যায় ঠিক মুম্বাই শহরের লেজ। ট্যাক্সি থেকে নেমেই হাতের ডানে বিখ্যাত পাঁচতারকা তাজ হোটেল। বাঁয়ে গেটওয়ে ইন্ডিয়া। আর তাজ হোটেলের সামনে দিয়ে পশ্চিম বরাবর হেঁটে গেলেই কলাবা।


তাজ আর ওবেরয় হোটেল সবসময় বিখ্যাত ভারতে। তাজের স্থাপত্যশৈলী অনেকটা রাজকীয়। ব্রিটিশ ‍আমলের (১৯০৩) নির্মিত তাজ সত্যি দৃষ্টিনন্দন। ২০০৮ সালে লস্কর-ই তৈয়বার ভয়াবহ হামলার পর আও আলোচনায় আসে হোটেলটি। সেসময় মারা যান ১৬৭ জন। এখন মূল হোটেলে পাশে নির্মিত হয়েছে সুউচ্চ আরও একটি টাওয়ার।


তাজের সামনে দাঁড়ালে যে কারো মনে পড়বে ভয়াবহ সে ঘটনা। আমাদেরও শরীরে যেন শিরশিরে অনুভূতির সঞ্চার হলো। আরব সাগর থেকে তাজের দূরত্ব মাত্র একটি রাস্তার। তাই সাগরজল তাজের ছায়াকে আত্মস্থ করে ফেলেছে। একটি পাঁচতারকা হোটেল কেন্দ্র করে পর্যটন আকর্ষণ গড়ে ওঠা একটু অপরিচিত ঠেকে। হয়তো পাশে গেটওয়ে ইন্ডিয়া থাকায় তাজের সেই কৃতিত্ব কিছুটা কমে যাবে। তবে কম নয়।


পর্যটকদের জন্য এখানে রয়েছে পর্যাপ্ত স্পিডবোট ও বড় বড় লঞ্চ। ইচ্ছে করলে পারবেন ভেসে বেড়াতে। আর সাগরে ভেসে তাজ ও গেটওয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করার মজা নিশ্চয় অন্যরকম। তবে সময়ের অভাবে সে সুযোগ আমাদের হয়নি।


গেটওয়ে ইন্ডিয়া আর তাজ হোটেলের মাঝের একটি ফাঁকা ঘেরা জায়গা শুধু কবুতরের জন্য। নিজেরা সেখানে খাবে-দাবে ঘুরবে-উড়বে আর দর্শনার্থীদের আনন্দ দেবে। ছবি তোলার জন্য কম জ্বালা সহ্য করতে হয় না তাদের। কারণ দর্শনাথীর তাড়া খেয়ে একবার উড়তে হয় একবার বসতে হয় তাদের।


আমরা যথারীতি তাদের খানিক জ্বালিয়ে পা বাড়ালাম গেটওয়ের দিকে। ঢোকার মুখে বেশ বড় লাইন। সিকিউরিটি চেকিং শেষে ঢুকেই একটি বড় চত্বর, প্রান্তে গেটওয়ে ইন্ডিয়া। পরে আরব সাগর। এটাই দক্ষিণ মুম্বাইয়ের শেষ প্রান্ত। ব্রিটিশ শাসনামলে এই স্থানটি ছিলো জেলেদের ব্যবহৃত একটি জেটি। পরে সংস্কার করে এটিই ব্যবহার হতো ব্রিটিশ গভর্নরদের ভারতবর্ষে ঢোকার পথ হিসেবে।


১৯১১ সালে রাজা পঞ্চম জর্জ ও রানী মেরি ভারতবর্ষ আসেন। তাদের ভারতভ্রমণ স্মরণীয় করে রাখতেই নির্মিত হয় গেটওয়ে ইন্ডিয়া। ওই বছরেই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও কাজ শেষ হয়ে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ১৯২৪ সালে। ইন্দো-সারাসিনিক স্ট্রাকচারে নির্মিত এ স্থাপত্যটির উচ্চতা ৮৫ ফুট।


মরুভূমিতে হাঁটিনি, কিন্তু ওই চত্বর দিয়ে মধ্যদুপুরে হাঁটার সময় মনে হচ্ছিলো যেন মরুর তপ্ত বালু দিয়ে হাঁটছি। নিষ্ঠুর সূর্যদেবতা কিছুতেই বশ মানলেন না। শ্যামলা-গৌরবর্ণের মুখগুলো মুহূর্তে কৃষ্ণবর্ণে রূপ নিলো। তবু বহুদূর থেকে এসেছি, তাই না উপভোগ করে তো যাওয়া যাবে না! ভেবে সব ক্লান্তি ঝেড়ে গেটওয়ে ইন্ডিয়া দেখার সাধ নিলাম। স্থাপত্যশিল্পী জর্জ উইটেটকে একবার কুর্নিশ করে চলে গেলাম এর পিছনের প্রান্তে। লোকজনে ঠাঁসা। এ খান থেকে আবার হোটেল তাজ মহলকে ভিন্নরূপে দেখা যায়। হঠাৎ দেখে হয়তো বলে উঠতে পারেন ‘সাগর জলে কার ছায়া গো। ’


এরই মধ্যে আমি কিছুটা বিরক্ত হলেও বিরক্তি ক্লান্ত নেই আপার। তাঁর কথা, বার বার কি আসা হবে? তাই সব পাশ থেকে সব ধরনের পোজে ছবি তুলে সাঙ্গ হলো গেটওয়ে ইন্ডিয়া দর্শন।

ও, একটি কথা বলা হয়নি। ঘুরতে ফিরতে এই গরমের মধ্যে সঙ্গে সানগ্লাস, ক্যাপ রাখা আবশ্যক। আর সমস্ত মুম্বাইজুড়ে পথে-ঘাটে নিম্বু-পানি (লেবুর শরবত) পাবেন মাত্র ৫ টাকায়। খেতে ভুলবেন না। ক্লান্তি দূরের মহৌষধ। সুযোগ পেলে চেখে দেখতে পারেন আইসক্রিমও!

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৫
এএ/

** সাগরকোলে হাজি আলী দরগা
** বলিউড তারকাদের বেহাল জুহু বিচ!
** প্রথম দর্শনেই মুম্বাইপ্রেম, চিকিৎসায় মন ভালো
** মনভোলানো খানাপিনায় ২৬ ঘণ্টায় মুম্বাই
** সোনার হরিণ ট্রেন টিকিট, অতঃপর হাওড়া স্টেশন
** ৫৫২ টাকায় ঢাকা থেকে কলকাতা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।