ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৯)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০২০
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৯)

বাবর আলী। পেশায় একজন ডাক্তার। নেশা ভ্রমণ। তবে শুধু ভ্রমণ করেন না, ভ্রমণ মানে তার কাছে সচেতনতা বৃদ্ধিও। ভালোবাসেন ট্রেকিং, মানুষের সেবা করতে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এই ডাক্তার হেঁটে ভ্রমণ করেছেন দেশের ৬৪ জেলা। সেটা আবার ৬৪ দিনে। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? সেটা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখেছেন বাংলানিউজের ট্রাভেলার্স নোটবুকে। ৬৪ দিনে থাকবে ৬৪ দিনের ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা।

দিন ৫৯
মানিকছড়ি ( খাগড়াছড়ি) - ফটিকছড়ি - রাউজান ( চট্টগ্রাম) = ৪৯.২৭ কি. মি.

মোটা কম্বলের সুবাদে বেশ ভালো একটা ঘুম হলো। ফরহাদ ভাই কিছুটা এগিয়ে দেবার পরিকল্পনা নিয়েই সঙ্গী হলেন।

কিলোমিটার খানেক হাঁটতেই একটা ঢিবির উপর মানিকছড়ি সেনা ক্যাম্প। রাজ মহামুনি বৌদ্ধ বিহারটা এর পরপরই। ফরহাদ ভাই কর্মরত বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে। তার বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শুনতে শুনতেই পা চালাচ্ছি। দেশের বিভিন্ন বাহিনীগুলোর ট্রেনিং নিয়ে আমার বেশ আগ্রহ। সেসবই জিজ্ঞেস করছি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। উনার আবার স্কুবা ডাইভিংয়েরও অভিজ্ঞতা আছে। গল্প করার ক্ষেত্র আরও বড় হয়ে গেলো সেটা জেনে। গল্পে গল্পে মহামুনি বাস স্ট্যান্ড। চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি বাসগুলোর বেশিরভাগই এখানে যাত্রা বিরতি দেয়।

স্মৃতিধাম আন্তর্জাতিক ভাবনা কেন্দ্রের অবস্থান গোদারপাড়ে। তিনটহরী পার হয়ে বরইতলী। হালকা চড়াই-উৎরাইয়ের রাস্তা। গাড়ীটানা বাজারে অনেকদিন পরে চট্টগ্রামের একটা বিখ্যাত খাবার খেলাম। উকগো ফরোটা দিই উকগো চা বুরাই বুরাই হাইলাম (একটা পরোটা এক কাপ চায়ে চুবিয়ে চুবিয়ে খেলাম)।

ফরহাদ ভাই বিদায় নিলেন এখান থেকেই। আজকের পথটা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক ধরে। দু’পাশে সামাজিক বনায়নের আকাশমণি গাছ। গরমছড়ির পরেই মানিকছড়ি উপজেলার সীমানা ছাড়িয়ে চট্টগ্রামের সীমানায়। চট্টগ্রামে ঢোকার মুখেই হাতের ডানে সুন্দর একটা চা বাগান। একে একে পার হলাম নয়াবাজার, ডলু।

রাউজানের খাল।

কাঞ্চননগর রাবার বাগানের অবস্থান উত্তর পাইন্দংয়ে। প্রচুর বাঁক এ রাস্তায়। রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ চলছে এই মহাসড়কেও। প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে কাটা হয়েছে গাছ। রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে খোয়া আর বালি। রাস্তা বড় করার জন্য ফাঁকা করা জায়গায় ছেলেকে মোটরসাইকেল চালানো শেখাচ্ছে বাবা। ক্লাচ নিয়ে ঝামেলা করায় বেশ ঝাড়িই খেলো সদ্য কৈশোর পেরোনো ছেলে।

চামার দিঘি পেরিয়ে পেলাগাজীর দিঘি। দিঘি দুটো ছাড়িয়েই নদী। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাইনবোর্ড জানান দিচ্ছে নদীর নাম ধুরুং। অনেকগুলা বাঁশের চালি ভাসানো আছে এ নদীতে। খানিক বাদেই বিবিরহাট। একটু অপেক্ষা করতেই চলে এল মিজান। পেশায় পুরকৌশলী মিজানকে আমরা অবশ্য ডাকি চ্যাম্পিয়ন মিজান বলেই। বেশ কিছু সাইকেল রেস/ দৌড়ে চ্যাম্পিয়ন ছেলেটা এখন চালায় মোটরসাইকেল।

