জেনেভা (সুইজারল্যান্ড) থেকে: প্রবাসে চাকরি নেই কুদরত ইলাহী টুকুর (৪০)। তাই বলে আলাদা করে চিন্তা বা হতাশা কোনোটাই নেই তার।
সদা প্রাণখোলা টুকুর চাকরি নেই ভেবে নিজের কাছে যতোটা দুশ্চিন্তা হচ্ছিলো, তার চেয়ে বেশি ফুরফুরে মেজাজে দেখে বিস্ময়ে কপালে পড়ছিলো ভাজের রেখা।
টুকু একা নন। ইউরোপের আল্পস পর্বতমালা, প্রশস্ত হৃদ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ সুইজারল্যান্ডে টুকুর মতো অনেকেই আছেন। যাদের চাকরি নেই বা নিজেই ইস্তফা দিয়েছেন। চাকরি না থাকলেও নেই কোনো দুশ্চিন্তা। আছে স্বস্তি। কোনো তাড়াহুড়োও নেই নতুন কাজ খোঁজার।
কারন দেশটির সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এমন ভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছে, যেখানে চাকরি চলে গেলেও অস্থিরতার কিছু নেই। খোদ রাষ্ট্র নির্বাহ করে বেকারদের সাংসারিক ব্যয়।
ঢাকার মোহাম্মদপুরের আরশাদ আলীর ছেলে কুদরত ইলাহী টুকু ভাগ্য অন্বেষণে এ দেশে আসেন ১৯৯৯ সালে। একই বিমানে যে বন্ধুর সঙ্গে এ দেশে এসেছিলেন তিনি আজ কয়েকটি রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক।
একটি স্প্যানিশ রেস্টুরেন্টে কুজিন শেফ হিসেবে এখানে কর্ম শুরু টুকুর। বেতনও মন্দ ছিলো না। প্রথমে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা। পরে অন্য অনেকের মতোই বিয়ে করেন এক সুইস নারীকে। পেয়ে যান দেশটিতে থাকার অনুমতি।
এতোদিনের ব্যবধানে তার বন্ধুর সঙ্গে নিজের অার্থিক ভিত্তির ব্যবধান আকাশ-পাতাল হলেও তা নিয়ে কোনো খেদ নেই টুকুর।
তার সাফ কথা- ‘আমার বন্ধু রাতদিন পরিশ্রম করেছেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। আমরা গর্বিত। আবার আমাকে নিয়ে তার টেনশনও কম নয়’।
‘আমি ব্যবসার পথে যাইনি তিনি। করেছি চাকরি। আমার কোনো টেনশন নেই। আবার কাজ হারিয়েও পথে পথে ঘুরতে হয় না এখানে। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী সরকার আমাদের ভাতা দেয়। সর্বশেষ যে বেতন পেতাম তার ৭০/৮০ শতাংশ টাকাই চলে আসে ব্যাংক হিসেবে। সো নো টেনশন’।
‘বন্ধুরা অনেকেই রসিকতা করে বলেন, আমরা পরিশ্রম করে যে অর্থ পাই আর তুমি না করেই পাও তার কাছাকাছি’- বলেন টুকু।
তার মতে, ‘আসলে এটা উন্নত সামাজিক ব্যবস্থার সূচক। পরের দুই বছর সরকার দেখবে, কাজ পেলাম কি-না। না পেলেও সমস্যা নেই। তখন সরকারই ভিন্ন কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করে আমাদের ব্যয় নির্বাহ করবে। মূলত এ জন্যেই এসব দেশকে বলা হয় ‘স্বপ্নের দেশ’।
‘যে কারণে এতো পরিশ্রম আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে আসতে বা অভিবাসী হওয়ার এতো চেষ্টা করে মানু্ষ’।
তিনি বলেন, ‘তবে একটি কথা বলতে চাই, এ ধরনের সুবিধা পেতে অবশ্যই দেশটিতে বৈধভাবে কাজ করার অনুমতি থাকতে হবে। তবেই সরকার আপনার দায়িত্ব নেবে। নাহলে ঠিকানা হতে পারে দেশটির কারাগার’।
টুকু বলেন, ‘আসলে বেশি সম্পদ দিয়েই বা কি হয়? যতোটুকু জীবনের জন্যে প্রয়োজন, ততোটুকু পেলেই খুশি আমি। পাচ্ছিও তাই। তবে নিজেও কাজ খুঁজছি। অবশ্যই সেটা মনের মতো। আর কাজ পেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বন্ধ হয়ে যাবে এই বেকার ভাতা’।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৬
জেডআর/এএসআর