১৯৮৬ সালে এলাকাবাসীদের রেশম চাষে উৎসাহিত করতে রাজ্য সরকারের রেশম শিল্প দফতর থেকে একটি অফিস চালু করা হয়। প্রথমদিকে তেমন একটা উৎসাহ পাওয়া যায়নি।
তবে এখন গ্রামের মানুষের মধ্যে তুঁত গাছের বাগান ও রেশম চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে রেশম দফতরের এই অফিসের অধীনে মোট ২শ’ ৫০টি পরিবার রয়েছে। তারা নিয়মিত রেশম পলু পালন করে তা থেকে গুটি উৎপাদন করছে।
দফতর থেকে তাদের রেশম পালন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, রেশম পালনের সামগ্রীসহ আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয় বলে বাংলানিউজকে জানান অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী তপন দেবনাথ। এখন সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রেশম চাষ করা হয়। তাই আগের বাঁশের ডালার পরিবর্তে প্লাস্টিকের ট্রেসসহ সরঞ্জাম দেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, যেসব চাষি বছরে ৩৫ কেজির বেশি রেশম গুটি উৎপাদন করতে পারেন তাদের শুয়োপোকা পালনের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়। এবছর মরসুমে এই কেন্দ্রের চাষিরা ৪শ’ কেজির রেশম গুটি উৎপাদন করতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
মূলত 'এ', বি' এবং 'সি'-এই তিনটি গ্রেডে রেশমগুটি ভাগ করা হয়। প্রতি কেজি 'এ' গ্রেডের রেশমগুটি ২৮০ রুপি, 'বি' গ্রেড ১৬০ রুপি ও 'সি' গ্রেড ৯০ রুপি মূল্যে দফতর চাষিদের কাছ থেকে কেনে। তাছাড়া দফতর থেকে নতুন চাষিদের তুঁত গাছের চারাও বিতরণ করা হয়। রেশম চাষ মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে বলে জানিয়েছেন রেশম দফতরের কর্মকর্তারা।
মূলত তুঁতপাতার পরিমাণ ও গুণগত মানের উপর নির্ভর করে রেশমগুটির গুণগত মান ও উৎপাদনের পরিমাণ। পাতার মান ভালো ও পর্যাপ্ত হলে বছরে ৬ থেক ৭ বার রেশমগুটি উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানান অনিতা দেবনাথ। গত প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি রেশম পালনের সঙ্গে যুক্ত। আগে সার, শুয়োপোকাসহ অন্য সরঞ্জাম সরকার থেকে সরবরাহ করা হলেও এখন সরকারি সহায়তার পরিমাণ দিন দিন কমছে। তারা এখন নলছড় রেশম শিল্প কেন্দ্র থেকে শুয়োপোকার ডিম কেনেন।
নন্দা অধিকারী নামে এক তুঁত চাষি বলেন, সব খরচ বাদ দিয়ে ৩ থেকে ৫ হাজার রুপি তার বছরে আয় হয়। এই চাষের সঙ্গে বাড়ির নারীরাই বেশি যুক্ত। পরিবারের অন্য কাজের ফাঁকে সারাদিনে ঘণ্টা তিনেক সময় দিলেই চলে।
তিনি আরও জানান, এই রুপিতে সংসার চলে না, সংসার চালানোর জন্য সরকারি অন্য প্রকল্পে বা বাইরে অন্য কাজ করতে হয়। তবে রেশম পালন নারীকে আর্থিক স্বাধীনতা দিয়েছে। তাদের উপার্জিত আয়ের জন্য যেমন পরিবারের পুরুষ সদস্যদের কাছে অর্থের জন্য হাত পাততে হচ্ছে না তেমনি পরিবারকে আর্থিকভাবে তারা সহায়তাও করতে পারছেন।
রেশম চাষি ফুলকুমারী দেব জানান, এই চাষে আবহাওয়া বড় ভূমিকা রাখে। আবহাওয়ার সামান্য তারতম্য উৎপাদন ব্যাহত করে। এই বিষয়গুলি জানতে দফতর থেকে এলাকার মোট ২০ জনকে ব্যাঙ্গালুরুতে নিয়ে গিয়ে এক মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ করানো হয়। তবে এখন নারীদের পাশাপাশি পুরুষও রেশম চাষে যুক্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৬
এসসিএন/আরআর