ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

ভোগ হবে দারুণ উপভোগ্য

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৮
ভোগ হবে দারুণ উপভোগ্য ভোগ হবে দারুণ উপভোগ্য। ছবি: বাংলানিউজ

বান্দরবান থেকে ফিরে: অনেকেই বলেন চমৎকার পরিবেশে ডাল-ভাতও নাকি অমৃত মনে হয়। অথাৎ শুধু ভোগেই আপনি তৃপ্ত নন, পরিবেশ এবং পরিবেশনের ঢং টাও আপনার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

যে কারণে চারদিকে চলছে নান্দনিক পরিবেশনের জয়গান। এক কথায় বলতে গেলে ভোগ হতে হবে উপভোগ্য।

আর আপনি যেমন চান তেমনটি একত্রে পাওয়া অনেকটা দুরূহ। কথায় আছে ‘ঘর হয়তো বর হয় না, বর হয়তো ঘর হয় না’।

কিন্তু আপনি যা চান তার সবগুলোই এক ছাদের নিচে সমবেত করেছে বান্দরবান জেলা প্রশাসনের ‘মেঘলা ক্যাফে’। কলাপাতায় মুখরোচক খাবার।  ছবি: বাংলানিউজএখানে মেনুতে যেমন দারুণ মুখরোচক ও উপাদেয় সব খাবার রাখা হয়েছে, তেমনি দামও অনেক সাশ্রয়ী বলা চলে। অনেক খাবার রয়েছে যার স্বাদ আপনি কখনই ভুলতে পারবেন না। বিশেষ করে বাঁশ খেলে আপনি মনে রাখতেই হবে!

তেমনি পরিবেশনের ঢং টাও অতুলনীয়, প্লেট ঢেকে থাকা কলাপাতায় ভাত তাতে থানকুনির ডগা।  সকালের নাস্তায় জুমের চালের মুন্ডি, কলাপাতা পিঠা, ব্যাম্বো পিঠা, পাটিসাপটাসহ নানা ধরনের পিঠা, নিয়মিত পরোটা, সবজি তো থাকছেই। দুপুর ও রাতে খাবারে চায়নিজ আইটেমের পাশাপাশি বাঙালি খাবারে নানান পদের শাক-সবজি, হরেক রকম ভর্তা, মাছ-মাংস ও বিভিন্ন পদের বিরিয়ানির সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় নানা খাবার। বান্দরবান জেলা প্রশাসনের ‘মেঘলা ক্যাফে’।  ছবি: বাংলানিউজআর সবকিছুই তরতাজা এবং টাটকা। মনে হবে লাউ ডগা মাত্র গাছ থেকে তুলে আনা হয়েছে এখন লকলক করছে! আবার আগে ভাগে অর্ডার দিয়ে রাখতে পারলে আপনার চাহিদার সবটাই সরবরাহ করতে সক্ষম ‘মেঘলা ক্যাফে’।

একটি বিষয় বলে রাখা ভালো তা হচ্ছে- কোনো কিছুই আগে থেকে রান্না করা হয় না। আপনি অর্ডার দিয়ে রাখবেন, সেই আইটেম শুধু আপনার জন্যই প্রস্তুত করা হবে। অর্থাৎ এখানে উদরপূর্তি করতে চাইলে আপনাকে আগে থেকে ফোনে অর্ডার দিয়ে রাখতে হবে।

না হলে অর্ডার দিয়ে বেশ খানিকটা সময় বসতে হতে পারে। যদিও বসতে আপনার খারাপ লাগবে না। দখিণা হাওয়া আপনার প্রাণ জুড়িয়ে দিয়ে যাবে।

