পোখারা রুটে আলিঙ্গনের মাধ্যমে পাহাড় আমাদের স্বাগত জানায়। দুই লেনের এই যাত্রাপথের পুরোটা সময় সবুজে বেষ্টিত ছোট-বড় পাহাড়ই ছিলো সঙ্গী।
আঁকাবাকা সড়ক ধরে গাড়ি চলছিল আর কোল বাড়িয়ে দিচ্ছিল সবুজে ঘেরা সারি সারি পাহাড়। সোজা রাস্তায় গাড়ির ছুটে চলা দেখে মনে হয়, সামনে পড়া পাহাড়ের বুকে উঠে যাবে, তবে পাহাড়ের কাছে যেতেই বাঁক। চলতি পথে সুউচ্চ সবুজ পাহাড় দেখে মনে হলো, সৃষ্টিকর্তা বাড়াবাড়ি সৌন্দর্য দিয়েছে দেশটিকে।
এই পথে যেতে যেতে মনে পড়ে বান্দরবানের আঁকাবাকা সড়কের কথা। তবে নেপালের পাহাড়গুলোর উচ্চতা বেশি মনে হলো। এমনকি পাহাড়ি জনপথও বেশ উঁচুতে, যা বান্দরবান দেখা যায় না। পাহাড়গুলোও পাথুরে। বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন ফার্মের শ্রমিকদের পাথর উত্তোলন করতে দেখা গেলো।
আড়াই ঘণ্টার যাত্রা শেষে আধ ঘণ্টার যাত্রাবিরতি বাগভাতিতে। খরস্রোতা নদীর পাশে একটি রেস্তোরাঁয় খাওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হলো। নদীর পাশে গাছপালা বেষ্টিত সবুজ পাহাড়। নদী ও পাহাড়ের সমন্বয়ে পরিবেশটা মায়াবি। মনে মনে ভাবলাম, ভালো জায়গা বেছে নিয়েছেন রেস্তোরাঁ মালিক। পযর্টকদের বেশ ভিড়ও দেখা গেলো। রৌদ্রজ্জ্বল পরিবেশ হওয়ায় সবাই ক্যামেরার সামনে পোজ দিচ্ছিল।
সাত ঘণ্টা লাগবে আগেই জানা ছিলো। তবে যাত্রা বিরতিতে গাড়িচালক জানালেন এই রুটের বিপত্তির কথা। দুই লেনের সড়কটিতে কোনো কারণে একটি গাড়ি নষ্ট হলে দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়তে হয়।
আবার যাত্রা শুরু। কিছুক্ষণের মধ্যে মেঘলা আকাশের আবির্ভাব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পযর্টকের জন্য সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে রেস্তোরাঁ, ধাবা ও নেপালের ঐতিহ্যবাহী জিনিসসহ শীতের কাপড় নিয়ে বসেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
যে বৃষ্টি নিয়ে যাত্রা, পোখারায় প্রবেশের আগে মাদি নদী ব্রিজ পার হতেই সেই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি আবার শুরু। ঘড়ির কাঁটা সাড়ে তিনটা ছুঁইছুঁই। সড়ক পথে সাইনবোর্ডে লেখা ‘ওয়েলকাম টু পোখারা’। গুঁড়ি বৃষ্টি এবার গতি বাড়ালো। মনে আশঙ্কা জাগলো, বিকেলটা বেড়ানো যাবে কিনা!
কাঠমান্ডুতে যে অবিন্যাস্ত বিল্ডিং ও অপরিচ্ছন্ন শহর দেখছি, পোখারা প্রবেশ করে সেই ধারণা পাল্টালো। সুন্দর সাজানো-গোছানো পরিপাটি শহর পোখারা। পাহাড়ের মাঝে বয়ে যাওয়া স্বচ্ছ নীল পানির লেক দেখে মন জুড়িয়ে গেলো। বিল্ডিংগুলো দেখে পরিকল্পিত নগর হিসেবে গড়ে ওঠার ছাপ সুষ্পষ্ট।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৭
এমসি/এসএনএস