চীনের রাস্তা মানেই সঙ্গে আছে ফুটপাত, রাস্তা মানেই আইল্যান্ডে আছে সারি সারি বৃক্ষরাজি। আছে আলাদা সাইকেল লেন ও সার্ভিস রোড।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) পর্যন্ত সাতদিনে চীনের সাতটি প্রদেশের নানা প্রান্ত ঘুরে যত সড়ক দেখেছি, সবই এমন সাজানো গোছানো। যত দেখছি, তত মুগ্ধ হচ্ছি। বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন দেখছে, একদিন আমাদের সড়কপথ সাংহাই কিংবা নিংবো সিটির মতো হবে।
প্রথমবারের মতো রাজধানীর বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সবুজায়ন করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভিনাইল ওয়ার্ল্ড। উন্নত দেশগুলোর মতো দুই পাশে বৃক্ষরাজি, এলইডি লাইট আর অত্যাধুনিক যাত্রী ছাউনী বসানোর কাজ চলছে বিমানবন্দর সড়কে। আমাদের বিমানবন্দর সড়ককে চীনের সড়কপথেরও চেয়েও আধুনিক রূপ দিতে চান ভিনাইল ওয়ার্ল্ডের সিইও আবেদ মনসুর।
শুধু বিমানবন্দর সড়ক নয় তার পরিকল্পনা, পুরো ঢাকাকে ডিজিটাল এবং বিউটিফিকেশনের আওতায় এনে উন্নত দেশের মতো রূপ দেওয়া।
বিমানবন্দর সড়কই দেশের প্রথম কোনো সড়ক যার সৌন্দর্যবর্ধন হচ্ছে উন্নত দেশের আদলে। প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করে এ সড়কটির বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সহায়তা সরাসরি চীন থেকে নিচ্ছেন আবেদ মনসুর।
চীনের রাস্তাঘাট ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশে কেবল গাছ লাগিয়েই দায়িত্ব শেষ করেনি তারা, বরং গাছের চারধারে লোহার দণ্ড বেঁধে দিয়েছে যাতে হেলে না পড়ে। আবার গাছগুলো যেন সমান উচ্চতায় থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখে চীনারা। তাদের কোনো সড়কেই অসমান গাছ নেই। নির্দিষ্ট দূরত্বে সমান উচ্চতার লাখ লাখ গাছ রাস্তার ধারজুরে। এমন সড়কপথই আর কিছুদিন পর দেখবে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওয়েনজু রুইয়ান থেকে বিমানবন্দরে যাচ্ছিলাম। ওয়েনজু শহর থেকে বিমানবন্দর প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে। জনমানু্ষহীন সড়কটির পাশ দিয়ে এমন একটু জায়গা দেখা গেলো না যেখানে গাছ নেই। আইল্যান্ডে গাছের ফাঁকে রয়েছে একের পর এক ফুলের বাগান।
চীন এখন এমন সব জায়গায় তার সড়কপথ নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে বসতি গড়ে ওঠেনি। বসতি গড়ার আগে প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ তাদের প্রথম কাজ। যে কারণে ওয়েনজু সিটি একসময় সাগরে ছিলো। এখন সেখানে প্রশস্ত সড়ক আর অসংখ্য কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। চলছে উড়ালসড়ক বা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ।
বিশ্বের আইটি টেকনোলজির আরেক হাব হিসেবে পরিচিত সেনজেন সিটিতে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব পরিবর্তন এসেছে। সমুদ্রের ওপর ১০ কিলোমিটর লম্বা সেতু টেনেছে তারা। অত্যন্ত মসৃণ সেই সেতুর আইল্যান্ড জুরেই সবুজের ছোঁয়া।
গুগল’র তথ্য বলছে, চীনে এখন মহাসড়ক ব্যবস্থার দৈর্ঘ্য এতই বেড়েছে যে তা এখন এক লাখ কিলোমিটারের কাছাকাছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসড়ক ব্যবস্থা।
আর রেলপথ এখন চীনের প্রধান পরিবহন ব্যবস্থা। বিংশ শতকের মধ্যভাগের তুলনায় বর্তমান চীনের রেলপথের দৈর্ঘ্য দ্বিগুণ। বিশালাকার চীনের পরিবহন ব্যবস্থাও বহু পরিবহন নোড বা কেন্দ্রের সমন্বয়ে গঠিত বিশাল একটি নেটওয়ার্ক। তবে এই পরিবহন নোডগুলো অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ সমুদ্র-উপকূলীয় এলাকা এবং দেশের অভ্যন্তরে বড় বড় নদীগুলো তীরে অবস্থিত।
চীন তার অভ্যন্তরে বিস্তৃত সড়কপথ সাজিয়ে এখন বিশ্বজয়ের পথে। তাদের পরিকল্পনা ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড। যেখানে সড়কপথে চীন যুক্ত হবে এশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে। গত বছর চীনা রাষ্ট্রপ্রধানের সফরের সময়ই বাংলাদেশ এ পরিকল্পনা সমর্থন করেছে।
প্রস্তাবিত এ রুটটি কার্যকর করতে হলে খরচ হবে হাজার হাজার কোটি ডলার এবং এর সিংহভাগ বহন করতে আগ্রহী চীন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৮
এসএ/এসআই