এ তো গেলো খাবার ও পরিবেশনের ঢং নিয়ে কথা। এবার আসা যাক পরিবেশের কথায়- পাহাড়ের ঢালে গেঁথে তোলা হয়েছে ঘর। উপরে ওম পাতার ছাউনি। বাঁশ, শন, হোগলা পাটি, কাঠ, আদিবাসী টুকরি প্রভৃতি ব্যবহার করেই সাজানো হয়েছে ইন্টেরিয়র।  বান্দরবান জেলা প্রশাসনের ‘মেঘলা ক্যাফে’। আপনি বসেছেন ঠিক ঝুলন্ত বারান্দায়, পায়ের নিয়ে হাজার ফুট গহীন জঙ্গল। চারদিকে পাহাড়শ্রেণি আপনাকে হাতছানি দিচ্ছে। নানান জাতের পাখির কিচির-মিচির সে এক অতুলনীয় মুগ্ধতা।

এসি কিংবা ফ্যান যেখানে বাহুল্য, টেবিলের উপর রাখা টিস্যু ওয়েট দিয়ে চেপে রাখতে হয়। এমনকি পাহাড়ি মাতাল হাওয়া টেবিলের কভার সমেত প্লেট-গ্লাসও ছিটকে ফেলে দিতে পারে একটু সাবধান না হলে! 

দিনের মুগ্ধতাকে ছাপিয়ে ওঠে রাতের মোহনীয়তা। পাহাড়ের খাদের অন্ধকার ঝোঁপে তখন ঝিঁ ঝিঁ পোকার গান। আধো আলোয় চেয়ার পাতা উপরে তারারা তাকিয়ে জ্বলজ্বল চোখে। প্রকৃতির গন্ধমাখা এমন আকুল করা পরিবেশে রাতের ভোজ আপনাকে টনিকের মতো উজ্জ্বীবিত করে তুলবে। বান্দরবান জেলা প্রশাসনের ‘মেঘলা ক্যাফে’। মেঘলা ক্যাফের গোড়ার কথা:

বান্দরবান শহরে ঢোকার চার কিলোমিটার আগে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র মেঘলা। সব থাকলেও ওই এলাকায় ছিল না কোনো ভালো মানের রেস্তোরাঁ। খাবার খেতে যেতে হতো সেই বান্দরবানে শহরে।

পর্যটকদের সে কষ্ট লাঘবে ২০১৬ সালে উদ্যোগ নেয় বান্দরবান জেলা প্রশাসন। যার অগ্রভাগে ছিলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক ও এনডিসি হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ।

এনডিসি মুজাহিদ বর্তমানে মনিরামপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মরত। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, পর্যটকদের আমরা সবসময় সেবা দিতে চাই। এটা তারই অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে খাবার না পেয়ে তাদের অনেক কষ্ট হতো।

‘নতুন ক্যাফেতে খাবারের দামও তুলনামূলক কম থাকবে। পাহাড়ের একেবারে অরক্ষিত একটি জায়গা সংস্কার করে এটি করা হয়েছে। এটাকে ইকো রেস্টুরেন্ট হিসেবে গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ’

এখনো পুরোপুরি রূপ পায়নি মেঘলা ক্যাফে। সামনে থাকবে নানা ধরনের পাতাবাহার ও ফুলের গাছ , পাহাড়ের খাদে ঝুলে নির্মিত হবে কয়েকটি গোলঘর, সামনে বসবে ওম পাতার বড় ছাতা।

একপাশে থাকবে একটি মঞ্চ, খাবারের পাশাপাশি গান বাজনা কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য। রেস্তোরাঁর নিচে লাগানো হয়েছে কামিনী ও হাসনাহেনা। খাওয়ার সময় যেন একটি মিষ্টি গন্ধও নাকে আসে।
ছোট বেলায় আপনি হয়তো অনেক গান শুনেছেন, তার অধিকাংশই আপনার মনে দাগ কাটতে পারেনি। কিন্তু আনন্দ ভ্রমণে শোনা সেই গানটি আজও হয়তো আপনার মনে দাগ কেটে আছে।

বিশেষ গানটি শুনলেই সেই স্মৃতিতে ফিরে যান আপনি। অর্থাৎ এখানে পরিবেশটার একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তেমনি মেঘলা ক্যাফের ভোজন পর্ব আপনার স্মৃতিতে থাকবে অম্লান।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৮
এসআই/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।