ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

ফেলে দেওয়া সামগ্রী দিয়ে কিশোরের দুর্গা প্রতিমা তৈরি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১৮
ফেলে দেওয়া সামগ্রী দিয়ে কিশোরের দুর্গা প্রতিমা তৈরি দুর্গা প্রতিমা বানাচ্ছে প্রদ্যুৎ-ছবি-বাংলানিউজ

আগরতলা: বাংলায় একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে ‘ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়’। এই প্রবাদকে আবারও সত্য করে দেখালো ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার মঠ চৌমুহনী এলাকার বাসিন্দা পঞ্চানন সিনহার কিশোর ছেলে প্রদ্যুৎ সিনহা। মাত্র ১১ বছর বয়সের কচি দু’টি হাতে সুনিপুণভাবে গড়ে তুলেছে প্রায় এক ফুট সাইজের একটি দুর্গা প্রতিমার কাঠামো ও এর চেয়ে ছোট আরও একটি দুর্গা প্রতিমা। 

আগে পঞ্চানন সিংহ'র আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলেও ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণে এখন অবস্থা অনেকটাই খারাপ। একথা একমাত্র ছেলেরও মাথায় আছে।

তাই মূর্তি তৈরির জন্য বাজার থেকে সামগ্রী কিনে দেওয়ার বায়না না ধরেই বুদ্ধি খাটিয়ে ফেলে দেওয়া সামগ্রী দিয়ে তৈরি করেছে আকর্ষণীয় মূর্তিটি।  

মূর্তি তৈরির উপাদান হিসেবে সে খড়ের পরিবর্তে ব্যবহার করেছে বাড়ির উঠানে বেড়ে ওঠা ঘাস, মাটি। দেবী প্রতিমার চুল ও সিংহের কেশর হিসেবে ব্যবহার করেছে বাড়ির তাঁতের কাজে ব্যবহৃত উলের ফেলে দেওয়া টুকরো।  

দেবী দুর্গার ও তার ছেলে মেয়েদের কাপড়, অলঙ্কার এবং অস্ত্রশস্ত্রেও সে নিজস্বতার ছাপ রেখেছে। প্রতিমার জন্য বাজার থেকে কাপড় না কিনে সাদা কাগজে রং করে তৈরি করেছে বেশভূষা। অলঙ্কার তৈরি করেছে সাদা কাগজে নকশা কেটে। দেব-দেবীদের অস্ত্র তৈরি করেছে খাবার চিপসের প্যাকেট দিয়ে।  

এতো সব শৈল্পীক ভাবনা মাথায় এলো কি করে প্রশ্ন করলে ফিক করে এক গাল হেসে তার উত্তর, এমনিতেই নিজের মন থেকে এসেছে। সোমবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে বাড়ির উঠোনে বসে ছোট দুর্গা প্রতিমায় ফিনিশিং টাচ দিতে দিতে কথাগুলি বলে সে।

এতো সুন্দর মূর্তি তৈরি কে শিখিয়েছে জানতে চাইলে বলে, কেউ শেখায়নি, নিজে নিজে তৈরি করেছি। আরও ছোটবেলা থেকে একাজ আমার খুব ভালো লাগে। ছবি আঁকতে এবং ব্যাটমিন্টন খেলতে ভালো লাগে।

এখন পর্যন্ত কতগুলি মূর্র্তি তৈরি করেছো আকাশ পানে খানিক তাকিয়ে বলে, মনে হয় ছয়টি।  

দুর্গা, কালী এবং লক্ষ্মীর মূর্তি তৈরি করতে ভালো লাগে বলেও জানায় সে। প্রায় ১৬ দিনে ছোট হাতের কারিগরিতে তৈরি হয়েছে এই মূর্তিটি।

সে জানায়, স্কুলের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজন এই মূর্তিগুলি দেখেছেন। সবাই বলেছেন খুব সুন্দর হয়েছে।  

বড় হয়ে কি হতে চায় জানতে চাইলে  উত্তরে বলেন, ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। দুর্গাপূজার পর কালী এবং লক্ষ্মীর মূর্তি তৈরি করবে সে। এই মূর্তি দেখে অনেকেই কিনে নিতে চেয়েছিলো। সে তা বিক্রি করেনি।

তার মা-বাবা জানান, আরও ছোট থেকেই এসব শিল্প কর্মের প্রতি তার আগ্রহ। কাগজ পেলেই ছবি আঁকে, কাঁচি দিয়ে কেটে নানা সামগ্রী তৈরি করতে লেগে যায়। আর কোথাও মূর্তি গড়ার কাজ দেখলে সারাক্ষণ দেখতে থাকে।  

তার তৈরি হাতের কাজ দেখে যে কেউ বলতে বাধ্য যে, উপযুক্ত তালিম ও সহযোগিতা পেলে একদিন সে বড় শিল্পী হয়ে উঠবে।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, ৮ অক্টোবর, ২০১৮
এসসিএন/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।