খাগড়াছড়ির রাস্তা

বিবিরহাট থেকে বামের রাস্তায় একটা বেড়ার রেস্টুরেন্টের কথা বললো মিজান। ওখানেই দুপুরের খাবার সারার ইচ্ছা। গিয়ে ওটা বন্ধ পেতেই চলে আসতে হল জামান হোটেলে। খাবারের মাঝেই বাইরে ধুন্ধুমার কান্ড। দুপক্ষের মারামারি তখন তুঙ্গে। একজনের ঘাড়ে তাজা রক্ত চুইয়ে পড়ছে। এর মাঝেই সে ভাঙা কাঠ নিয়ে ছুটছে প্রতিপক্ষকে মারার জন্য। খেয়ে মিজানকে বিদায় দিয়ে বিবিরহাট থেকে বামের রাস্তায়। এই রাস্তাটা আমার বেশ চেনা। এ পথ ধরেই একসময় এদিকের এক হাসপাতালে ডিউটি করতে যেতাম। রাঙ্গামাটিয়া হয়ে লেলাং। এক লোক কী মনে করে আমাকে হিন্দিতে শুধালো, কিধার যাতা হ্যায়? আমি খাঁটি চাটগাইয়া ভাষায় উত্তর দিলাম- ‘বদ্দা, লউজান যাইদ্দি’ ( বড়ভাই, রাউজান যাচ্ছি)।

সুন্দর সব মসজিদ পড়ছে রাস্তার পাশে। এসব দেখতে দেখতেই নয়াহাট বাজার হয়ে শাহ নগর দিঘির পাড়। ভেতরের সড়ক হলেও রাস্তা বেশ ভালো এদিকে। রাস্তায় বাহন বলতে সিএনজি আর মোটরসাইকেল।

নদীর নাম ধুরুং।

একে একে পার হলাম ইসলামীয়া বাজার, রায়পুর। চাড়ালিয়া হাট থেকে কিছুটা সামনে হাতের ডানদিকে বিল পেরিয়ে উঁকি দিচ্ছে মাইজভান্ডারের বিশাল সব ভবন। আমতলীতে মিজান আবার চলে এলো বাইক নিয়ে। বাইক কোথাও রেখে বাকিটা পথ হাঁটার প্ল্যান। আশেপাশে কোথাও বাইক রাখার জায়গা না পেয়ে আমার পাশেপাশেই কিছুক্ষণ ধীর গতিতে চালালো। বিনাজুরীর পর নানুপুরে বন্ধুর দোকানের সামনে বাইক রেখে পথে নামলো মিজান।

বখতপুর, আজাদী বাজার এইসব জায়গাগুলোর নাম আমার বড্ড চেনা। আমার অনেক বন্ধুর বাড়িই এখানে। তবে এই মুহূর্তে এখানে এরা কেউই নেই। সবাই থাকে চট্টগ্রাম শহরেই। মিজানের সঙ্গে গল্পের বিষয়ের অভাব নেই। সাইক্লিং, প্রেম, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কিছুই বাদ যাচ্ছে না। দক্ষিণ ধর্মপুর পার হয়ে উত্তর সর্তা থেকে শুরু রাউজান উপজেলা।

আমির হাটের কাছে পেলাম সুন্দর একটা খাল। রাউজান স্কুলের সামনেই অপেক্ষা করছিল বন্ধু বোরহান। ওর নানাবাড়িতেই আজ রাতে থাকার ব্যবস্থা। সঙ্গ দেবার জন্য ও চট্টগ্রাম থেকে চলে এসেছে। ওর নানাবাড়িতে আগেও আসা হয়েছে। সেবার যদিও উদ্দেশ্য ছিল ওর নানার মেজবানী।

চলবে...

আরও পড়ুন
**পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৮)
**পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৬)
**পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৩)
**পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩০)​
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৬)​
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২০
এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।